‘মাশরাফির সঙ্গে খেলতে পারাটা সবচেয়ে ভালো স্মৃতি’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের অন্যতম সফল ক্রিকেটার মাসাকাদজা। তার অধ্যায়ের বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এখানে ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল তার। তাছাড়া ১৯ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন মাসাকাদজা। এ দেশের মাটিতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলার পাশাপাশি মাসাকাদজা খেলেছেন ঢাকা লীগেও। এভাবে বাংলাদেশ হয়ে যায় মাসাকাদজার ‘দ্বিতীয় বাড়ি’। আর বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা পরিণত হন মাসাকাজদার কাছের বন্ধুতে। ২০১৬ সালে কলাবাগান একাডেমি দলে মাশরাফির সতীর্থ ছিলেন মাসাকাদজা। বাংলাদেশি অধিনায়ককে তাই কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তার। আর শনিবার আফিগানিস্তানের বিপক্ষে বিদায়ী ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাসাকাদজা বলেন, ‘আমার সুখস্মৃতি ঢাকা লীগে খেলা। সে ক্লাব সংশ্লিষ্ট মানুষগুলোর সঙ্গে পরিচয় হওয়া। বাংলাদেশে মাশরাফির সঙ্গে খেলতে পারা আমার সব থেকে ভালো স্মৃতি। আমি মনে করি, ওর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো আমার জীবনের অন্যতম সেরা। এটাকে আমার জন্য আশীর্বাদও বলা যাবে।’বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা তারকা মাশরাফি। ক্যারিয়ারজুড়েই চোটের সঙ্গে লড়াই এ পেসারের। এসব কথা ক্রিকেট বিশ্বের মানুষকে জানাতে মাশরাফিকে আত্মজীবনী লেখার পরামর্শ দিলেন মাসাকাদজা। তিনি বলেন, ‘তার (মাশরাফি) কঠিন সময়ের কথা এখনও মানুষ জানেন না। সে কিভাবে ক্যারিয়ার সামলেছে, সেটা অনেকেরই অজানা। আমি ওকে সবসময়ই বলি, তোমার নিজেকে নিয়ে বই লেখা উচিত। এটা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ী হবে। মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেটে যতটুকু দিয়েছে, তার সবটাই সবার কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন।’বাংলাদেশে মাসাকাদজা প্রথম টেস্ট খেলতে আসেন ২০০৫ সালে। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে বড় ব্যবধানে জিম্বাবুয়ে। এরপর ঢাকা টেস্টে ড্রয়ের মধ্য দিয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে হাবিবুল বাশারের দল। টেস্টে যেটি বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়। বাংলাদেশের মাটিতে ওই সিরিজটাই মাসাকাদজার তিক্ত স্মৃতি। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এখানে আমরা যখন টেস্ট সিরিজ হারলাম। তখন বাংলাদেশ এখনকার মতো শক্তিশালী দলে পরিণত হয়নি। ওই হার ছিল আমার ক্যারিয়ারের খুব তিক্ত একটা অভিজ্ঞতা।’ শনিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিদায়ী ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামার সময় মাসাকাদজাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয় ক্রিকেটাররা। ৭১ রানের ইনিংস খেলে দলকে জেতান তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটি জিম্বাবুইয়ানদের প্রথম জয়। আগের আট দেখায় প্রত্যেকটিতেই হেরেছিল তারা। অনেকটা পরিতৃপ্ত হয়েই তাই বিদায় নিতে পেরেছে মাসাকাদজা। আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবিও বিদায়ী এই ক্রিকেটারকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছে। মাসাকাদজার হাতে একটি স্মারক তুলে দেয় বিসিবি। ছিল ফ্রেমে বাঁধানো ক্যারিয়ারের কিছুর মুহূর্ত, সেখানে লেখা ‘থ্যাংকস মুধারা হ্যামি।’ জিম্বাবুয়ের আঞ্চলিক ভাষায় মুধারা মানে ‘পরিণত’। ২০০১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ১৭ বছর বয়সে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন মাসাকাদজা। তাতে টেস্টের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ড গড়েন তিনি। ‘মাধুরা’ ডাক নাম তিনি পেয়েছিলেন ওই সেঞ্চুরির পরই। জিম্বাবুয়ের হয়ে গায়ে ৩৮ টেস্ট, ২০৯ ওয়ানডে এবং ৬৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মাসাকাদজা। সমান ৫টি করে সেঞ্চুরির রয়েছে টেস্ট ও ওয়ানডেতে। টেস্টে ৩০ গড়ে ২২২৩ (দেশের হয়ে চতুর্থ সর্বাধিক), ওয়ানডেতে ২৭ গড়ে ৫৬৫৮ (দেশের পক্ষে চতুর্থ সর্বাধিক) আর টি-টোয়েন্টিতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৬৬২ রান সংগ্রাহক মাসাকাদজা।