চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে পারছেন না আহতরা

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতরা এখনো কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেউ কেউ। দুর্ঘটনায় আহত  হিসেবে রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতি পূরন দেয়া হয়েছে। কিন্তু গুরুতর আহতদের দিনেই চিকিৎসা খরচ লাগছে কয়েক হাজার টাকা। দুর্ঘটনায় নিহত শিশু ছোঁয়া মনির বাবা, মা ভাই ও নানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একই পরিবারের এই চার সদস্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা। সাহায্য তুলে চলছে চিকিৎসা। ছোঁয়ার বাবা সোহেল মিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে সরকারি কোন হাসপাতালে ভর্তি করা যায়নি। পরে ধানমন্ডির বেসরকারি একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। বিষয়টি জানার পর অবশ্য গতকাল তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ নেয় রেল মন্ত্রণালয়। সোহেলের স্ত্রী নাজমা বেগম ও শাশুড়ি রেণু আক্তার জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন কেন্দ্রে চিসিৎসা নিচ্ছেন। একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে সোহেলের ছেলে নাফিজ। একই পরিবারের এই চার সদস্যের চিকিৎসার সহায়তা করছেন তাদের এলাকার বিভিন্ন জন। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের দুর্গাপুরের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন সৈকত। কেরানিগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। দুদিনের ছুটি নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন সিলেটে। সেখান থেকে ফিরছিলেন গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আকস্মিক উদয়ন ও নিশীথা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে আহত হয়ে তিনি আর বাড়ি ফিরতে পারেনি। ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় সৈকত মুখে মারাত্বক আঘাত পেয়েছেন। তার মুখের কয়েকটি দাঁত ও হাঁড় ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ডেন্টাল বিভাগের বেডে কাতরাচ্ছেন। সুস্থতার জন্য তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু তার পরিবার চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। সৈকতের ভাই আবরাম সাকিব বলেন, সরকারীভাবে দুইবারে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমরা আর কোনো টাকা পাই নাই। দুর্ঘটনায় পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের পঞ্চাশ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে আরও অনেক টাকা লাগবে। সরকারি হাসপাতাল, এখানে চিকিৎসার চেয়ে অবহেলাই বেশি। আমার ভাইয়ের যা অবস্থা তার জন্য আরও ভাল চিকিৎসা প্রয়োজন ছিল। তার মুখের কয়েকটি দাঁত ও হাঁড় ভেঙ্গেছে। ভাঙ্গা দাঁত ছাড়া অন্য সব দাঁত নড়াচড়া করছে। এই দাঁতগুলো ঠিকবে কিনা সেটা বলা মুশকিল। টাকা থাকলে তাকে অন্য কোথাও নিয়ে চিকিৎসা করানো যেত। কিন্তু আমাদের পরিবারের আমি ও আমার ভাই ছোট চাকরি করে পরিবারের খরচ চালাতাম। বাবা একসময় কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতেন। এখন বয়স হয়েছে। আর কাজে যেতে পারেন না। তাই তার চিকিৎসার খরচ চালাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের রেড ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন মুন্না। ঘটনার রাতে মুন্না বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকের উদ্দেশ্যে উদয়ন ট্রেনে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। ওই দুর্ঘটনায় মুন্নার এক বন্ধু মারা গেছেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মুন্নার ডান পা প্রায় দুই টুকরো হয়ে গেছে। মুন্নার মা মাজেদা বেগম সীমা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আমার ছেলের একটি পা ভেঙ্গে গেছে। প্রথমে তাকে কসবায় চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে আনা হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসার পর তাকে আবার ভর্তি করা হয়েছে বার্ন ইউনিটে। আগের চেয়ে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভাল। তিনি বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত আমাদেরকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। এর বাইরে আরও একটি বেসরকারি সংস্থা ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। এ নিয়ে মোট ৬০ হাজার টাকা পেয়েছি। তবে তার চিকিৎসার জন্য আরও বেশি টাকার প্রয়োজন। বার্ন ইউনিটে এখনও সিটের ব্যবস্থা হয় নাই। মেঝেতে পাটি বিছিয়ে তার চিকিৎসা চলছে। ঢাকা মেডিকেলের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানা এলাকার বাসিন্দা মো. নিজাম উদ্দিন (২৪)। ঘটনার রাতে তিনি চট্টগ্রাম থেকে তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই দুর্ঘটনায় তার বাম হাতের কব্জি ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া মাথায় আঘাত পেয়ে রক্ত জমাট বেধেছে। তাই এখন সবসময় তার মাথায় ব্যাথা থাকে। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি অনেকটা নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন। বড় করে কথা বলতে পারে না। নিজামের মা রশিদা বেগম মানবজমিনকে বলেন, ছেলের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় আছি। মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েও ফিরে এসেছে। বেঁচে আছে এটাই বড় কথা। সে দ্রুত সুস্থ হোক এটাই চাই। সরকার থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। এই টাকা খরচ হয়ে গেছে। আরও টাকার দরকার। এখানে চিকিৎসা চলছে। তবে আরও ভাল চিকিৎসার প্রয়োজন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও