ছবি সংগৃহীত

প্রিয় ট্রাভেল গিয়ার: কম্পাস

খন্দকার ইশতিয়াক মাহমুদ
লেখক
প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:১১
আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:১১

পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করে কম্পাস। ছবি: সংগৃহীত।
 
(প্রিয়.কম): সেই গল্পটা শুনেছেন? সেই যে, এক লোক বনে হারিয়ে গিয়েছিল, সারাদিন পথ চলে বারবার একই জায়গায় ফিরে ফিরে আসে। এক সময় তার জমানো খাবার শেষ হয়ে গিয়ে সে মারাই যায়। বনে-জঙ্গলে দিক ঠিক রাখাটা অনেক বেশি কষ্টকর। আর বিভিন্ন সময় দিকভ্রান্ত হয়ে মানুষ সোজা চলার বদলে একই রাস্তায় বার বার ঘুরে ঘুরে চলতে থাকে। এটাকেই বলে সার্কেল অব ডেথ।
 
বাংলাদেশের বনে জঙ্গলে হারিয়ে গেলে মারা যাবার আশঙ্কা কম, কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিশেষ করে আপনার সাথে যদি পর্যাপ্ত খাবার না থাকে, তখন ব্যাপারটা অনেক বেশি সাংঘাতিক হয়ে যায়। আর আমাদের সবার সেই চর্চা থাকে না যেখানে আপনি বন থেকে খাবার সংগ্রহ করে খেতে পারবেন।
 
যে কোন জায়গায়, বিশেষ করে বুনো পরিবেশে, সেটা হোক বন-জঙ্গল, মরুভূমি কিংবা আর্কটিকের চরম শীতল পরিবেশ, আপনার যদি জানা থাকে আপনি কোনদিকে যাচ্ছেন, তাহলে আগে হোক, পরে হোক, আপনি অন্য মানুষের দেখা পেয়ে যাবেন, সঠিক সহায়তা পেয়ে যাবেন।
 
ম্যাপ দেখে নিজের অবস্থান খুঁজে পেতে, গন্তব্য ঠিক করতে ব্যবহার হয় কম্পাস। ছবি: সংগৃহীত।
 
কম্পাস একটা প্রাচীন জিনিস, এশিয়া মাইনরে এই জিনিসটা আবিস্কার হবার পরে মানুষ হাজার বছর ধরে এই জিনিসটার ব্যবহার করছে পথ খুঁজে পেতে, সেটা হোক সমুদ্র বা মরুভূমি অথবা গহীন জঙ্গল।
 
কম্পাস জিনিসটা আমরা কম বেশি সবাই দেখেছি। ছোট বড় বিভিন্ন কম্পাস আমরা অনেক খেলাচ্ছলেও ব্যবহার করেছি। তবে এর সঠিক ব্যবহার কিংবা গুরুত্বটুকু আমরা হয়ত সবসময় বুঝে উঠতে পারিনি। শহরে থেকে এর গুরুত্ব বোঝা আসলে সম্ভবও নয়।
 
আসুন, কম্পাসের প্রাথমিক বিষয়গুলো বুঝে নিই, তাহলে আপনি কম্পাস ব্যবহার করে সঠিক দিক নির্ণয় করার বিষয়ে অভিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
 
১. কম্পাস এর কাটা উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে তাক করা থাকে পৃথিবীর নিজস্ব ম্যাগনেটিক ফিল্ড এর সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে। আপনি যেখানেই যান না কেন এটা উত্তর-দক্ষিণ দিকেই তাক করে থাকবে।
 
পৃথিবী নিজেই একটা বিশাল চুম্বক, তারও আছে উত্তর দক্ষিন। ছবি: সংগৃহীত।
 
২. উত্তর এবং দক্ষিণ দিকের ধারণা পেয়ে গেলে সেখান থেকে আমরা পূর্ব এবং পশ্চিম ধারণা করে নিতে পারি সহজেই।
 
৩. কম্পাস সব জায়গায় সরাসরি উত্তর-দক্ষিণ দিকে পয়েন্ট করে না। আপনার অবস্থান অনুসারে এটা উত্তর মেরু থেকে একটু ডানে বা একটু বামে পয়েন্ট করতে পারে। এটাকে বলা হয় ম্যাগনেটিক নর্থ। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বক্রতার কারণে এরকম হয়। যারা নিয়মিত ন্যাভিগেশনের সুক্ষ্ন কাজ করেন, তারা এটা খেয়াল রাখেন এবং সেভাবে হিসাব ঠিক করে নেন। তবে সাধারণ ব্যবহারের সময় এটা এতটা গুরুত্ব রাখে না। তবে তারপরেও বিষয়টা জানা থাকা ভাল।
 
৪. কম্পাসের কাঁটার অবস্থান আশে পাশে থাকা চুম্বকের মাধ্যমে প্রভাবিত হতে পারে। রিডিং নেবার সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন আশে পাশে কোন চুম্বক না থাকে।
 
৫. কম্পাস ব্যবহারের সময় আপনি ধাতব কোন কিছুর আশে পাশে থাকলে সেটা আপনার কম্পাসের কাঁটার অবস্থানে সামান্য প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চেষ্টা করতে হবে ধাতব কোন কিছু থেকে দুরে গিয়ে রিডিং নেয়া।
 
ন্যাভিগেশন অত্যন্ত জটিল একটি বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞানে কম্পাসের ভূমিকা আছে অনেকখানি। তবে সাধারণভাবে বেশিরভাগ সময় স্রেফ কোনদিকে যাচ্ছি, এটার ধারনা থাকলেই দিক ঠিক রাখা সম্ভব হয়।
 
তবে যারা নতুন কোন বুনো এলাকায় গেলে ম্যাপ নিয়ে চলাফেরা করতে পছন্দ করেন, তারা কম্পাস থেকে আরও নিখুঁতভাবে দিক নির্দেশনা পেতে পারেন। এছাড়া বাংলাদেশে মূলত ভিন্ন এলাকায় নামাজ পড়ার সময় পশ্চিমদিক বোঝার জন্য কম্পাস ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। অনেক জায়নামাজে কম্পাস এঁটে দেয়া থাকে। যারা নিয়মিত বিভিন্ন দেশে ঘোরেন, তারা সাধারণত এই ধরনের জায়নামাজ পছন্দ করে থাকেন।
 
আমরা ভবিষ্যতে কম্পাসের সহায়তায় ম্যাপ রিডিং বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব।
 
সম্পাদনা: ড. জিনিয়া রহমান।
আপনাদের মতামত জানাতে ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।