
ছবি সংগৃহীত
প্রিয় গন্তব্য: নওগাঁর প্রাচীন কুসুম্বা মসজিদ
প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০১৭, ০৩:০৩
আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭, ০৩:০৩
আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭, ০৩:০৩
কুসুম্বা মসজিদ সামনের অংশ। ছবি: কাজী রুহুল্লাহ শাহরিয়ার।
(প্রিয়.কম): পাঁচ টাকার নোটের এক দিকে একটি মসজিদের ছবি দেখা যায়। আমরা সবাই দেখেছি, কেউ খেয়াল করেছি, কেউ করিনি। এই মসজিদটির বাংলাদেশের একটি প্রাচীন স্থাপনা। মসজিদের প্রবেশদ্বারে বসানো ফলকে মসজিদের নির্মাণকাল লেখা রয়েছে হিজরি ৯৬৬ সাল (১৫৫৪-১৫৬০ খ্রিষ্টাব্দ)। আফগানী শাসনামলের শুর বংশে শেষদিকের শাসক গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহের আমলে সুলায়মান নামে জনৈক ব্যক্তি এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন নানা স্থাপনার অভাব নেই। অনেক কিছুই যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে, তবে মসজিদ এবং মাজার গুলো সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মনোযোগের কারণে টিকে গেছে সময়ের স্রোতে।

ভেতরে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা নিয়মিত আসেন। ছবি: উইকিপিডিয়া।
কোথায়: বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামের একটি প্রাচীন মসজিদ। নওগাঁ সদর থেকে এই মসজিদ-এর দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। আর মান্দা উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার।
কিভাবে: ঢাকা থেকে যেতে হলে আপনাকে মহাখালী বাসস্টান্ড থেকে নওগাঁর বাসে উঠতে হবে। নওগাঁ পৌঁছলে এর পরে বালুডাঙ্গা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে আপনাকে নওগাঁ-রাজশাহী রুটের বাসে উঠতে হবে। লোকাল বাস ছাড়াও ঐ রুটে গেট-লক সার্ভিস (পদ্মা বা বিআরটিসি) আছে। তবে "কুসুম্বা মোড়ে" গেট-লকগুলোর স্টপেজ নেই। সেক্ষেত্রে আপনার উচিৎ হবে আগেই হেল্পার / কন্ডাকটরকে বলে রাখা (এবং মান্দার ফেরিঘাট স্টপেজে বাস থেমে থাকার সময় আরেকবার তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া) যে আপনাকে যেন "কুসুম্বা মোড়ে" নামিয়ে দেয়া হয়। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কুসুম্বা মোড় থেকে ভ্যান বা ব্যাটারিচালিত অটো নিয়ে কুসুম্বা মসজিদ যেতে হবে। এখানে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫ টাকা। ফিরতি পথের গন্তব্য নওগাঁ বা রাজশাহী হলে অবশ্য কুসুম্বা মোড় পর্যন্ত গেলে হবে না, ফেরিঘাট স্টপেজে গিয়ে বাসে উঠতে হবে। অটোতে ভাড়া সামান্য বাড়িয়ে দিলে তারাই নিয়ে যাবে।

ভেতরে আছে নানা রকম কারুকাজ আর মাটির ফলকের কাজ। ছবি: উইকিপিডিয়া।
কি দেখবেন: মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৫৮ ফুট, প্রস্থে ৪২ ফুট। দুই সারিতে ৬টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের গায়ে রয়েছে লতাপাতার নকশা। প্রাচীর ঘেরা মসজিদটির প্রধান ফটকে প্রহরী চৌকি ছিল। মসজিদটিতে ইটের গাঁথুনি, সামান্য বাঁকানো কার্নিশ এবং সংলগ্ন আট-কোণা বুরুজ -- এগুলো থেকে মসজিদের স্থাপত্যে বাংলা স্থাপত্যরীতির প্রভাব পাওয়া যায়। মসজিদের মূল গাঁথুনি ইটের হলেও এর সম্পূর্ণ দেয়াল এবং ভেতরের খিলানগুলো পাথরের আস্তরণে ঢাকা। মসজিদের স্তম্ভ, ভিত্তি মঞ্চ, মেঝে ও দেয়ালের জালি নকশা পর্যন্ত পাথরের। মসজিদটি আয়তাকার এবং এতে রয়েছে তিনটি বে এবং দুটি আইল। এর পূর্বপ্রান্তে তিনটি এবং উত্তর-দক্ষিণে একটি করে প্রবেশপথ। মসজিদের কেন্দ্রীয় মিহরাবটি পশ্চিম দিকের দেয়ালের থেকে আলাদা। পশ্চিম দেয়ালের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং মাঝামাঝি প্রবেশপথ বরাবর দুটো মিহরাব রয়েছে যা মেঝের সমান্তরাল। উত্তর-পশ্চিম কোণের বে-তে মিহরাবটি একটি উঁচু বেদীর উপর বসানো। মোট মিহরাব আছে ৩টি, যার সবগুলো কালো পাথরের তৈরি। মসজিদটির সম্মুখে ২৫.৮৩ একর আয়তনের একটি বিশাল জলাশয় রয়েছে। মিহরাবে আঙ্গুর-গুচ্ছ ও লতাপাতার নকশা খোদিত রয়েছে।

মসজিদের পেছনের অংশ। ছবি: উইকিপিডিয়া।
এছাড়া মসজিদ সংলগ্ন ঘাট বাঁধানো দীঘিটিও দারুণ। ছায়াঘেরা ঘাট আপনার ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর ও মনে প্রশান্তি এনে দিতে সক্ষম। দীঘির পানিতে ছোট বড় প্রচুর তেলাপিয়া মাছের ছুটোছুটি পানির উপর থেকেই স্পষ্ট দেখা যায়। উল্লেখ্য, দীঘিটি সম্পর্কে বেশ কিছু কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। তবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রাচীন দিঘি নিয়েই এরকম গল্প শোনা যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এই মসজিদের আশে পাশে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, সেখানে আসেন হাজারে হাজারে ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া।
প্রিয় ট্রাভেল/ সম্পাদনা ড. জিনিয়া রহমান।
আপনাদের মতামত জানাতে ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।
প্রথম আলো
| চীন
২২ মিনিট আগে
২৩ মিনিট আগে
২৬ মিনিট আগে