শত বছরের পুরনো জলযান। ছবি: মো. শাহ রিয়াজ রিমন

শত বছরের পুরনো প্যাডেল স্টিমারের ৪টি বাংলাদেশের

মো. শাহ রিয়াজ
লেখক
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০১৮, ০৮:১১
আপডেট: ০৮ মে ২০১৮, ০৮:১১

(প্রিয়.কম) প্রায় শত বছর আগে ইল্যাংন্ডের রিভার অ্যান্ড স্টিম নেভিগেশন (আরএসএন) কোম্পানির বিশাল বিশাল স্টিমার চলাচল করত বাংলাদেশের নদীতে। বাহারি নাম ছিল সেসবের—ফ্লেমিঙ্গো, ফ্লোরিকান, বেলুচি ইত্যাদি।

বলা হয়ে থাকে, ব্রিটিশ সরকার নাকি বরিশালে রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু ব্যবসা হারানোর ভয়ে স্টিমারের মালিকরা ব্রিটেনে বসে কলকাঠি নেড়েছিলেন বলে বরিশালে রেলপথ যায়নি। আগে এসব স্টিমার কয়লার দ্বারা উৎপাদিত স্টিমে চলত বলে স্টিমার বলা হতো। এখন চলে ডিজেলে, তারপরও নাম রয়ে গেছে স্টিমার। আবার কোনো এক অজানা কারণে এর অন্য নাম ‘রকেট সার্ভিস’। হয়তো আগের দিনে এটি ছিল সবচেয়ে গতিসম্পন্ন, তাই এ নামকরণ।

সারা বিশ্বে হাতে গোনা যে ক’টি প্যাডেল স্টিমার আছে, তার মধ্যে চারটি আছে বাংলাদেশে। এগুলোর নাম হলো—পি.এস. মাসহুদ, অস্ট্রিচ, লেপচা ও টার্ন। এর মধ্যে আকারে বড় হলো ‘মাসহুদ’ ও ‘অস্ট্রিচ’৷

প্রায় শতবর্ষ পুরনো স্টিমার দুটি তৈরি হয়েছিল যথাক্রমে ১৯২৮ ও ১৯৩৮ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে। শুরুর দিকে এসব স্টিমারে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হতো। আশির দশকের শুরুতে এগুলো ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তর করা হয়। বড় বড় দুটি প্যাডেল দিয়ে সামনের দিকে এগোয় বলে এর অন্য নাম প্যাডেল স্টিমার।

ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে স্টিমার চাঁদপুর হয়ে পরদিন সকালে বরিশাল পৌঁছে। বরিশালে যাত্রাবিরতি করে আধ ঘণ্টার মতো। এরপর নলছিটি, ঝালকাঠি, কাউখালী, হুলারহাট (পিরোজপুর), চরখালী, বড় মাছুয়া, সন্ন্যাসী হয়ে মোরেলগঞ্জ। আগে খুলনা পর্যন্ত যেত কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে এখন আর যেতে পারে না।

বিদেশি ট্যুরিস্টদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এ সার্ভিসটি। প্রায় প্রতিটি ট্যুরিস্টের ভ্রমণ তালিকায় প্যাডেল স্টিমারের নাম থাকে। অনেক বিদেশি শুধু এটাতে চড়তেই বাংলাদেশে আসেন।

বেশ কিছু বছর ধরে প্যাডেল স্টিমারগুলো ক্রমাগত লোকসান দিয়ে আসছে। এ ছাড়া এগুলো মেরামতেও কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। তাই সরকার হয়তো একসময় বন্ধ করে দেবে এসব পুরনো স্টিমার।

বাংলাদেশের পরিবহন জগতে রকেট স্টিমারের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। প্রায় শত বছর ধরে এগুলো চলাচল করছে। ব্রিটিশ শাসনামলে এগুলো ঢাকা-বরিশাল, বরিশাল-গোয়ালন্দ যোগাযোগ রক্ষা করত। তখনকার মানুষ এ স্টিমারে করে গোয়ালন্দ গিয়ে ট্রেনে কলকাতা যেত।

ঢাকার সদরঘাট থেকে রকেট স্টিমারের ছাড়ার সময় প্রতি শনিবার, রবিবার, মঙ্গলবার এবং বুধবার সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট।

রকেট স্টিমারের ভাড়া

বরিশাল—ডেক ১৭০ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস এসি কেবিন ২৩০০ টাকা (২ বেড), সেকেন্ড ক্লাস নন এসি ১২৬০ টাকা (২ বেড)।

মোরেলগঞ্জ—ডেক ২৮০ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস এসি কেবিন ৩৭১৫ টাকা (২ বেড), সেকেন্ড ক্লাস নন এসি ২১০০ টাকা (২ বেড)।

তথ্য: Bangladesh Parjatan Corporation

প্রিয় সংবাদ/আজাদ চৌধুরী