ছবি সংগৃহীত

আমার পেছনে একটি চক্র কাজ করছে: হিমিকা

এম. মিজানুর রহমান সোহেল
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০৫
আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০৫

সামিরা জুবেরী হিমিকা। ছবি: সংগৃহীত। 

(প্রিয়.কম) বাংলা ভাষায় হাতে লেখা, টাইপ করা ও ছাপার অক্ষরের লেখাকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য লেখায় রূপান্তর এবং বাংলা প্রকাশনাকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার জন্য সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা খরচ করে ‘বঙ্গ’ নামে একটি বাংলা অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন বা ওসিআর কিনেছিল। ২০১৪ সালে এই সফটওয়্যারটি ক্রয় করা হলেও এর কোন ব্যবহার হচ্ছে না। সফটওয়্যারটি কোথায় আছে, কার দায়িত্বে আছে, কে ব্যবহার করছে, এখন পর্যন্ত এই সফটওয়্যার দিয়ে কি কি কাজ করা হয়েছে এর কোন উত্তর কারও জানা নেই! তবে এ বিষয়ে জানতে ‘বঙ্গ’ নামের এই সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিম ইঞ্জিনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামিরা জুবেরী হিমিকার সাথে যোগাযোগ করে প্রিয়.কম। তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। 

প্রিয়.কম: আইসিটি বিভাগ থেকে সবগুলো মন্ত্রণালয়ে বাংলা ওসিআর ব্যবহার করানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের ট্রেনিংও দেওয়া হয়েছে। এরপরেও এটা কেন ব্যবহার হচ্ছে না? 

সামিরা জুবেরী হিমিকা: আমাদের জানামতে ৬০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কেউ না কেউ এই ওসিআর সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। সরকার টুলস দিতে পারে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। সেই কাজটি আইসিটি ডিভিশন ও আমরা করেছি। আশা করছি অন্যান্য মন্ত্রণালয় এগিয়ে আসবে এবং এর সুবিধা গ্রহণ করবে।

প্রিয়.কম: ২০১৪ সালে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই ওসিআর ৯৬ শতাংশ কাজ করে বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু আইসিটি বিভাগকে আপনারা ৮৭ শতাংশ কাজের সফটওয়্যার দিয়েছেন কেন? 

সামিরা জুবেরী হিমিকা: আমরা ট্রায়াল দিয়ে দেখেছি আমাদের সফটওয়্যার একশত ভাগও কাজ করে। কিন্তু তখন আমাদের প্রেস রিলিজে এটা ৮০ শতাংশ বলেছিলাম। পৃথিবীর কোন ওসিআর নেই যেখানে সবসময় শতভাগ সঠিক ফলাফল দেবে। ইংরেজি ওসিআর প্রায় ৩০ বছর ধরে কাজ করে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। স্ক্যানিং ভাল না হলে এবং পুরাতন টাইপের ফন্ট যেটা কম্পিউটার ধরতে পারছে না সে ক্ষেত্রে ফলাফল ভাল আসবে না। আবার একই ধরনের ওসিআর যদি ফন্ট ঠিক থাকে এবং স্ক্যানিং ভাল হয় তাহলে শতভাগ সঠিক রেজাল্ট দেবে। ৮৭ থেকে ১০০ ভাগ সঠিক হওয়া নির্ভর করছে ফন্টটি কতটা কমনলি ব্যবহার হচ্ছে।

প্রিয়.কম: ওসিআর সফটওয়্যারের বাজেট সম্পর্কে জানতে চাই। 

সামিরা জুবেরী হিমিকা: আমরা আইসিটি বিভাগকে যে কাস্টমাইজ ভার্সন বাংলা ওসিআর দিয়েছি সেই ওসিআর ‘বঙ্গ’ এর জন্য আমরা পেয়েছি ২ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। আর বাকি টাকা টেক্সট টু স্পিচ ও বাংলা কর্পাস-এর জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এই সফটওয়্যার বানাতে টিম ইঞ্জিনের অন্তত ১২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। 

প্রিয়.কম: ১২ কোটি টাকা খরচ হলেও ৬ কোটি টাকায় কেন কাজ করলেন? 

সামিরা জুবেরী হিমিকা: এটা আমাদের বিনিয়োগ ছিল। আমরা যে ভার্সনটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেবো সেখান থেকে এই বিনিয়োগ উঠে আসবে বলে আমরা আশা করছি।

ওসিআর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিম ইঞ্জিনের লোগো। ছবি: প্রিয়.কম 

প্রিয়.কম: তৎকালীন টেন্ডার বাতিল করে অবৈধভাবে টাকা বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি আসলে কি ছিল? 

সামিরা জুবেরী হিমিকা: অবৈধভাবে কোনো বরাদ্দ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যথাযথ নিয়ম মেনেই এই প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে। টেন্ডার বাতিল নয়; ওপেন টেন্ডার থেকে সিঙ্গেল সোর্সিংয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমার পেছনে একটি চক্র কাজ করছে, যারা নিয়মিতভাবে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমাদের ইনোভেশনের জন্য বরাদ্দ দিতে ২০১৩ সালে সরকারের সাথে আমাদের চুক্তি হয়। তাদের সাথে এমওইউ হওয়ার পর ওই সফটওয়্যারটি কাস্টমাইজ করে দিয়েছিলাম। এটা নিয়ে অনেক মিটিং হয়েছে। পরবর্তীতে একটি প্রকল্প আকারে সাবমিট করার পর তখন বিচার বিবেচনা করেই আমাদেরকে কাজটি দেয়া হয়েছে।

প্রিয়.কম: ওসিআর নিয়ে এখন কী করছেন এবং সামনের দিনের পরিকল্পনা কি? 

সামিরা জুবেরী হিমিকা: আগামীতে তাঁর 'পুঁথি' (যা টিম ইন্জিনের নিজস্ব সফটওয়্যার) তা টেস্টিং করার পর সারা পৃথিবীতে যেভাবে ওসিআর সফটওয়্যার বিক্রি করা হয় সেভাবে বিক্রি করবো। আর সরকারের দেয়া কাস্টমাইজ্ড ভার্সন ‘বঙ্গ’ ব্যবহার করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে উপকৃত হতে পারে সে জন্য টিম ইঞ্জিন তাদের সাপোর্ট অব্যাহত রাখবে। প্রয়োজনে সফটওয়্যারটি আপগ্রেড করে দেয়া হবে। 

সম্পাদনা: গোরা