কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ফাইল ছবি

ডাকসু নির্বাচন: ধোঁয়াশার মধ্যে শিক্ষার্থীরা

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:১১
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:১১

(প্রিয়.কম) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আগামী ছয় মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল।

সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য পুলিশ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এসব নির্দেশ দেয় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এবং বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের দ্বৈত বেঞ্চ। নির্দেশটি বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের মনের কথাকেই প্রতিধ্বনিত করেছে। বাংলাদেশের হেন মানুষ নেই, যিনি এ ধরনের নির্দেশ বা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, এমন একটি নির্দেশ উচ্চ আদালত থেকে আসতে হলো কেন?

ডাকসুর একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। সে গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচন হবে। কীভাবে হবে, কাদেরকে নিয়ে হবে সেগুলো বিস্তারিত বলা আছে গঠনতন্ত্রে। কিন্তু সবকিছু লিখিত থাকার পরেও বিগত ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না কেন? এই ডাকসু নির্বাচনের জন্য লেখালেখিও কম হয়নি। অথচ কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যেন অদৃশ্য সুতায় আটকে আছে ডাকসু নির্বাচন।

২০১২ সালে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে উচ্চ আদালতে একটি রিটও হয়েছিল। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একটি অনুষ্ঠানে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। তারপরেও কিছু হয়নি। যেখানে প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, সেখানে বাংলাদেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসে মাত্র সাত বার সেই নির্বাচন হয়েছে। এটা কেমন কথা?

সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। ভিপি এবং জিএস নির্বাচিত হন যথাক্রমে আমান উল্লাহ আমান এবং খায়রুল কবির খোকন। এরপর  ২৮টি বছর পার হয়ে যায় কিন্তু ডাকসু নির্বাচন আর হয়নি। তাই দেখার বিষয়, হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশ শেষ পর্যন্ত তামিল হয় কি না!

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা

এ মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ডাকসু একটি ধারণা মাত্র, যার কথা তারা শুনেছেন, কিন্তু জানেন না কীভাবে কাজ করে সেটি।

মোস্তফা নুর নামের এক ছাত্র বলেন, ‘ডাকসু একটা “অ্যাবসেন্ট এক্সিসটেন্স’ আমাদের কাছে, এর কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি দুই বছর হলো, এখনো ডাকসুর কোনো অস্তিত্ব দেখিনি।’

আরেক ছাত্র সালম বলেন, ‘হলে তো প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীরা সিট পায় না, সে জন্য ক্ষমতাসীন দলের মাধ্যমে উঠতে হয়, পরে তাদের কথামতো চলতে হয়। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন হলে এটা হবে না। ডাকসু হলে হয়তো আমাদের একটা “ভয়েস” তৈরি হবে, আমরা নিজেদের দাবি নিয়ে কথা বলতে পারব।’

এভাবেই ডাকসু নিয়ে তাদের ভাবনার কথা বলছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

সহাবস্থান নিশ্চিতের তাগিদ ছাত্র সংগঠনগুলোর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও প্রচারণায় সমান সুযোগ নিশ্চিত এবং নতুন সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব প্রস্তাব দেন সংগঠনগুলোর নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ বৈঠকটি আয়োজন করে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধনী/পরিমার্জনবিষয়ক সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি। এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ছাত্রনেতাদের প্রস্তাবের মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ভোটার করা, নারী প্রতিনিধি পদের নাম যুগোপযোগী করা, ডাকসু সভাপতির (ভিসি) ক্ষমতা হ্রাস এবং সেক্রেটারিয়েট বডির (কার্যনির্বাহী পরিষদ) ক্ষমতা বৃদ্ধি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক ড. সুপ্রিয়া সাহা, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা ও অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ।

এ ছাড়া ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেইন, ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাস, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি চন্দ্রনাথ পাল ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রাহাত, ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক তমা বর্মণ এবং ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির।

বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাত্র প্রতিনিধিরা জানান, ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে সংবিধান সংশোধন কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সব সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর সিন্ডিকেট বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান, নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা ও ক্যাম্পাসে সব সংগঠনের নেতাকর্মীর প্রচারণা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেন ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া বাম সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল করা (নিয়মিত) শিক্ষার্থীদের ভোটার করা, দীর্ঘদিন পরে নির্বাচন হচ্ছে বিধায় একটি নির্দিষ্ট সেশন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ প্রদান, সভাপতির (ভিসি) ক্ষমতা হ্রাস এবং সেক্রেটারিয়েট বডির (কার্যনির্বাহী পরিষদ) সদস্যদের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন।

এদিকে গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংঠনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিয়ে একটি ক্ষেত্রে সমঝোতায় এসেছে। তা হলো—নির্বাচনে ‘নিয়মিত শিক্ষার্থীরা’ প্রার্থী ও ভোটার হতে পারবেন। তবে নিয়মিত শিক্ষার্থী বলতে কী বোঝায়, এ নিয়ে সংযোজন-বিয়োজন, মতপার্থক্য থাকতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর এবং সেহেতু কীভাবে একটি সুন্দর নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারি, সে লক্ষ্যে গঠিত কমিটি কাজ করছে। এ কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই মতবিনিময় সভার প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যমান গঠনতন্ত্রের কোথায় কোথায় সংশোধন করা দরকার, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন তারা।’

ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করা হয়েছে, তাই নতুন করে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধনী/পরিমার্জন কমিটির সুপারিশমালা ভিসি সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করবেন। এই কমিটি মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণের সুপারিশ করবে। আমরা মূলত গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনের আইনি দিকটি দেখব।’

এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমরা বৈঠকে আমাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছি। আমরা চাই সব সংগঠন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।’

ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি তাদের (ছাত্রদল) মতাদর্শ গ্রহণ করে, তবে তারা ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, কেউ তাদের বাধা দিচ্ছে না।’

ছাত্রদল সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। সহাবস্থান নিশ্চিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশ না-ও নিতে পারেন।’

‘জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। ডাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের অলংকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই আমাদের সমস্যাগুলো কমিটির কাছে তুলে ধরেছি। কমিটির আহ্বায়ক আমাদের উত্থাপিত বিষয়গুলো ভিসি ও প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। এখানে কোনো সহাবস্থান নেই। আমরা আশা করি, প্রশাসন দ্রুত সহাবস্থান নিশ্চিত করবে।’

এ ছাড়া ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতারা যৌথ বিবৃতিতে জানান, ছাত্র অধিকারবিষয়ক সম্পাদক, সামাজিক বিনোদনের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টি করতে হবে। ডাকসুর বর্তমান গঠনতন্ত্রে সভাপতির (ভিসি) একচেটিয়া ক্ষমতা পরিবর্তনেরও প্রস্তাব রাখেন তারা। এ ছাড়া ডাকসু ও হল সংসদের সভাপতি ও নির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যের ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সব ভোটারের নিরাপদে ভোটদান নিশ্চিত করতে হলের পরিবর্তে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে বুথের ব্যবস্থা করা, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য নিরপেক্ষ পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা, ক্ষেত্রবিশেষে নতুন নতুন সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করার দাবিও ছিল তাদের।

এদিকে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তার কার্যালয়ে বলেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের কোনো সংশোধনী প্রয়োজন আছে কি না, সেই বিষয়ে সভাটি হয়েছে। গঠনতন্ত্র যাদের ভোটার বলে চিহ্নিত করবে, তারাই ভোটার হবে। ৩১ মার্চের মধ্যেই নির্বাচন করার প্রয়াস রয়েছে। সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রভোস্ট কমিটি সব হলে সহাবস্থান আছে বলে অবহিত করেছেন। সব শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যাবলি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করতে পারছে।’

সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। এরপর ২৮ বছর ধরে বন্ধ আছে ডাকসু নির্বাচন। সম্প্রতি ৩১ মার্চের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা (শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ) প্রকাশ করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের প্রধান অংশীদার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে পরিবেশ পরিষদের বৈঠক হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের বৈঠক ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ শিক্ষার্থীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি এক রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত। ওই নির্দেশনার পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করা হয়। আদালতের নির্দেশনার সাত মাসেও নির্বাচনের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিশ দেন রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

পরে ৩১ অক্টোবর ‘ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে’ হলভিত্তিক শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের সঙ্গে সংযুক্ত ও আবাসিক মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৪৯৩ জন শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৫০৯ জন ছাত্রী ও ২৩ হাজার ৯৮৪ জন ছাত্র।

এদিকে বৈঠকে যোগদানের জন্য ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রক্টরিয়াল টিমের পাহারায় সিনেট ভবনে নিয়ে আসা হয়। বেলা ১১টায় আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রদল নেতাদের আসতে বিলম্ব হওয়ায় সাড়ে ১১টায় তা শুরু হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে সহকারী প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল টিমকে তাদের ঘিরে নিয়ে আসতে দেখা যায়। এ বিষয়ে প্রক্টর বলেন, ‘তারা আমাদের সহযোগিতা চেয়েছিল। আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছি।’

বৈঠক শেষে বিদায় নেওয়ার সময় প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসানকে জড়িয়ে ধরেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। শীর্ষ দুই নেতা পরস্পর কোলাকুলি করেন। বৈঠকে উভয় দল মনখুলে প্রায় একই ধারায় বক্তব্যের পর বাইরে শত শত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীর সামনে এই ঘটনায় সাময়িকভাবে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, ১৯৯০ সালের দিকে যখন ডাকসু সক্রিয় ছিল, তখন ছাত্রনেতাদের মধ্যে এমন সদ্ভাব ছিল। ক্যাম্পাসে গোলাগুলি বা মারামারির পর মধুর ক্যান্টিনে বা নিজ নিজ হলে একসঙ্গে পাশাপাশি অবস্থান ও খাবার গ্রহণ করতেন তারা। সেই সহাবস্থান অনেকটাই তিরোহিত ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রিপোর্টার সলিমুল্লাহ জানান, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভের পর দুটি বাদে আর সব আবাসিক হল স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছিল ছাত্রলীগ। কিন্তু পরে ছাত্রলীগ নেতাদের স্বাগত জানিয়েছিল ছাত্রদল। ডাকসু ভবনের সামনে উভয় সংগঠনের শীর্ষ নেতারা কোলাকুলির পর গ্রুপ ছবি তোলেন। প্রায় ১৭ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার একই দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।

হলভিত্তিক প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের হলভিত্তিক প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৩১ অক্টোবর বুধবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তালিকা প্রকাশ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। যদিও মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বুধবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই তালিকাকে ‘ডাকসু নির্বাচনের জন্য খসড়া ভোটার তালিকা’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বুধবার উদ্বোধনের সময় উপাচার্য বলেন, ‘এটিকে ডাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকা বলা কঠিন, বলা যায় হলভিত্তিক শিক্ষার্থী তালিকা। ডাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হলে ডাকসুর সংবিধানের আলোকে এখান থেকে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে।’ তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা ভোটার হতে পারবেন কি না—এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি তিনি।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আরও বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমরা শিক্ষার্থীদের হলভিত্তিক একটি ডাটাবেস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু প্রথমবার, এতে ভুল-ভ্রান্তি রয়ে গেছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সেগুলো সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। হল অফিসগুলোয় তালিকার হার্ডকপি সংরক্ষিত থাকবে। সংশোধন, পরিমার্জন ও বিয়োজনের জন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষের অফিসে লিখিতভাবে জানাতে হবে।’

‘শিক্ষার্থীদের এই ডাটাবেসের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, হল প্রাধ্যক্ষ ও বিভাগের চেয়ারম্যানদের সুবিধা হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দ্রুত চিনতে পারবেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে গতি আসবে।’

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৪ সালে। ১৯২৪-২৫ সালে প্রথম ডাকসুর ভিপি মনোনীত করা হয়। ডাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। এর আগে ভিপি মনোনীত ছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ডাকসু গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। সে বছর ৬ জুন ডাকসু ও ১৮টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনসহ সব সংগঠনের নিয়মিত নির্বাচন হলেও ডাকসু নির্বাচন দেয়া হয়নি।

প্রিয় সংবাদ/আজাদ চৌধুরী