কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

‘ট্যুরিজম প্রোডাক্ট সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান শূন্য’

তানজিল রিমন
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৩৪
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৩৪

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কর্মসংস্থানভিত্তিক শিল্প হচ্ছে পর্যটন খাত। এই খাতকে কাজে লাগিয়ে অনেক দেশই নিজেদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধি করেছে। অথচ ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে এই খাতকে কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। যথাযথ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সেবার মান নিয়ন্ত্রণ, গবেষণা, দক্ষ জনবলের অভাব ও নীতিমালা বাস্তবায়নের অভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না বাংলাদেশের পর্যটন খাত। এরই মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এই খাত আরও পিছিয়ে পড়েছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের পর্যটন কোন পর্যায়ে রয়েছে? পর্যটন বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান মনে করছেন, দেশের পর্যটন খাত এগিয়েছে ঠিক, সেটা তুলনামূলক অনেক কম। বিশ্ব পর্যটকদের কাছে দেশের পর্যটন পৌঁছাতে পারেনি। পরিকল্পনা ও তথ্যের অভাব রয়েছে। শুধু বিদেশি নয়, দেশের মানুষের কাছেই পর্যটনকে যথাযথভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, প্রতিবেশী দেশ ভারত পর্যটন নিয়ে যেভাবে কাজ করেছে, বাংলাদেশে তার কিছুই হয়নি। ফলে ওই দেশগুলো পর্যটন খাতে যতদূর এগিয়ে গেছে, বাংলাদেশ ততটাই পিছিয়ে রয়েছে।

ট্যুরিজম প্রোডাক্ট সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান শূন্য

বাংলাদেশে পর্যটন খাত বলতে কেবল স্থান বা প্রকৃতিকেই বোঝায়! অথচ এর বাইরে অনেক বিষয় রয়েছে, যা পর্যটন পণ্য হিসেবে বিশ্ব পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা যেতে পারে। কিন্তু সেসব নিয়ে কোনো কাজই হচ্ছে না বলে জানান ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান। তিনি বলেন, “স্পট বা নেচারের বাইরে আমরা আর কিছু ভাবতে পারছি না। আমাদের ছোট্ট দেশে এমন কিছু নাই, যেটি দেখার নয়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘একটি ধানের শীষের উপরে একটি শিশির বিন্দু’। কিন্তু আমরা সেসব দেখি না। যারা পর্যটন নিয়ে কাজ করি, তারাই পর্যটন বলতে কেবল বুঝি সেখানে নেচার আছে, পাহাড়-পর্বত আছে, সাগর-নদী আছে। আমাদের পর্যটন জ্ঞান এর মধ্যেই সীমিত। কিন্তু প্রত্যেকটা বিষয়ই যে পর্যটনের মধ্যে পড়ে, সেটা আমরা বুঝতে চাই না। যেমন আমাদের কালচার বা সংস্কৃতি। সংস্কৃতি একটি বিশাল ট্যুরিজম প্রোডাক্ট (পর্যটন পণ্য)। আমাদের খাবার, স্থানীয় পর্যায়ের খাবারগুলো আলাদা আলাদা ট্যুরিজম প্রোডাক্ট, বিভিন্ন স্থানীয় জীবনাচরণ—এমন প্রত্যেকটি বিষয়ই কিন্তু ট্যুরিজম প্রোডাক্ট। আমাদের কাছে প্রচুর প্রোডাক্ট রয়েছে, কিন্তু সেগুলোকে আমরা ট্যুরিজম প্রোডাক্ট হিসেবে গণ্যই করছি না। যেখানে গণ্য করছি না, সেখানে তো আর কোনো কথা থাকে না। অথচ এই পণ্যগুলোকে একটি প্যাকেজে বা সাজিয়ে-গুছিয়ে মানুষের কাছে উপস্থাপন করলে পর্যটনের নতুন কিছু দ্বার উন্মোচিত হয়। কিন্তু আমরা কেবল স্থান নিয়ে পড়ে রয়েছি। এর বাইরে ভাবতে পারছি না, ভাবি না। ট্যুুরিজম প্রোডাক্ট সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আসলে শূন্য। আমরা জানিই না, কোনটা ট্যুরিজম প্রোডাক্ট। আমরা মনে করি, অনেক পুরানো মসজিদ আছে, অনেক পুরানো মন্দির আছে, পাহাড়পুর আছে, এসবই কেবল ট্যুরিজম প্রোডাক্ট। আর কিছু নেই।”

পাশের দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটন এলাকার উদাহরণ টেনে ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, “আপনি যখন আগ্রায় তাজমহল দেখতে যাবেন, সেখানে তাজমহলের বাইরে স্থানীয় পোশাক, স্থানীয় খাবার, স্থানীয় সংস্কৃতিকেও তারা প্রমোট করছে। অর্থাৎ তাজমহলের বাইরে খাবারের চাহিদা বেড়েছে, স্থানীয় পোশাক বিক্রি হচ্ছে, স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ছে। এসব নিয়ে পর্যটকরা সময় কাটাচ্ছেন, স্থানীয়দের বাড়তি আয় হচ্ছে। আপনি জয়সালমিরে যান, সেখানে সোনার কেল্লা যেমন আপনাকে মুগ্ধ করবে। স্থানীয় মানুষদের জীবনাচরণও আপনাকে আকর্ষণ করবে। কেন করবে? আপনার সামনে তারা বিষয়টা তুলে ধরতে পেরেছে। স্থানীয় খাবার, চামড়ার বিভিন্ন পণ্য, সংস্কৃতি—সবগুলোতেই পর্যটকদের অংশগ্রহণ থাকে। টাকা দিয়ে স্থানীয়দের নাচ দেখতে যান পর্যটকরা। কিন্তু আমাদের এখানে সুযোগ থাকলেও এসবের কিছু নাই। কোথাও নাই। অথচ প্রত্যেকটি এলাকায় আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে, স্থানীয় খাবার, পোশাক, পৃথক জীবনাচরণ রয়েছে। এসব যে ট্যুরিজম প্রোডাক্ট হতে পারে, সেই জ্ঞানই আমাদের নেই। ফলে আলাদা কোনো প্যাকেজ কিন্তু আমাদের দাঁড়াচ্ছে না। আমরা কোথাও সাগর দেখতে যাচ্ছি, দেখছি। পাহাড় দেখতে যাচ্ছি, দেখছি। আর কিছু দেখছি না। পর্যটকও সেসব বিষয় সম্পর্কে জানছেন না, আগ্রহও জমছে না। আমরা কোথাও গেলে শুধু স্থান বা নেচার দেখতে চাই না, সেই স্থান বা নেচারের পাশাপাশি খুঁটিনাটি সবকিছু জানতেও চাই। যেমন আমাদের পাহাড়পুরে নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে, তাদের নিজস্ব কালচার রয়েছে, উৎসব রয়েছে, তাদের পৃথক পোশাক, খাবার, জীবনাচরণ রয়েছে। এসব তুলে ধরতে হবে। প্যাকেজ আকারে সবার সামনে অফার করতে হবে।”

ট্যুরিজম প্রোডাক্ট বের করে সেসব নিয়ে কাজ করা তো দূরের বিষয়, স্থান বা নেচারকেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো নিয়েই পরিকল্পিত কোনো কাজ হচ্ছে না বলে মনে করেন অধ্যাপক রাশিদুল হাসান। তিনি বলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত রয়েছে আমাদের। পৃথিবীতে আমাদের সৈকতের চেয়ে অনেক ছোট ছোট সৈকতগুলোও সাজানো-গুছানো। অথচ এত বড় সমুদ্র সৈকতে বিনোদনমূলক কিছু নাই। এই সৈকত আমাদের অন্যতম একটি প্রোডাক্ট, যেটাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে একটি প্যাকেজ আকারে পর্যটকদের কাছে অফার করতে হবে। অথচ আমাদের সৈকত অনেকটাই নোংরা। বিদেশিদের দেখলেই ভিক্ষুকরা ঘিরে ধরে। প্রকৃত দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।”

স্থানকেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ পর্যটন কেন্দ্র (বিটিসি), এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা (বিটিসি) সাত শতাধিক পর্যটন স্থান চিহ্নিত করে কাজ করছে, যেগুলো নেচার অথবা মারমেইড, কিন্তু নতুন করে কোনো প্রোডাক্ট ক্রিয়েট করতে পারছে না তারা।”

মূল উদ্যোগটি সরকারকেই নিতে হবে

ট্যুুরিজম প্রোডাক্ট ক্রিয়েট বা পর্যটন পণ্য বের করার কাজটি তাহলে কীভাবে হবে? এমন প্রশ্নে সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, “যেকোনো দেশের পর্যটনকে তুলে ধরার জন্য মূল কাজটি সরকারকেই করতে হয়। সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, ভুটান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, সেসব দেশের সরকার পর্যটন খাতকে সারা বিশ্বের মাঝে তুলে ধরতে দারুণ দারুণ সব উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।”

সরকারের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা নিতে হবে, যা বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিটিসি), বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)  ও বেসরকারি ট্যুুর অপারেটররা।

ট্যুর অপারেটরগুলো ব্যবসায় মগ্ন, পর্যটনের উন্নয়নে ভূমিকা নেই

ট্যুুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর কার্যক্রম কেবল ব্যবসার মধ্যে সীমিত জানিয়ে এই পর্যটন বিশেষজ্ঞ বলেন, “বাংলাদেশের পর্যটনের উন্নয়ন নিয়ে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। তাদের চিন্তা-ভাবনা ব্যবসা বা ইনকামের মধ্যেই রয়েছে। তারা বলছে, তাদের সদস্য সংখ্যা ৭০০-এরও বেশি। তাহলে এত এত ট্যুর অপারেটর, তারা কী করছে পর্যটনের উন্নয়নে। একটা দেশে সব কাজ শুধু সরকার করবে আর অন্যরা আয়ের চিন্তায় মগ্ন থাকবে, এমনটা হতে পারে না। পর্যটনের উন্নয়নে নতুন নতুন উদ্ভাবনী আইডিয়া বের করতে হবে, নতুন নতুন প্রোডাক্ট ক্রিয়েট করার দায়িত্ব তাদেরও রয়েছে। সরকারকে ট্যুরিজম সম্পর্কে আইডিয়া দিতে হবে। এটা খুবই দুঃখজনক একটি বিষয। অন্যান্য দেশে দেখবেন, নতুন নতুন পণ্যের আইডিয়া, প্রমোট করার বিষয়গুলো ট্যুর অপারেটররাই করে থাকে। আর আমাদের এখানে এরা পর্যটন বলতে কেবল ব্যবসাটাকেই বোঝে, আর কিছু না।”

এক্ষেত্রে সরকার কী করতে পারে—এমন প্রশ্নে সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, “ট্যুর অপারেটরগুলোকে সরকারের পক্ষে বলে দিতে হবে, তোমাকে বছরে দুটি নতুন প্রোডাক্ট বের করতেই হবে। শুধু ব্যবসা করে নিজের পকেট ভরবা, পর্যটনের জন্য কিছু করবা না, সেটা হবে না।”

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতেও বিদেশিদের ওপর নির্ভর

অধ্যাপক সৈয়দ রাশিদুল হাসান জানান, ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অধীনে বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে একটি মাস্টারপ্লান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই মাস্টারপ্লানটি সফলতার মুখ দেখেনি। সেটা এখনো ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অধীনে একটি মাস্টারপ্লান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও এই উদ্যোগের সঙ্গে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করার মানসিকতার জন্য তিনি আশাহত।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশ, এখানে পরিকল্পনা-মহাপরিকল্পনা যাই করা হোক, আমাদের চেয়ে তো বিদেশের লোক বেশি জানার কথা না। কিন্তু আমাদের একটা টেনডেন্সি হয়ে গেছে যে, সাদা চামড়া না থাকলে হবে না। এখন করোনার কারণে সেই মাস্টারপ্লান কতদূর এগিয়েছে আমার জানা নেই। বিদেশিরাও তো আর আমাদের এখানে বসে নেই। কাজ আটকাবেই তো। অথচ আমাদের দেশে অনেক রিসার্চার রয়েছে, যারা পর্যটন নিয়ে অনেক কাজ করছে, তাদের কাজে লাগানো হচ্ছে না। আমরা নির্ভর করে বসে আছি বিদেশিদের ওপর।”

গুরুত্ব বোঝে কাজ করতে হবে

পর্যটনের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্ব বোঝে পর্যটন পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। ৭০০ প্রোডাক্ট রয়েছে বলে সবগুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “যেগুলোতে পর্যটক বেশি পাওয়া যাবে, সেগুলো নিয়ে আগে কাজ করতে হবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন করতে হবে। সবগুলোর কাজ একসঙ্গে করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য বা পর্যটন কেন্দ্রের পারিপার্শ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে উল্টো পর্যটকরা বিরক্ত হবে। আবার হঠাৎ নতুন একটি কেন্দ্র বা পণ্য খোঁজে পাওয়া গেল, যেখানে অনেক পর্যটক যাচ্ছে, কিন্তু সেদিকে কোনো নজর না দিলেও সমস্যা। এক্ষেত্রে নতুন কেন্দ্রটিকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যটকদের ‍সুবিধার বিষয়গুলো দেখতে হবে। বিশেষ করে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্থানীয় পরিবেশের ভারসাম্যের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।”

বিদেশিদের না আনতে পারার কারণ তথ্যের অভাব

তথ্য ‍ও সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে বিদেশি পর্যটক খুব বেশি আনা সম্ভব হয় না বলে জানান সৈয়দ রাশিদুল হাসান। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে তথ্যের খুবই অভাব রয়েছে। পর্যটন করপোরেশন বা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ৬/৭ লাখ বিদেশি আসে। কিন্তু আমরা ইউএনডব্লিউটিও-এর হিসাব অনুযায়ী যে তথ্য পাই, তাতে দেখি, বছরে দেড় লক্ষের বেশি বিদেশি কখনোই আসে না। এর কারণ আমরা তাদের কাছে আমাদের পর্যটনকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারছি না। বিখ্যাত যে পর্যটন কেন্দ্রগুলো রয়েছে, সেগুলোর তথ্যই তারা পাচ্ছে না। আবার বিদেশিরা এখানে এলে তাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থাও নেই। একটা বিয়ার তাদের খেতে হয় ৭০০ টাকায়, যেটা তারা বাইরের দেশে কয়েক সেন্ট দিয়ে পেয়ে যায়। আমাদের এখানে যারা চাইনিজ বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করে, তারা (অন্য বিদেশিরাও) বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাংকক চলে যায়। শুক্র-শনিবার সেখানে থেকে তারা রবিবার ফিরে আসে। তারা এখানে দুই দিন কী করবে, এজন্য তারা ব্যাংকক যায়।”

অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে ট্যুুরিজমকে সম্পৃক্ত করতে হবে

দেশের বড় বড় যে অবকাঠামো উন্নয়ন, তার সঙ্গে পর্যটনের মিলন ঘটাতে হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো কাজ না হওয়াটা দুঃখজনক বিষয়। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু তার সঙ্গে ট্যুরিজমকে সংযুক্ত করা হয় না। যেমন বাংলাদেশের পদ্মাসেতু, সেটা দেখার জন্য সারাদেশের মানুষের মাঝে কৌতূহল রয়েছে। এটাতে কিন্তু অটোমেটিক্যালি ট্যুরিজম চলে আসে।  কিন্তু পদ্মাসেতু দেখতে গেলে মানুষ কোথায় থাকবে, সেখানে কি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে? খাবার ব্যবস্থা কি রয়েছে? কিছুই নাই। পর্যটনের কোনো কিছুই নাই। ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে ট্যুরিজমের মিলন ঘটাতে হবে।”

দক্ষ জনবল গড়ে উঠছে না

পর্যটন খাতে দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে জানিয়ে সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, “আমরা দক্ষ জনবল ক্রিয়েট করতে পারি না। পর্যটনের ওপর আমাদের এখানে বিবিএ-এমবিএ করছে ছেলেরা। কিন্তু তারা থিওরি পড়াশোনার মধ্যেই থাকছে, অথচ পর্যটন বিষয়টি প্রাকটিক্যাল। এখন এই অবস্থায় তারা ডিগ্রি নিয়ে বের হয়ে চাকরি পাবে কোথায়? আবার ডিপ্লোমা কোর্সগুলো কোনোটার মানই সন্তোষজনক নয়। আবার বিবিএ-এমবিএ করার পর যখন কোনো একটা হোটেলে বা কোথাও সংশ্লিষ্ট জব করতে যায়, তখন তাকে অফার করা হয় ১০ হাজার টাকা। অথচ তার সঙ্গে পড়েছে তার বন্ধু কোনো ব্যাংকে ঢুকলে পাচ্ছে ষাট হাজার টাকা। এখন সে কেন এই সেক্টরে ঢুকবে। এসব কারণে দক্ষ জনবল গড়ে উঠছে না। এ নিয়ে সরকারের পলিসি করা দরকার, যেখানে কোন ক্ষেত্রে কী পরিমাণ বেতন হবে, তা নিয়ে স্ট্রাকচার করা দরকার।”