![](https://media.priyo.com/img/500x/http://mzamin.com/news_image/191143_o.jpg)
ঘাটাইলে দু’শতাধিক অবৈধ করাত কল
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলাটি এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চলজুড়ে পাহাড়ি বনভূমি থাকায় সরকারি খাসজমিতে গজারি, শাল, সেগুন ও বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ও ফলদ বৃক্ষে আচ্ছাদিত সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি। বনের ভেতরে অবৈধভাবে যেমন গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি তেমনি গড়ে উঠেছে দু’শতাধিক অবৈধ করাত কল (স মিল)। বন বিভাগের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাঠ ব্যবসায়ীদের একটি চক্রের সহযোগিতায় নিয়মিত মাসোয়ারার বিনিময়ে পরিচালিত হচ্ছে এসব করাত কল। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অবৈধ করাত কল মালিক, কাঠ ব্যবসায়ী ও কাঠ চোররা।স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জের আওতায় বটতলী, ঝড়কা, চৌরাসা, দেওপাড়া, ধলাপাড়া ও সাগরদীঘি নামের ছয়টি বিট রয়েছে। এই রেঞ্জের আওতাধীন বনবিভাগের পরিমাণ ৮৮.৪৫ বর্গকিলোমিটার। আর ৪৯টি মৌজায় বনবিভাগের সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ২৯১০৬.৭৬ একর। ঘাটাইলের বিশাল বনভূমিতে রয়েছে শাল, গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামাজিক বনায়নের গাছ। বন আইনে সংরক্ষিত বন এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল স্থাপনের বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু তা অমান্য করে সংরক্ষিত শাল-গজারির বন ঘেঁষে এসব অবৈধ করাত কল স্থাপন করা হয়েছে। আর এতে অবাধে চিরানো হচ্ছে শাল, গজারিসহ সামাজিক বনের কাঠ। শুধু স্থানীয় প্রশাসন ও বন কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই চলছে এসব করাত কল। বছরের পর বছর ধরে এগুলো চললেও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অভিযান না থাকায় বন এলাকা ধীরে ধীরে বিরানভূমিতে পরিণত হচ্ছে। বটতলা বিট এলাকার বাসিন্দা মো. সেকান্দার হোসেন বলেন, গাছ হচ্ছে সন্তানের মতো। একটা গাছ অনেক পরিচর্যা করে বড় করতে হয়। গাছ আমাদের অক্সিজেন দিয়ে প্রাণ বাঁচায়। গাছের ছায়ায় বসলে প্রাণ জুড়ে যায়। যখন এসব গাছ কেটে সাবাড় করে নিয়ে যায় তখন সত্যি দিলে বড় কষ্ট লাগে। সত্তরোর্ধ্ব হাকিম আলী বলেন আগে ধলাপাড়া যেতে আমরা দিনের বেলায়ও ভীষণ ভয় পেতাম। গহিন বনাঞ্চল ছিল এটি। বাঘ, সিংহ, হনুমান, বানরসহ অনেক বিষাক্ত সাপ ও বন্য প্রাণীর বসবাস ছিল এসব গড়ে। এখন পাকা রাস্তা হয়েছে, সেনানিবাস হয়েছে আর সেই সঙ্গে চোরের দলের বাড়িঘরগুলোও আজ ইটের দালান হয়েছে। এখন আর আগের মতো গাছপালা নেই। দিনেই গাছপালা কেটে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। কে শুনে কার কথা। ঘাটাইল উপজেলার সংরক্ষিত বন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বনবিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জের ছয়টি বিটের আওতায় ১০০টির বেশি অবৈধ করাত কল রয়েছে। তবে ঘাটাইল পৌরসভার করাত কল মালিক সমিতির দাবি, অবৈধ করাত কলের সংখ্যা দেড় শতাধিক। সংরক্ষিত বন এলাকার ধলাপাড়া, সাগরদীঘি, দেওপাড়া, গারোবাজার, মাকড়াই, ছনখোলা, বটতলা, নলমা, কুশারিয়া, পেচারআটা, মাইধারচালা, কাজলা, দেওজানা, চাপড়ী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকপুর, বোয়ালীহাটবাড়ী, শহরগোপিনপুর, জোড়দীঘি, মুরাইদ, লক্ষ্মীন্দর, সিংহেরচালা, শিবেরপাড়া, মালেঙ্গা, মোমিনপুর, বগা ও ফকিরচালা, দেউলাবাড়ি, পাকুটিয়া, শালিয়াজানি, পোড়াবাড়ি এলাকায় এসব অবৈধ করাত কল স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পৌর করাত কল মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আ. হালিম বলেন, ঘাটাইল উপজেলায় দুই শতাধিক করাত কল লাইসেন্সবিহীন। এ ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করলেও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এলাকাবাসী জানায়, বনের ভেতরে স্থাপিত বেশির ভাগ করাত কলের মালিক কাঠ ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে কাঠ চোরদের দহরম-মহরম সম্পর্ক। করাত কল মালিক ও কাঠ চোররা মিলেমিশে সংরক্ষিত বনের গাছ সাবাড় করলেও এ ব্যাপারে বনবিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই। বনের ভেতর করাত কল বন্ধ করার বিষয়ে উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, ‘গত আগস্ট মাসের মাসিক সভায় স্থানীয় এমপির উপস্থিতিতে অবৈধ করাত কল উচ্ছেদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত সংরক্ষিত বন এলাকায় স্থাপিত করাত কল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করবে।’ এ ব্যাপারে ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম হাবিবুল্লাহ বলেন, ঘাটাইলের ধলাপাড়া রেঞ্জের আওতায় ১০১টি করাত কল রয়েছে। এর একটি তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে অবৈধ করাতকলগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানান, শিগগিরই বনবিভাগের ভেতরে স্থাপিত অবৈধ করাত কল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- করাত কল
- টাঙ্গাইল
- মুন্সীগঞ্জ