কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

শহিদুল আলম সাচ্চু ও সিদ্দিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

অভিনয় শিল্পী সংঘের সদ্য বিদায়ী কমিটির বিরুদ্ধে ‘নানা অভিযোগ’

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৯, ২০:৩৫
আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯, ২০:৩৫

(প্রিয়.কম) টেলিভিশন অভিনয় শিল্পীদের সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘের ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে নির্বাচিত সদ্য বিদায়ী কমিটির কিছু কাজকে নির্বাহী পরিষদের গঠনতন্ত্রবহির্ভূত উল্লেখ করে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর ২১ মার্চ লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন সংগঠনটির শিল্পীদের একাংশ।

ওই চিঠিতে তারা সুনির্দিষ্ট ছয়টি অভিযোগ তুলে ধরেছেন। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা প্রিয়.কমকে বলছেন, অভিযোগগুলো বানানো এবং মিথ্যা।

২১ মার্চ, বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রিয়.কমের হাতে এসে পৌঁছেছে ওই চিঠির একটি কপি।

চিঠির ওই কপিতে অভিযোগকারী শিল্পীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন—১. সিদ্দিকুর রহমান, ২. এহসানুর রহমান, ৩. কামাল হোসেন বাবর, ৪. নুর মোহাম্মদ ও ৫. জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী।

অভিনয় শিল্পীদের এ অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির উদ্দেশ্য শিল্পীদের নানা সংকট ও প্রয়োজনে পাশে থাকা; শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মানের দাবি তুলে ধরা; টিভি নাটকের নীতি ঠিক করা; বাজেট-স্বল্পতা নিয়ে কথা বলা; নাটকের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা। এসব উদ্দেশ্য সামনে রেখে ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন। তার আগেই সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল।

ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত ২০১৭-২০১৯ মেয়াদের নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির শেষ সাধারণ সভা গত ২২ ফেব্রুয়াার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। অভিনয় শিল্পী সংঘের মোট নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা ৯২২ জন হলেও ওই দিন কিছুসংখ্যক (এক-তৃতীয়াংশ বা তার কম) সদস্যের উপস্থিতিতে পরবর্তী মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচনের লক্ষ্যে ছয় সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।

পরে গঠিত নির্বাচন কমিশন গঠনতন্ত্রবহির্ভূত হওয়ায় সাবেক কমিটি ১০ মার্চ ওই সাধারণ সভার মতামতকে পাশ কাটিয়ে তাদের পছন্দমতো তিন জনকে নির্বাচন কমিশনে রেখে বাকি তিন জনকে চাপের মুখে কমিশনের সদস্যপদ প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া হয়।

অভিনয় শিল্পী সংঘের সাবেক নির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হলো—

১. ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতি আবশ্যক হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন না, যা ওই দিনের ধারণকৃত ভিডিও থেকে স্পষ্ট হয়। তদুপরি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য প্রস্তুতকৃত সদস্যদের উপস্থিতির তালিকায় তিন শতাধিক সদস্যের স্বাক্ষর দেখানো হলেও স্বাক্ষরকৃতদের কেউ কেউ ওই দিন দেশেই উপস্থিত ছিলেন না।

২. বিগত কার্যনির্বাহী কমিটি সংগঠন পরিচালনার জন্য এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য দুটি ভিন্ন ভিন্ন গঠনতন্ত্র অনুসরণ করছে, যার একটি সাধারণ সদস্যদের জানা, অন্যটি শুধু বিগত কার্যনির্বাহী কমিটির কিছুসংখ্যক সদস্যের জানা।

৩. ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় পেশকৃত সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন সাধারণ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার আগেই তার সুবিধার জন্য বই আকারে ছাপিয়ে সাধারণ সদস্যদের হাতে বিতরণ করা হয়। কিন্তু সাধারণ সভায় ৩৩ জন সদস্য ওই রিপোর্টের ওপর তাদের আপত্তি, মতামত এবং সংশোধনী প্রকাশ করেন। এই সংশোধনী অন্তর্ভুক্তিকরণসাপেক্ষে ওই রিপোর্ট পাস করা হয়। অদ্যাবধি সেই সংশোধিত রিপোর্ট সাধারণ সদস্যদের হাতে পৌঁছায়নি।

৪. ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় পেশকৃত অর্থ সম্পাদকের বার্ষিক আর্থিক বিবরণী বিদ্যমান গঠনতন্ত্রের ১১.৩.৩-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।

৫. বিগত কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সাধারণ সভায় (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮) কোনোরকম পূর্ব ঘোষণা ও প্রস্তাব ব্যতিরেকে বিদ্যমান গঠনতন্ত্র সংশোধন করে, যা বিদ্যমান গঠনতন্ত্রের ১৭.১, ১৭.২, ১৭.৩ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

৬. প্রথম সাধারণ সভায় (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮) সাধারণ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী সদস্য নিকুল কুমার মণ্ডলের কার্যনির্বাহী সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। কিন্তু এ স্থগিতকরণ প্রক্রিয়া বিদ্যমান গঠনতন্ত্রের ৯.১ ও ৯.২ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ প্রসঙ্গে সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি অভিনেতা শহিদুল আলম সাচ্চু প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনটি তো রেজিস্ট্রিকৃত। সংগঠনের বিরুদ্ধে যদি কোনো বিষয়ে কারো কোনো অভিযোগ থাকে, সেটি তারা আমাদের লিখিত আকারে জানাতে পারেন। আমাদের উপদেষ্টা কমিটি আছে, তাদের বরাবরও তারা জানাতে পারেন। এগুলো বাইরের কোথাও জানানোর এক্তিয়ার কারো নেই। বরং যারা সংগঠনের বাইরে বিষয়গুলো জানিয়েছে, তারা সংগঠনের গঠনতন্ত্রবহির্ভূত কাজ করেছে।’

‘গত দুই বছরে দুটি জেনারেল মিটিং হয়েছে। সেখানে তারা কিন্তু এ বিষয়ে কোনো কিছু বলেনি। সামনে নির্বাচন, এখন কেন তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছে? যে অভিযোগগুলো তারা এনেছে সেগুলো বানানো এবং মিথ্যা। সংগঠনে জানানোর পর অভিযোগের বিষয়গুলোতে যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হতো তখন তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারত।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর আজ যে চিঠিটি প্রেরণ করা হয়েছে, সেটি গ্রহণ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকতা।

বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল আরেক কমকর্তা গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘আমাদের যিনি উপ-পরিচালক আছেন, তিনি চিঠিটি দেখবেন; এরপর যাচাই-বাছাই করবেন। আগামী রবিবার এ বিষয়ে উপপরিচালক স্যার আমাদের সিদ্ধান্ত দেবেন। সে অনুযায়ী আমরা কাজ এগিয়ে নেব।’

প্রিয় বিনোদন/আজাদ চৌধুরী