
মানসিক চাপের মাঝে রাখার জন্যে তারা সকল দায় অন্যের উপরে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। মডেল: ঋত্বিক ও ফারহানা, ছবি: নূর।
ভালো মানুষের ছদ্মবেশে 'বিষাক্ত' মানুষ যখন আপনারই প্রিয়জন!
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:১১
(প্রিয়.কম) বেশীরভাগ ক্ষেত্রে একজন বিষাক্ত মানুষের ছদ্মবেশী আচরণ থেকে বোঝা সম্ভব হয় না অনেক কিছুই। কারণ তারা নিঃসন্দেহে খুব চতুর হয়ে থাকেন। তাদের এই ছদ্মবেশ ধারণ হয়ে থাকে বিভিন্ন ধরণের। যার ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটি ধরতে পারা কঠিন হয়ে পড়ে। খুব কাছের মানুষ এমন বিষাক্ত হতে পারে এই ব্যাপারটি অনেক সময় বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
অনেকক্ষেত্রে খুব ছোট কোন ব্যাপার থেকেই তাদেরকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। অথবা ছোট বেশ কিছু ঘটনা একসাথে মিলিয়ে দাঁড় করানো যায় আসল ব্যাপারটি। যেখানে ধরে ফেলা যায় ভালোবাসার প্রিয় মানুষটি আসলে ‘ভালো মানুষ’ এর মুখোশ পরিহিত একজন বিষাক্ত মানুষ! একটা সাধারণ জিনিস এক্ষেত্রে মিলে যাবে প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই। তারা সবসময় নিজেদের আয়ত্ত্বে রাখতে চাইবেন সবকিছু। যে কোন কথা চট করে ঘুরিয়ে ফেলতে পারবেন, চোখের পলকে পাল্টে ফেলবেন নিজের আচরণ!
নিজেকে একজন বিষাক্ত মানুষের সাথে জড়িয়ে ফেলার মতো বোকামী কেউ করতে চাইবেন না। ছোট্ট এই জীবনটা একেবারেই নির্ঝঞ্ঝাট ও সাধারণ হবে, এমনটাই কাম্য সকলের। বিষাক্ত একজন মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে যা একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কীভাবে বুঝতে পারবেন আপনার পছন্দের, প্রিয় কিংবা ভালোবাসার মানুষটি আসলে একজন বিষাক্ত মানুষ? কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো এখানে।
নিজের সকল দোষ আপনার উপর চাপিয়ে দিবেন
একজন বিষাক্ত মানুষ কখনো এবং কোন ক্ষেত্রেই নিজের দোষ-ভুল স্বীকার করবেন না। সত্যকে স্বীকার করতেও অস্বীকার করেন এমন মানুষ। নিজের দোষ স্বীকার করার পরিবর্তে আপনার উপরে সকল দায় চাপিয়ে দিতে চাইবেন সবসময়। যার একমাত্র কারণ হল আপনার মাঝে অপরাধবোধ কাজ করানো, আপনাকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো। যেখানে আপনার একেবারেই কোন দোষ নেই।
নিজে থেকে কোন দায়িত্ব নেওয়ার বদলে সে আপনাকে ভুল বোঝাবে। এমন ভাবে আপনার উপর দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, যেন সকল কিছু আপনার দায়িত্ব। যার ফলে আপনি মানসিকভাবে সবসময় অনুভব করবেন- সকল কিছুর জন্যে আপনি দায়ী। সকল দায়িত্ব আপনার এবং সকল ভুল আপনার জন্যেই হয়েছে!
তাকে ছাড়া কোন পরিকল্পনা কখনোই করা যাবে না
অনেকে এই ব্যাপারটি ভালোবাসা, যত্ন নেওয়া এবং খেয়াল রাখার মতো রোমান্টিক ব্যাপার হিসেবে ধরে নেবেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। খুব ছোট্ট একটি কৌশলের মাধ্যমে সে আপনাকে বোকা বানাচ্ছেন। আপনাকে ভালোবেসে সে এই কাজটি করছেন না, বরং আপনার উপরে অধিকার ও দখলদারিত্ব খাটাতে চান বলেই এমন আচরণ প্রকাশ করবেন।
তাকে ছাড়া যে কোন পরিকল্পনা করলেই তিনি রাগ করবেন এবং জানিয়ে দেবেন তিনি সেটা পছন্দ করেননি। কিন্তু আপনি একজন স্বতন্ত্র মানুষ। আলাদা ও ব্যক্তিগত পরিকল্পনা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ভালোবাসার মানুষ তার নিজের অধিকারের শক্তি প্রদর্শন করতে চাইবেন বলেই রোমান্টিকতার মুখোশে নিজের কর্তৃত্ব দেখাতে চাইবেন।
অতীতে বলা কোন কথা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করবেন
ভালো মানুষীর মুখোশ পরিহিত মানুষের এটা খুব প্রচলিত একটি স্বভাব। হয়তো নিজের মুখে অতীতে কোন একটি কথা বলেছিলেন এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিন্তু পরে সে একই কথা তোলা হলে সেটা সে একেবারেই অস্বীকার করবেন। উল্টো এমনভাবে কথাটিকে তৈরি করবেন যে পুরো ব্যাপারটি আপনার মনগড়া, এমন কোন কথা তিনি কখনোই বলেননি! যার ফলে আপনি নিজেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা শুরু করবেন।
এমন ধরণের বিষাক্ত মানুষেরা সবসময় আকর্ষণ তৈরি করতে চান। তারা মিথ্যা প্রতিজ্ঞা ও মিথ্যা গল্প বলে শুধুমাত্র নিজের অবস্থানটুকু তৈরি করার প্রতি মনযোগী হন। যখনই নিজের কাঙ্ক্ষিত জিনিস তাদের পাওয়া হয়ে যায়, তারা নিজেদের কথাকেই অস্বীকার করা শুরু করে দেন।
নিজেকে সবসময় অসহায় হিসেবে প্রকাশ
এই ধরণের মানুষেরা সবসময় নিজেকে সময় ও পরিস্থিতির ভুক্তভোগী হিসেবে প্রকাশ করেন। আপনার কাছ থেকে সবধরনের সুযোগ পাওয়ার জন্য এবং আপনার সহানুভূতি ও মনোযোগ পাওয়ার জন্য উক্ত ব্যক্তি এমন ভাব দেখাবেন সুযোগ পেলেই। এমনকি তিনি এমন কিছু গল্প ও ঘটনা আপনাকে বলবেন, যেন আপনি ভাবতে ও বিশ্বাস করতে বাধ্য হন তিনি আসলেও একজন ভুক্তভোগী। টাকা-পয়সার সমস্যা, ছোটবেলায় অত্যাচারের শিকার, চাকরী হারানো, কোন কিছু অথবা কাউকে হারানোর কষ্টের মতো কিছু গল্প তারা সবসময় তৈরি করে রাখবেন। এসকল ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য একটাই। তিনি প্রমাণ করতে চান পুরো দুনিয়ায় তিনি কতোটা অসহায়, পুরো দুনিয়া তার বিপক্ষে কাজ করে।
দ্রুত ক্ষমা করে দিলেও বারংবার একই বিষয় নিয়ে খোঁটা দেওয়া
হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনি কোন একটা ভুল করে ফেলছেন। যেটা করা একেবারেই উচিৎ হয়নি। আপনার ভালোবাসার মানুষের কাছে সবকিছু খুলে বলার পর আপনাকে অবাক করে দিয়ে তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দিলেন। এমন ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আপনি অনেক খুশি হয়ে গেলেন। তবে কিছুদিন পর থেকেই লক্ষ্য করতে শুরু করলেন, যেকোন কিছুতেই তিনি বারংবার আপনার ভুলের ব্যাপারটি তুলে খোঁটা দিচ্ছেন। এমনকি যেখানে সেই কথাটি তোলার কোন সূত্ত্র নেই, সেখানেও আপনাকে তার কাছ থেকে উক্ত ব্যাপারে খোঁটা হজম করতে হচ্ছে। ‘ভালো মানুষ’ এর মুখোশ পরিহিত মানুষেরা সবসময় এমন একটি সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। যেখানে তারা তাদের ইচ্ছেমত মানসিক অত্যাচার করতে পারবেন অকারণে।
আপনার অনুভূতি সম্পর্কে সবসময় সন্দেহ প্রকাশ করবেন
সকলেই তার ভালোবাসার মানুষের জন্য সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করেন। নিশ্চয় আপনিও আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এরপরেও দেখা যায়, তিনি বারবার তার প্রতি আপনার ভালোবাসা ও অনুভূতি নিয়ে প্রশ্ন করেন। আপনাকে অনবরত একই কথা ও প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করান- তাকে আপনি সত্যি ভালোবাসেন কিনা! এটা তার কাছে অনেকটা মজার একটি খেলার মতো। তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন তাকে আপনি কতটা ভালোবাসেন। তা সত্ত্বেও এমনটা করার মাধ্যমে আপনাকে দুশ্চিন্তার মাঝে রাখতে চাচ্ছেন তিনি। বারবার স্বীকারোক্তি আদায় করতে চাচ্ছেন আপনার কাছ থেকে।
আপনাকে সবসময় দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মাঝে রাখবেন
আপনার প্রতি তার অবাধ্য ভালোবাসা ও আবেগ দেখে যখনই আপনি তার প্রতি দূর্বল হয়ে যাবেন এবং তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেন, তখন থেকেই তার আসল চেহারা দেখা দেওয়া শুরু হবে। সে সবসময় আপনার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাইলেও আপনার সাথে ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন আলোচনা করতে চাইবেন না। আবার ধৈর্য হারিয়ে আপনি যখনই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে চাইবেন, তখন তিনি শুরু করবেন মিথ্যে নাকি কান্না ও অনুরোধ। নিজেকে খুবই নিস্পাপ এবং পরিস্থিতির শিকার মানুষ হিসেবে তুলে ধরবেন আপনার সামনে। যার ফলে তাকে একজন ‘ভালো মানুষ’ ভেবে আবারও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেন আপনি। ফলাফল, পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি!
একজন মানুষ ভালো কিংবা খারাপ কিনা সেটা নির্ধারণ করা যায় তার আচরণ থেকে। তবে যারা নিজেদেরকে একটি ভালো মানুষীর মুখোশের আড়ালে ঢেকে রাখেন তাদের শনাক্ত করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই এমন মানুষগুলোকে একেবারেই চেনা যায় না। যার ফলে ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন অনেকেই।
সূত্র: You Queen
প্রিয় লাইফ/ আর বি