সিনেট থেকে শোভনের পদত্যাগ, কী করবেন গোলাম রাব্বানী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি পদ থেকে পদচ্যুত হওয়া রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। নৈতিক স্খলনের দায়ে ছাত্রলীগের পদ হারানোর পর এবার স্বেচ্ছায় সিনেট থেকেও সরে যেতে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর আবেদন করেছেন তিনি। গতকাল ভিসির হাতে শোভনের পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন তুলে দেন ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব ও ডাকসুর সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, শোভনের পক্ষে কয়েকজন এসে অব্যাহতিপত্র দিয়ে গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সভায় বিধি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অব্যাহতিপত্রে শোভন বলেন, বর্তমানে আমার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় আমি উক্ত পদ থেকে পদত্যাগ করতে আগ্রহী। এদিকে স্বেচ্ছায় শোভনের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তের পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর পদে থাকা নিয়ে। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায়ে শোভনের সঙ্গে রাব্বানী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন। ইতিমধ্যে ডাকসু থেকে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। এদিকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলেও তাদের বলয় ভাঙবে কিনা এমন প্রশ্ন আসছে সামনে। যে ‘ভাইলীগ’ ছাত্রলীগকে শেষ করছে তা থেকে বের হয়ে শেখ হাসিনার স্বপ্নের ছাত্রলীগ গঠনে কতটুকু সাফল্য পাবেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাধারণ সম্পাদক- এমনটাই আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। দীর্ঘদিন যাবৎ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ভাই রাজনীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংগঠনটির শীর্ষ পদে যারা আসেন তাদের অঞ্চলের রাজনীতি চাঙা হয়। আশাহত হয়ে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান অন্য অঞ্চলের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন- ‘মূলত কাছের ভাই ব্রাদার শীর্ষ পদে আসতে না পারলে রাজনীতি করে লাভ নেই। কারণ ছাত্রলীগে এখন পরিশ্রমের কোনো মূল্যায়ন নেই। স্বজনপ্রীতিই বেশি কাজ দেয়।’ গতকাল ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘সারা দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের যেকোনো অভিযোগ কিংবা দাবি থাকলে আমাদের জানাতে পারেন। আমাদের কাছে আসতে কোনো লবিং কিংবা মধ্যস্থতা লাগবে না।’ দায়িত্ব পেয়ে একই কথা বলেছিলেন গোলাম রাব্বানীও। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনিও পূর্বসূরিদের মতো ভাই রাজনীতির পথেই হেঁটেছেন। সাধারণত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদগুলোকে সংগঠনটির শীর্ষ পদ বলে ধরা হয়। এ চারটি পদে যারা আসেন তাদের ঘিরেই এ সংগঠনের রাজনীতি হয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও এ চার নেতারা অনুসারীরা অ্যাক্টিভ থাকেন। মধুর ক্যান্টিন কিংবা বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথকভাবে এ চার নেতার নির্দেশনা মেনে চলেন। গত জুলাই-এ কমিটি গঠনের পর দেখা গেছে কোনো কোনো কর্মসূচিতে এ চারজনের একজন অনুপস্থিত থাকলে তার অনুসারীরাও সংগঠনের ওই কর্মসূচিতে যান না। তাই ভাই রাজনীতি ভাঙা না গেলে ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, আদর্শিক রাজনীতির চর্চা না করে ভাই রাজনীতি চলতে থাকলে সংগঠন দুর্বল হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু ভারপ্রাপ্তদের: ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। গতকাল দুপুরে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান জয় বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে চলব, তার হাতকে শক্তিশালী করব। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে থেকে ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করব। সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে আপ্রাণ চেষ্টা করব। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, সারা দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের যেকোনো অভিযোগ কিংবা দাবি থাকলে আমাদের জানাতে পারেন। আমাদের কাছে আসতে কোনো লবিং কিংবা মধ্যস্থতা লাগবে না। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নতুন নেতৃত্ব্ব কাজ করবে বলেও জানান তিনি।ক্ষমা চাইলেন রাব্বানী: এদিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদচ্যুত হয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন গোলাম রাব্বানী। গতকাল নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া স্ট্যাটাসে রাব্বানী লেখেন, মায়াময়ী নেত্রী, আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি, আমি অনুতপ্ত, ক্ষমাপ্রার্থী। প্রিয় অগ্রজ ও অনুজ, আপনাদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির পুরো মেলবন্ধন ঘটাতে পারিনি বলে আপনাদের কাছেও ক্ষমাপ্রার্থী। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমিও ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। তবে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে আবেগ-ভালোবাসার এই প্রাণের সংগঠনের নীতি-আদর্শ পরিপন্থী ‘গর্হিত কোন অপরাধ’ করিনি। আনীত অভিযোগের কতটা ষড়যন্ত্রমূলক আর অতিরঞ্জিত, সময় ঠিক বলে দেবে। প্রাণপ্রিয় আপা, আপনি আদর্শিক পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের সুযোগ্য তনয়া, ১৮ কোটি মানুষের আশার বাতিঘর। আপনার দিগন্ত বিস্তৃত স্নেহের আঁচল, এক কোণে যেন ঠাঁই পাই। আপনার ক্ষমা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বাকিটা জীবন চলতে চাই।ডাকসু ভেঙে দিয়ে পুনঃনির্বাচনের দাবি প্রগতিশীলদের: দুর্নীতির দায়ে নিজ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের পদ খোয়ানো গোলাম রাব্বানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন তুলেন জোটের নেতারা। এ সময় ছাত্রজোট অবিলম্বে ডাকসু অবৈধ ঘোষণা করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল। এ সময় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের সভাপতি ইমরান হাবিব রুম্মন ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে নোবেল বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে নিজ সংগঠন থেকে অব্যাহতি পাওয়া কোনো ব্যক্তি ডাকসুর কোনো পদে আর থাকতে পারেন না। তাই বর্তমান বাস্তবুায় দাঁড়িয়ে ডাকসুর অতীত-ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার জন্য অবিলম্বে এই ডাকসু অবৈধ ঘোষণা করে পুনঃনির্বাচনের দাবি আমরা জানাচ্ছি। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সংবাদ সম্মেলন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানানো হয়।