
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। ছবি: প্রিয়.কম
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আর নেই
আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮, ১৩:২৭
(প্রিয়.কম) মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আর নেই। ৬ মার্চ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
প্রিয়ভাষিণীর ছেলে কারু তিতাস প্রিয়.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, দীর্ঘ দিন থেকেই ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এবং ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
ল্যাবএইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম লেনিন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আমাদের হাসপাতালে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি ছিলেন। হঠাৎ করে আজ সকাল বেলা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পরে চিকিৎসকরা তাকে চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি। প্রফেসর আমজাদ হোসেনের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন। উনার কিডনি, ডায়াবেটিক, হার্টসহ আগে থেকেই নানা ধরনের সমস্যা ছিল।’
২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে প্রিয়ভাষিণী পায়ের গোড়ালির হাড় সরে যায়। পরের দিন ৮ নভেম্বর রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনলে সেখানে তিনবার হৃদরোগে (কার্ডিয়াক অ্যাটাক) আক্রান্ত হন তিনি। এ সময় তার ব্লাড প্রেসারও কমে যায়। এ অবস্থায় প্রথমে অস্থায়ী এবং পরে ১২ নভেম্বর তার শরীরে স্থায়ী পেসমেকার সংযোজন করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা থাকায় তার পায়ে অস্ত্রোপচার খুবই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে চিকিৎসকদের বোর্ড অস্ত্রোপচারের পরবর্তী জটিলতা আশঙ্কা করায় প্রিয়ভাষিণীকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
আর্থিক কারণে তাকে বিদেশ নেওয়া সম্ভব না হয়নি। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১০ ডিসেম্বর তার পায়ের সফল অস্ত্রোপচার হয়। পরের দিন ১১ ডিসেম্বর আবারও হৃদরোগে (কার্ডিয়াক অ্যাটাক) আক্রান্ত হন এবং ৯ দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০ ডিসেম্বর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর ১১ জানুয়ারি প্রিয়ভাষিণীর চিকিৎসক ডা. এম. আমজাদ হোসেন জানান, তিনি দীর্ঘদিন থেকেই কিডনি জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড ও উচ্চ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। উনার ডায়াবেটিক বেশি উঠানামা (ফ্লাকচ্যুয়েট) করে, কখনো ১০ কখনো ১৮। এমনিতে প্রিয়ভাষিণীর ওজন একটু বেশি। এর পাশাপাশি হাইপো-থাইরয়েড রয়েছে। উনার যেহেতু বাইপাস করা, ডায়েবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপের রোগী এবং এগুলো প্রায়ই অনিয়ন্ত্রিত থাকায় কিডনি জটিলতায়ও তিনি ভুগছেন। এটাও বেশ উঠানামা (ফ্লাকচ্যুয়েট) করে, কখনো ১৬০ কখনো ১৭০। এখন ২৯০-এর মতো, যা খুবই উচ্চ।
এরপর কিছুটা সুস্থ হলে বাসায় ফিরেন। পরে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৪ ফেব্রুয়ারিতে তাকে ল্যাবএইডে নেওয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি ল্যাবএইডে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনায় নানার বাড়িতে। তার বাবার নাম সৈয়দ মাহবুবুল হক এবং মায়ের নাম রওশন হাসিনা। বাবা-মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে প্রিয়ভাষিণী সবার বড়। ১৯৬৩ সালে প্রথম বিয়ে করেন। পরে ১৯৭২ সালে প্রিয়ভাষিণী দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্বামী আহসান উল্লাহ আহমেদ ছিলেন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। তার ছয় সন্তান। তিন ছেলে ও তিন মেয়ে।
তিনি খুলনার পাইওনিয়ার গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনা গার্লস স্কুল থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। মাঝে কিছুদিন স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি ইউএনডিপি, ইউএনআইসিইএফ, এফএও, কানাডিয়ান দূতাবাস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২ এর ৭ (ঝ) এর ধারা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা) হিসেবে চলতি বছর স্বীকৃতি পান তিনি।
স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। এর আগে ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পান। ২০১৪ সালে একুশের বইমেলায় তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘নিন্দিত নন্দন’ প্রকাশিত হয়।