
ছবি সংগৃহীত
ভুল বানানের ছড়াছড়ি
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:২২
রাজধানীর একটি দোকানের সাইনবোর্ড। ছবি: সংগৃহীত
(প্রিয়.কম) বানান। ভাষাচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এটি। তবে দুঃখিনী বর্ণমালার পালকে একটি বড় কষ্ট যুক্ত করেছে ভুল বানান। বলছি বাংলা ভাষার বানান বিভ্রাটের কথা। ছবিতে সাইনবোর্ডের বানান দেখুন। এ সাইনবোর্ডটি পড়তে কারও কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয় না। এটা কী ধরনের দোকান সেটাও বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু সাইনবোর্ডের শব্দগুলো বর্তমান বানানরীতি মেনে লেখা হয়নি।
বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা-এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি শব্দের বানান এখন হ্রস্ব-ই কার দিয়ে লেখা হয়। এটা যেমন অনেকে ঠিকমতো খেয়াল করছেন না, তেমনি বাংলা শব্দের বানানও শুদ্ধভাবে ব্যাকরণ মেনে লেখা হচ্ছে না বেশিরভাগ সময়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলা ভাষায় বানানের ক্ষেত্রে ইদানীংকালে ভুলের যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সে বিষয়টিকে অনেকে এক ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বলে বর্ণনা করছেন। ভাষাবিদরা বলছেন, একেক জায়গায় একেক ধরনের বানান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলা একাডেমির বানান অভিধান থাকলেও পরিস্থিতি উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলা বানান নিয়ে এতোটা এলোমেলো অবস্থা এর আগে কখনো ছিল কি না সেটি নিয়ে ভাষাবিদদের সংশয় আছে।
ঢাকার একটি স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী অকপটে স্বীকার করলেন যে বাংলা বানান নিয়ে তাদের দ্বিধা কাটছেই না।
স্কুল পর্যায়ে বানানের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেবার কথা বলছেন অনেকে। ছবি: সংগৃহীত
একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘ইংলিশ গ্রামারের চেয়ে বাংলা গ্রামার একটু বেশি কঠিন। একটু ভয় হয়। মাঝে-মধ্যে ভুল হয়, আবার মাঝেমধ্যে টিচারদের দেখিয়ে ঠিক করে নেই।’
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বানানে শৃঙ্খলা আনা এবং শুদ্ধরীতি বজায় রাখার জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমি বানান অভিধান প্রণয়ন করে। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি চোখে পড়ছে না বিশেষজ্ঞদের। বিভিন্ন সময় বাংলা একাডেমি অনেক শব্দের বানান পরিবর্তনও করেছে।
১৮২৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলা স্কুল খোলার ও বাংলা বানান শেখানোর রীতি নিয়ে এটা ছিল ব্রিটিশ নির্দেশিকা। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিত ঘোষ জানান, বানানের পরিবর্তন অনেক ভাষার ক্ষেত্রেই হয়। কিন্তু অনেকে সে পরিবর্তন সম্পর্কে জানে না।
অধ্যাপক বিশ্বজিত ঘোষ বলেন, ‘ভাষা পরিবর্তনশীল। ভাষা বিজ্ঞানীরা একথা বলেন যে প্রতি ১৫-২০ কিলোমিটার পর-পর ভাষায় পরিবর্তন দেখা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দের বানান এক সময় দীর্ঘ-ঈ কার দিয়ে লেখা হতো। কিন্তু এখন সেটি পরিবর্তন হয়ে হ্রস্ব-ই কার দিয়ে বানান করা হয়। বাংলা একাডেমির বানান রীতি সবাই অনুসরণ করছে না। সেজন্য এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’
শুদ্ধ বানান চর্চার জন্য অনেকে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, বানানের ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট যত্নবান হলেও শ্রেণিকক্ষের বাইরে নানা পারিপার্শ্বিকতা অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের বেশি প্রভাবিত করছে।
বাংলা একাডেমি বলছে, বাংলা ভাষার একটি নিজস্ব বানানরীতি আছে এবং সে অনুযায়ী বানান অভিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। এ অভিধান অনুসরণের জন্য সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হয়।
শিক্ষকরা বলছেন, বাংলা বানান নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হলে সেটি শুধরে নেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে এ অভিধানের সহায়তা নেওয়া।
প্রিয় সংবাদ/আশরাফ/শান্ত