
ডিম এমন একটি খাদ্য যা সারা বছর ধরেই গ্রহণ করা প্রয়োজন। ছবি: রিপন।
শীতকালে যেসব সুপারফুড নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৩
(প্রিয়.কম) আবহাওয়া বদলের পালায় শীতকাল চলে এসেছে বেশকিছুদিন হলো। শহর অঞ্চলে শীতের প্রকোপ খুব একটা বোঝা না গেলে গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রাদুর্ভাব ভালোমতোই দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যে। শীতের প্রকোপ খুব একটা বোঝা না গেলেও আবহাওয়া বদলের সাথে সাথে দেখা দিতে থাকে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা। যে কারণে সঠিক খাদ্য উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ ও নীরোগ রাখার প্রয়োজন পড়ে। শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যাই নয়, শীতের সময়ে দেখা দিতে থাকে বিভিন্ন ধরণের চুল ও ত্বকের সমস্যাও। কারণ, শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে চুল ও ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারাতে থাকে। সব কিছু বিবেচনা করে এই শীতকালে এমন কিছু খাদ্য উপাদান গ্রহণ করা প্রয়োজন যা একইসাথে শরীরে পুষ্টি জোগাবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এবং চুল ও ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করতে কাজ করবে। জেনে নিন শীতকালীন সময়ের জন্য দারুণ কিছু সুপারফুডের কথা।
কমলালেবু
শীতকালীন সময়ে কমলালেবু হলো সবচাইতে দারুণ সাইট্রাস ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিন একটি বড় সাইজের কমলালেবু খাওয়ার ফলে শরীরে ভিটামিন-সি এর ঘাটতি পূরণ হয়ে থাকে। কমলালেবুতে থাকা পটাসিয়াম ত্বককে রোদের ইউভি (UV) রশ্মি থেকে রিরক্ষিত রাখে। ফলে থাকা অ্যামিনো এসিড সমূহ ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এছাড়াও, ঠাণ্ডা-কাশি-সর্দির সমস্যাতেও কমলালেবু দারুন উপকারী উপাদান।
গাজর
মূল জাতীয় সবজী গাজরে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় বেটা-ক্যারোটিন, যা শরীরে ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন-এ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার স্থায়িত্ব কমাতে সাহায্য করে ফুসফুসকে সুস্থ রেখে। একইসাথে শীতের সময়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বজার রাখতেও গাজর বিশেষ উপকারী। গাজরে থাকা ভিটামিন-এ ও অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমূহ কোষের ক্ষত সারাতেও কাজ করে থাকে।
বীটরুট
বীটরুট রক্তের জন্য বিশেষভাবে উপকারী এই খাদ্য উপাদান। এছাড়াও অন্ত্রের সমস্যা সমাধান করে ভালো ব্যাকটেরিয়াকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে থাকে। এমনকি বীটরুটের সবুজ পাতাতেও রয়েছে ভিটামিন-সি, বেটা-ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম।
ডিম
সম্পূর্ণ ডিম প্রতিদিন একটা করে খাওয়া শীতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডিমের কুসুমে রয়েছে পুরো ডিমের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও আয়রন। অন্যদিকে ডিমের সাদা অংশে রয়েছে পুরো ডিমের অর্ধেক পরিমাণ প্রোটিন। দারুণ ব্যাপার হলো, ডিমে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড। এছাড়া, সকালের নাস্তায় একটি ডিম খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যে ভালো থাকে এবং সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করার শারীরিক শক্তি পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ছোট্ট একটি খাদ্য উপাদান ডিম দিতে পারে সম্পূর্ণ শারীরিক শক্তি এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন-বি২, ব১২ এবং ই। এছাড়াও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি মিনারেলস- আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস। সকল কিছু এক করলে যা দাঁড়ায়- প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ার ফলে শরীর একইসাথে তার প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পায় এবং সুস্থ থাকে। যে কারণে শীতকালীন সময়ে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া প্রয়োজন।
কাঠবাদাম
শীতকালীন সময়ে বিকালের নাস্তা হিসেবে অন্য যেকোন খাদ্য উপাদান বাদে কিছু পরিমাণ কাঠবাদাম খাওয়াই হবে সবচেয়ে দারুণ। কারণ, প্রাকৃতিক কাঠবাদাম শীতকালে স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখার জন্য দারুণ একটি খাদ্য উপাদান। ছোট ছোট এই বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমূহ, উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আঁশ, ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, আয়রন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এই সকল স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান সমূহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে এবং স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখে।
আদা
আদাতে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়া, আদা শরীরে রক্ত চলাচলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে। ঠাণ্ডার সমস্যা অথবা ফ্লু এর সমস্যা দেখা দিলে আদা খুব ভালো প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে থাকে। এছাড়া প্রদাহ কমাতে এবং শীতকালীন সময়ে আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কমাতেও আদার রস দারুণ কার্যকরি। যে কারণে, শীতকালীন সময়ে প্রতিদিন অন্তত দুই কাপ পরিমাণ আদা-চা গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
হলুদ
শীতকালীন সময়ের জনু মশলা জাতীয় উপাদানের মাঝে হলুদ হলো সর্বোচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত একটি উপাদান। নিয়মিত হলুদ গ্রহণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া, শীতকালে যারা বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ব্যাথায় ভুগে থাকেন, তাদের জন্য হলুদ বিশেষ উপকারী। কারণ এতে রয়েছে প্রদাহ-বিরোধী ও রোগ-প্রতিরোধ মূলক উপাদান সমূহ। এছাড়া ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রেও কাঁচা হলুদ বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান হিসেবে পরিচিত।
ডালিম
পৃথিবীর অন্যতম পুরনো ফলের মাঝে অন্যতম হলো ডালিম। যাতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সহ পলিফেলন, ট্যানিনস, ফ্যাভনয়েড এবং অ্যান্থসায়ানিন। এই সকল উপাদান শীতকালীন সময়ে শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া এতে রয়েছে প্রদাহ-বিরোধী উপাদান। যা হাড়ের জোড়ার ব্যথা তৈরি জন্য দায়ী এনজাইম প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। বিশেষ করে আর্থ্রাইটিসের জন্য ডালিম বিশেষ উপকারী ফল।
সূত্র: Top10HomeRemedies
প্রিয় লাইফ/ কে এন দেয়া