সারকোপটেস স্ক্যাবি নামক আণুবীক্ষণিক জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে স্ক্যাবিস নামক ত্বকের রোগ। ছবি: সংগৃহীত।

স্ক্যাবিসের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসার বিষয়ে জানুন

সাবেরা খাতুন
লেখক
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০১৭, ১৩:০৯
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭, ১৩:০৯

(প্রিয়.কম) স্ক্যাবিস খুবই সংক্রামক একটি ত্বকের সমস্যা। একে বাংলায় পাঁচড়া বলা হয়। যেকোন বয়সের যেকোন মানুষের হতে পারে এই রোগ। যদিও এই সংক্রমণ খুবই অস্বস্তিকর, তবে  খুব  সহজেই এর থেকে নিরাময় লাভ করা যায়। স্ক্যাবিস এর কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসার বিষয়ে জেনে নিই চলুন।

স্ক্যাবিস হওয়ার কারণ

স্ক্যাবিস ত্বকের অন্য সমস্যার মত নয়। বেশিরভাগ ত্বকের সমস্যাই হয়ে থাকে অ্যালার্জি, ভাইরাস বা জিনগত কারণে। স্ক্যাবিস হয়ে থাকে মাইট এর কারণে। সারকোপটেস স্ক্যাবি নামক আণুবীক্ষণিক জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে এই রোগ। এই জীবাণু মানুষের ত্বকের ঠিক নীচের অগভীর স্তরে বাস করে এবং দিনে ২-৩ টা ডিম পাড়ে। ইউ কে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এর মতে মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, উত্তর ও মধ্য অস্ট্রেলিয়া, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, ইন্ডিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষের মধ্যে স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হতে দেখা যায় বেশি। নার্সিং হোম, কারাগার, চাইল্ড কেয়ার ইত্যাদি স্থানগুলোতে প্রায়ই স্ক্যাবিস এর প্রাদুর্ভাব হতে দেখা যায়।

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এটি অন্যদের মাঝে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা বা কাপড় ব্যবহার করলে বা যৌন সংসর্গের মাধ্যমেও এটি একজন থেকে আরেক জনে ছড়াতে পারে। ইলিনয়েস ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক হেলথ এর মতে, কারো সাথে করমর্দন করলেও এই রোগ ছড়াতে পারে। মেডিকেল অফিস অফ মেনহাটন এর প্রাইমারী কেয়ার ফিজিশিয়ান কারনিকা কাপুর বলেন, পিতামাতার থেকে এটি শিশুতে, বিশেষ করে মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে ছড়ায় এই রোগ। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এই মাইট ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

স্ক্যাবিসের লক্ষণ

স্ক্যাবিস এর সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হচ্ছে চুলকানি হওয়া এবং ত্বকের উপরে ফোসকা পড়া বা লাল  হয়ে ফুলে যাওয়া। সাধারণত আঙ্গুলের ফাঁকে এবং ত্বকের ভাজের মধ্যে হয়ে থাকে পাঁচড়া। কাপুর বলেন, ‘স্ক্যাবিস এর চুলাকনি খুব মারাত্মক হতে পারে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রাতের বেলায় বৃদ্ধি পায়’।  

নবজাতক ও ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ঘাড়, মাথার তালু, মুখ এবং হাতের তালুতে ও পায়ের পাতার নীচেও হয়ে থাকে স্ক্যাবিস। যদি কারো একবার স্ক্যাবিস হয় তাহলে পুনরায় এটি হলে লক্ষণ কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকাশ পায়। যাদের আগে কখনো হয়নি তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশিত হতে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে।

ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস বা নরওয়েজিয়ান স্ক্যাবিস অন্য স্ক্যাবিস এর তুলনায় অনেক মারাত্মক ধরণের হয়ে থাকে কারণ এটি কম্প্রোমাইজড ইমিউন সিস্টেমের মানুষদের আক্রান্ত করে থাকে যেমন- এইডস বা ট্রান্সপ্লান্ট এর রোগীদের। স্বাস্থ্যকর ইমিউন সিস্টেমের মানুষদের নির্দিষ্ট একটি পর্যায় পর্যন্ত স্ক্যাবিস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সামর্থ্য থাকে। কম্প্রোমাইজড ইমিউন সিস্টেমের মানুষরা এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারেনা। ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস এর ক্ষেত্রে ত্বকে প্রচুর মাইট ও ডিম জমা হয়।  

স্ক্যাবিস শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা

কাপুর বলেন, স্ক্যাবিস এর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করবেন। আক্রান্ত ত্বকের নমুনা মাইক্রোস্কোপের নীচে পরীক্ষা করে মাইট ও এর ডিম শনাক্ত করে রোগ নির্ণয় করা যায়।

স্ক্যাবিস নির্ণয় হওয়ার পর এর চিকিৎসা খুবই সহজ। কাপুর বলেন ২ টি উপায়ে এর চিকিৎসা করা যায়। একটি হচ্ছে – পারমেথ্রিন নামক ক্রিম ব্যবহার করা।  রোগীদের ঘাড় থেকে পায়ের পাতার নীচ পর্যন্ত ব্যবহার করতে বলা হয় এই ক্রিমটি। অন্য উপায়টি হল ইভারমেক্টিন নামক ঔষধ সেবন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।

চিকিৎসক পারমেথ্রিন এর পরিবর্তে ক্রোটামিটন বা লিন্ডেন লোশন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন অথবা অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধও দিয়ে থাকেন চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য। সফল চিকিৎসার পরেও ১ থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত চুলকানি থাকতে পারে।

যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকেন তাদেরও চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা পত্র ও পোশাক-আশাক গরম পানিতে ধুয়ে নেয়া উচিত যাতে জীবাণু পুরোপুরি ধ্বংস হয়।  আমেরিকান একাডেমী অফ ডারমাটোলজি এর মতে, মাইট মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

সম্পাদনা: রুমানা বৈশাখী