
ছবি সংগৃহীত
নির্দেশনা ও অভিনয়ে কোনো ভবিষ্যৎ দেখি না: আব্দুল্লাহ রানা
আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:৫৫
আবদুল্লাহ রানা। ছবি: শাহরিয়ার তামিম, প্রিয়.কম
(প্রিয়.কম) তার পুরো নাম আবদুল্লাহ আল বাকি রানা। তবে মিডিয়া পাড়ায় আবদুল্লাহ রানা নামেই পরিচিত। গুণী এই শিল্পী নির্দেশনা দিয়ে মিডিয়া জগতে যাত্রা শুরু করেন। এরপর অভিনয়ও করেছেন বহু নাটক এবং টেলিফিল্মে। কিছুটা অভিমানজনিত কারণে বেশ সময় মিডিয়া জগত থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। এরপর অনেকের অনুরোধেই আবার ফিরে আসেন তার চিরচেনা পরিবেশে। কথা বলছিলাম নির্দেশক এবং অভিনেতা আবদুল্লাহ রানার সাথে।
প্রিয়.কম: কেমন আছেন?
আবদুল্লাহ রানা: খুব ভালো।
প্রিয়.কম: নবীন হয়েও প্রবীণ চরিত্রে কেমন লাগছে?
আবদুল্লাহ রানা: আসলে আমি প্রবীণ হিসেবে উত্তর দিতে পারবো না। দুই বছর হলো অভিনয় করছি। নবীন হয়েও প্রবীণের গেটাপ ধরেছি। আমার সমসাময়িক যারা সবাই নায়কের চরিত্রেই আছেন।
প্রিয়.কম: শুরুটা কীভাবে?
আবদুল্লাহ রানা: শুরুটা মঞ্চে, ঢাকা পদাতিকে আমি মঞ্চে অভিনয় করি ১৯৮৭ সালে। প্রথম নাটক ছিলো 'এই দেশে এই দেশে'। ঐ মঞ্চ দিয়েই শুরু। এরপর টেলিভিশন মিডিয়াতে কাজ করেছি ১৯৯৯ সাল থেকে। বাদল রহমানের অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম। আর টেলিভিশন মিডিয়াতে মূলত আমার নির্দেশনা দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু। আমি নাটক নির্দেশনা শুরু করি ২০০০ সালে 'অগ্নিবলাকা'র মাধ্যমে, যেটার কাহিনীচিত্রটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে নিয়ে ছিলো। অভিনয়ে ছিলেন রিয়াজ ও তারিন। অভিনয়টা আসলে আমি অনুরোধে শুরু করি। মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর 'আয়শা মঙ্গল' নাটকে অভিনয় করেছি। সেখানে আসলে গিয়েছিলাম স্টিল ফটোগ্রাফি করতে। কিন্তু তখন ফারুকীর অনুরোধে প্রথম অভিনয় করি আর কি! আর এমনি টুকটাক অভিনয় করতাম সেসব নির্দেশকরা আমার পরিচিত থাকায়। কিন্তু পেশাগত হিসেবে নয়। আমার পরিচালনায় আমি প্রথম অভিনয় করি ধারাবাহিক 'ছায়া মুখোশ' আর 'কুয়াশার অন্ধকারে' নাটকে। তখন থেকে মোটামুটি অভিনয়ে নিয়মিত হলাম। এরপর গোলাম সোহরাব দোদুলের নির্দেশনায় 'সাত কাহন' ধারাবাহিকে অভিনয় করি।
আবদুল্লাহ রানা। ছবি: শাহরিয়ার তামিম, প্রিয়.কম
প্রিয়.কম: তরুণ অভিনেতাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে যদি কিছু বলতেন?
আবদুল্লাহ রানা: তরুণ অভিনেতাদের মানে নবাগতদের প্রথম শক্তি হচ্ছে ওদের তারুণ্য। ওদের সব কিছুতে নতুনত্ব থাকে। যেটা হচ্ছে ওদের শক্তি। আমাদের তরুণরা বেশ ভালো করছে। কিন্তু আমাদের দেশে তেমন কোন প্রতিষ্ঠানও নেই যেখান থেকে ওরা শিখবে। আমাদের সময় তো দীর্ঘ সময় আমরা থিয়েটার করেছি, অনেক রকম অভিজ্ঞতা নিয়েই এখানে আসছি। যেমন দেখতেই পাচ্ছো আমার গেটআপে আমি প্রবীণ সেজেছি, আবার নবীনও সাজতে পারবো। যেগুলোতে আসলে অভিজ্ঞতার দরকার। জানার দরকার। কিন্তু এখন যে নবাগতরা আসছে, তাদের থিয়েটারের সাথে যোগাযোগ খুবই কম। বা থাকলেও সব মিলিয়ে থিয়েটারের অবস্থা তো আগের মতো না। যে কারনে ওখানে ওদের কাজ করতে পুরোপুরি শিক্ষাটা পাচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে আমার একটু সন্দেহ হয়। কিন্তু এর মাঝেই যারা মন দিয়ে চেষ্টা করছে তারা খুব ভালো করছে। মনোযোগ দিয়ে শিখলে আরো ভালো পারবে।
প্রিয়.কম: বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
আবদুল্লাহ রানা: বর্তমান ব্যস্ততা পুরোটাই আমার অভিনয় নিয়ে। আমি দু বছর ধরে কোনো নির্দেশনা দিচ্ছি না। তবে সামনেই শুরু করবো আবার। মূলত আমি একটা সিনেমার কাজে হাত দিবো। সেটার স্ক্রিপ্টের কাজ করছি গত ছয় মাস ধরে। আর অভিনয়ের যে ব্যস্ততা তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অম্লান বিশ্বাসের 'শূন্যতা', মাসুদ সেজানের 'চলিতেছে সার্কাস', মুস্তাসির বিপনের 'অল্প স্বল্প গল্প', 'হোম থিয়েটার', এজাজ মুন্নার 'আস্থা' তারপর আরো অনেকগুলো। মানে প্রায় ১০-১২টা কাজ চলেছে।
প্রিয়.কম: জীবনে অপ্রাপ্তি...
আবদুল্লাহ রানা: জীবনে সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি বলিউড নায়িকা শ্রীদেবীকে বিয়ে না করা। শ্রীদেবীকে বিয়ে করার সময় একটা সময় পাগল ছিলাম। আপাতত এটা আমার অপ্রাপ্তি।
প্রিয়.কম: প্রিয় অভিনেতা -অভিনেত্রী?
আবদুল্লাহ রানা: আমাদের দেশে তো আসলে এতো লোক যে একজনের নাম বললে আরেকজনের কাছে ঝামেলায় পড়ে যাবো। আমার সিনিয়র জুনিয়র যারা ভালো অভিনয় করেন তারা সবাই আমার প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রী।
প্রিয়.কম: নির্দেশক এবং অভিনেতা হিসেবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
আবদুল্লাহ রানা: এই দুই ক্ষেত্রেই তো আমি কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছিনা। খুবই খারাপ অবস্থা। আমি তো নির্দেশনা ছেড়েই দিয়েছি এই কারনে। এখন সব এজেন্সি নির্ভর নাটক তো, এখন নাটকে কোনো গল্প থাকে না। এমন একটা ব্যাপার যে এজেন্সির পিছনে থাকলে সবাই অভিনেতা অভিনেত্রী হতে পারবে। এরকম একটা ক্রান্তিকাল যাচ্ছে। আমি কোনো ভবিষ্যৎ দেখিনা। তবে এটাই বাস্তবতা।
প্রিয়.কম: প্রিয়.কম থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আবদুল্লাহ রানা: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
সম্পাদনা: শামীমা সীমা