কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আকতার হোসেন (বামে) ও দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী ফুটবলার গোল্ডেন বুটজয়ী আঁখি (ডানে)। ছবি: প্রিয়.কম

‘অভাবের কারণে জার্সি কিনে দিতে পারিনি অথচ আমার আঁখি গোল্ডেন বুট অর্জন করেছে’ (ভিডিও)

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:২৪
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:২৪

(প্রিয়.কম) ‘অভাবের কারণে মেয়ে আঁখিকে একটি জার্সি ও বুট কিনে দিতে পারিনি। অথচ আমার আঁখি খাতুন গোল্ডেন বুট অর্জন করেছে। দেশের জন্য বড় সুনাম বয়ে নিয়ে এসেছে’—দুঃখ করে এমন কথা প্রিয়.কমকে বলছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী ফুটবলার গোল্ডেন বুটজয়ী আঁখির  দিনমজুর পিতা আকতার হোসেন।

১৯ এপ্রিল, শুক্রবার দুপুরে প্রিয়.কমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেন তিনি।  

তিনি বলেন, ‘তিন বছর বয়স থেকেই ফুটবলের প্রতি ঝোঁক ছিল আঁখি খাতুনের। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পারকোলা গ্রামে জন্ম আঁখির। স্কুলের টিফিনের জন্য কোনো টাকা আঁখির হাতে তুলে দিতে পারিনি। কারণ আমি তাঁতের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে কোনোমতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতাম।’

গোল মেকার থেকে গোল্ডেন বুট অর্জনকারী আঁখির বেড়ে ওঠা, খেলাধুলা, লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইলে আক্তার হোসেন বলেন, ‘আঁখি এখন অনেক ভালো আছে। নিয়মিত খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে নারী ফুটবল বিশ্বকাপ আমার আঁখির হাত দিয়িই আসবে, আমরা আশা করছি।’

আঁখির এত বড় অর্জনে তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে কে?—এমন প্রশ্নের জবাবে আকতার হোসেন বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করার জন্য। এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়েই আঁখি হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনেক বড় জায়গায় পৌঁছেছে। আসলে ওর বড় ইচ্ছা ছিল, ইচ্ছাশক্তি ছিল, জেদি ছিল। সে জন্য ও এ পর্যন্ত এসেছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট না হলে হয়তো এ সুযোগ পেত না। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’

আঁখি গোল্ডেন বুট অর্জনসহ খেলাধুলা করে আর কী সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে? খেলাধুলার কারণে আঁখির লেখাপড়ার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না?—এমন প্রশ্নের উত্তরে আকতার হোসেন বলেন, ‘হ্যাঁ ও (আঁখি) বিকেএসপির ছাত্রী। ২০১৬ সালে ও যখন বিকেএসপিতে চান্স পায়, তখনই ন্যাশনাল টিমে চান্স পায়। ওখানে পড়ালেখোর জন্য চার জন মাস্টার আছেন। লেখাপড়া ওখান থেকেই করানো হয়। পরীক্ষার সময় এসে বিকেএসপিতে ওরা পরীক্ষা দেয়।’

আঁখির বয়স কত, কয় ভাই-বোন? জবাবে আকতার হোসেন বলেন, ‘আঁখিরা দুই ভাই-বোন। আঁখির বড় ভাই নাজমুল ইসলাম। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করছে। ওর বয়স এখন ১৫। লম্বা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি।’

আপনি আগে তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন কী করছেন? সংসার চলছে কীভাবে? জবাবে আকতার হোসেন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। আরও কিছু জায়গা থেকে অনুদান পেয়েছি। আমি এখন সচ্ছল। আসলে বলার বাইরে আঁখি জন্ম নিয়েছে গরিব ঘরে। আমি ২৬ বছর তাঁত বুনেছি। তাঁতের ব্যবসা না থাকার কারণে আজ আমি যা পাই (দিনমজুর) হিসেবে কাজ করি। ডেকোরেটরের কাজ করি, রাজমিস্ত্রির কাজ করি।’ 

ভালো খেলার জন্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে আঁখিকে পাঁচ শতক জায়গা দেবে—এমন বিষয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে আকতার হোসেন বলেন, ‘আমার যেহেতু বাড়ি নাই, দোচালা একটি টিনের ঘর। থাকার কোনো জায়গা নেই। এমপি মহোদয় ইউএনও স্যারকে বলেন। এরপর ইউএনও স্যার এসিল্যান্ডকে বলেন। শুনেছি যে আমাকে জায়গা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু জায়গা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত তো বলা যাচ্ছে না।’

আঁখিকে নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী? জবাব আকতার হোসেন বলেন, ‘আসলে আঁখির ইচ্ছার বাইরে আমি কিছুই বলব না। কারণ হচ্ছে, মেয়ে আমার ঠিক আছে। কিন্তু সরকারের বাইরে তো আমি কিছু করতে পারব না। আসলে আমি ও আমার মেয়ে আঁখির আশা এই বাংলাদেশ যেমন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়েছে, ফুটবলও তেমনি এগিয়ে যাক। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। আমি সেই দোয়াই করি।’

আঁখির খেলাধুলা ভালো করার পেছনে কেউ অরগানাইস করেছে কি না? জবাবে আকতার হোসেন বলেন, ‘ও একা একাই খেলাধুলা করে বড় হয়েছে। প্রতিভা ওকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমি আঁখিকে একটা জার্সি কিনে দিতা পারতাম না। বুট কিনে দিতে পারতাম না। যখন ও স্কুলে যাইত, আমি ওকে টিফিনের জন্য টাকা দিতে পারতাম না। আমি খুবই অনুভব করি আমার মেয়ের অভাব না পূরণের কথা।’ কিন্তু আমার আঁখি গোল্ডেন বুট অর্জন করেছে।’

দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী ফুটবলার গোল্ডেন বুটজয়ী আঁখি খাতুন বাসস্থানের জমি পাচ্ছেন। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেইন খান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, নারী ফুটবলার আঁখির পরিবারের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। এ জন্য তার বাসস্থানের জায়গা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে শাহজাদপুর পৌর এলাকার মনিরামপুর বাজারে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ শতক জমি আঁখির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। খুব শিগগির আঁখিকে এই জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

২০১৪ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবলে শাহজাদপুর ইব্রাহিম বালিকা বিদ্যালয়ের হয়ে খেলে উঠে আসেন আঁখি। ২০১৫ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক আসে তার। এর আগে তাজিকিস্তানে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম খেলেন আঁখি। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এ টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে আঁখি খাতুন গোল্ডেন বুট পান।

নিচের ক্লিপে দেখুন আঁখির বাবার সাক্ষাৎকার।

প্রিয় সংবাদ/আজাদ চৌধুরী