মতিঝিলের সেই ক্লাবগুলো এখন যেমন

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকে বন্ধ রয়েছে মতিঝিলের ক্লাবগুলো। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের গেটটি খোলা থাকলেও নেই কর্মতৎপরতা। তালা ঝুলছে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব এবং আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ফকিরাপুল ইয়াংমেনস ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর সামনে আসে ক্লাব পাড়ার ক্যাসিনো কাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতি যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, মোহামেডানের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াসহ ক্যাসিনো হোতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ক্লাবের অন্য সদস্যরাও গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। থমকে গেছে ক্লাবের নিয়মিত কার্যক্রম। সরজমিনে মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, ক্লাবগেুলোতে এখন পিন-পতন নীরবতা। ইয়ংমেনস ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব ও ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো উচ্ছেদ অভিযানের পর সিলগালা করে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘসহ প্রায় সবগুলো ক্লাবেই তালা ঝুলতে দেখা যায়। কবে নাগাদ ক্লাবগুলো খোলা হবে তা জানেন না কর্মকর্তারা। ক্লাব সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বন্ধ করে দেয়ায় এখন তাদের নিয়মিত কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব: অভিযানে পর বন্ধ রয়েছে ক্লাবটি। অভিযানের সময় এটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছিল। কবে নাগাদ খোলা হবে কেউ জানেন না। এই ক্লাবে শুরু থেকেই তাস ও হাউজি খেলার অনুমতি ছিল বলে জানান সংগঠনটির যুগ্ম সচিব মুন্সি এবাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা যারা ক্রীড়া প্রেমী তাদের ক্যাসিনোর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারাই এ কাজ করেছে তারা আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের শক্র। আমরা চাই দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু কিছু বিপদগামী লোকের এসব অবৈধ কার্যকলাপ এ অঙ্গনকে কলঙ্কিত করেছে। আমাদের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছারও এর সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ক্লাব বন্ধ থাকায় আমাদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। এখন যেহেতু ক্যাসিনো কারবারিদের ধরা হয়েছে, সেহেতু দ্রুত ক্লাবগুলো খুলে দিলে আমরা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমগুলো সহজে চালাতে পারবো। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাবেক কোচ শাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, অতীতে দেশের সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়দের এনে খেলার টিম গঠন করার প্রতিযোগিতায় থাকতো ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে। অথচ বিগত কয়েক বছর ধরে দেশীয় বড় ধরণের কোন আসরে দল দিতে পারেনি ক্লাবটি। ক্রিকেটে দ্বিতীয় বিভাগ এবং ফুটবলে প্রথম বিভাগে খেলেছে ওয়ান্ডারার্স। কাবাডি, হকি কিংবা বক্সিংয়ে কোন রকম টিকে আছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবটি। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ঐহিত্যবাহী এ ক্লাবের যে স্থানে ক্যাসিনো চলতো তা বন্ধ আছে। তবে ক্লাবের অন্যন্য কার্যক্রম চলছে। তবে ক্লাব সংশ্লিষ্টরা এখন ক্লাবে কম আসছেন। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২০ বছর ধরে ফুটবল ও ক্রিকেটে শিরোপা না থাকায় মোহামেডানের অর্থের যোগান কমে গেছে। অদক্ষ পরিচালনার কারণে এটি ক্রমে ক্যাসিনো ক্লাবে পরিণত হয়। ক্লাব সংশ্লিষ্টদের অনেকের ইচ্ছা না থাকলেও নানা প্রভাবে ক্লাব চত্ত্বরে ক্যাসিনো বসানোর অনুমতি দিতে বাধ্য হন তারা। এখন ক্যাসিনো হোতারা ধরা পড়ায় ক্লাবের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে মনে করেন ক্লাবটির পরিচালক সারোয়ার হোসেন। দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব: স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দিলকুশা ক্লাব। পুরানো ঢাকার তৎকালীন হাক্কা নামের এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বন্ধুদের নিয়ে ১৯৬৪ সালে এই ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ষাটের দশকে ফুটবল দল গঠন করে মাঠে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব। ঢাকার ফুটবল লীগে দ্রুত সুনাম অর্জন করে ক্লাবটি। তখন ব্যক্তিগত সহায়তায় ক্লাব চালাতেন সংগঠকরা। ক্লাব সদস্যদের অবসর সময় কাটানোর জন্য তাস খেলার প্রচলন ছিলো। পাশাপাশি ক্লাবের ব্যয় নির্বাহ করতে স্বল্প পরিসরে বসতো তাসের জুয়ার বোর্ড। ব্যক্তিগত অনুদানের পাশাপাশি অর্থ আসতো জুয়ার বোর্ড থেকে। কিন্তু তাতে ছিলো না কারো আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা।  সময়ের বিবর্তনে মাঠের খেলা ছেড়ে জুয়ার প্রভাব বাড়তে থাকে ক্লাবে। ক্রীড়া জগতে এক সময়ের দাপুটে এই ক্লাব হারাতে থাকে খেলার পুরানো ঐতিহ্য। স্থানীয় কাউন্সিলর (বরখাস্ত) মমিনুল হক সাঈদ ক্লাবে ক্যাসিনো বসিয়ে ক্লাবটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ক্লাবের সাবেক সদস্য এস এম আলম জীবন বলেন, অস্ত্রের মুখে কেউ কিছু বলতে পারতো না। ক্লাবে কার্যকরী কোনো কমিটিও নেই। এখন দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। অভিযানের পর থেকে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন অনেকে। ক্লাবটির নিরাপত্তা রক্ষী কাউকে দেখা যায়নি ক্লাব ফটকে। ইয়ংম্যান্স ক্লাব: অন্যান্য ক্লাবের মত ইয়ংম্যান্স ক্লাবে ৯০ দশকের পরে রাজনীতিকরা যুক্ত হন। তবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন ২০১৬ সাল থেকে। তৎকালীন ক্লাব সভাপতি নাসিরুদ্দিন ইসলাম মল্লিক পিন্টুসহ পুরো প্যানেলকে অস্ত্রের মুখে বের করে ক্লাবটি দখল করেন যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। আর ক্লাবে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটান তৎকালীন সেক্রেটারি স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাজী সাব্বির হোসেন। এরপর ২০১৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ইয়ংম্যান্স ক্লাবে চালু হয় ক্যাসিনো। সেদিন ব্যানার টাঙ্গিয়ে ফিতা কেটে এই ক্যাসিনোর উদ্বোধন করেন সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, হাজি সাব্বির হোসেন। তবে ক্যাসিনো চালুর প্রস্তুতি শুরু হয় তারও ছয় মাস আগে থেকে। খেলোয়াড়দের আবাসিক আয়োজন বাতিল করে হোটেলে স্থানান্তর করা হয়। খেলোয়াড়দের থাকার জায়গার একাংশতে ক্যাসিনোর বিশ্রামাগার ও কিছু অংশ গুদাম হিসেবে ব্যাবহার করা শুরু হয়। নিজদের বিত্ত গড়তে ক্যাসিনো শুরু করেছিলেন প্রভাবশালীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, ক্যাসিনোর কোন টাকাই ক্লাবের উন্নয়নে খরচ হতো না। হলে খেলার উন্নয়ন হতো। বরং ক্যাসিনো আসার পর বহু মানুষ খেলতে এসে নিঃস্ব হয়েছে। সেই টাকা গেছে কিছু কর্তার পকেটে। র‌্যাবের অভিযানের পর, ক্লাব এখন বন্ধ থাকলেও দোকান থেকে হাজী সাব্বির মাসের ভাড়া ঠিকই উঠিয়ে নিচ্ছেন। তার সহযোগীরাও দখল করে রেখেছেন ক্লাবের বেশ কিছু দোকান। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ: আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের প্রধান ফটক খোলা থাকলেও ভেতরে আলো দেখা যায়নি। খুঁজে পাওয়া যায়নি ক্লাবের কোন কর্মকর্তাকে। একজন গার্ড ও পিয়নের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, র‌্যাবের অভিযানের পর ক্লাবটির কোনো কর্মকর্তা এখানে আসেন না। স্থানীয় বাসিন্দা বদিউল আলম বলেন, র‌্যাবের ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর ক্লাব পাড়ার সেই রমরমা ব্যবসা আর নেই। নেই সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কোটিপতিদের আড্ডা। এখন আর আসে না নতুন মডেলের দামি গাড়ি। ক্লাবটি ঘিরে মানুষের সমাগম নেই বললেই চলে। বন্ধ হয়ে গেছে ক্লাব ঘিরে গড়ে উঠা অস্থায়ী দোকান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও