কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মেশিনারিজ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়। ফাইল ছবি

বেনাপোল বন্দরে ভারী পণ্য খালাস বন্ধ, আমদানিকারকদের উদ্বেগ

আয়েশা সিদ্দিকা শিরিন
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:১৯
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:১৯

(ইউএনবি) বেনাপোল বন্দরে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ভারী পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমদানিকারকরা। এদিকে পাঁচ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে তিন দিন ধরে করে পণ্য খালাস বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করছেন বন্দরের ইকুইপমেন্টে কর্মরত শ্রমিকরা। এতে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।

পণ্য লোড-আনলোড না হওয়ায় লাখ লাখ টাকা ডেমারেজ গুণতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। বিষয়টি বার বার জানানোর পরও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

বন্দর সূত্র জানায়, দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ও বিভিন্ন প্রকল্পের বেশির ভাগ মেশিনারিজ আমদানি হয় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য বন্দরে লোড-আনলোড ও বন্দর থেকে খালাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মোংলা বন্দর থেকে ২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বেনাপোলকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পর থেকে অতি পুরাতন ক্রেন ও ফর্কলিফট মোংলা বন্দর থেকে ভাড়া করে এনে কাজ চালায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

২০১০ সালের ২১ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য উঠানো-নামানোর জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঢাকার মহাখালীর মেসার্স এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেমের পাঁচ বছরমেয়াদি চুক্তি হয়। ওই বছরের ১ আগস্ট তারা বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পায়। তারা বন্দরে কয়েকটি নামমাত্র ফর্কলিফট ও ক্রেন দিয়ে মালামাল উঠানো-নামানোর কাজ শুরু করে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কয়েক দিন কাজ করার পর এসব ফর্কলিফট ও ক্রেন অকেজো হওয়া শুরু করে। কিন্তু মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারী পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করা হলে আগের হ্যান্ডলিং ঠিকাদার মেসার্স এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম উচ্চ আদালতে রিট করে। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় দরপত্র প্রক্রিয়া। বিপাকে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নতুন কোম্পানি নিয়োগ তো হয়নি; বরং আদালতের নির্দেশে পুরনো কোম্পানিকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হয়।

এরপর ক্ষুব্ধ বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো বিল পরিশোধ করা হবে না। আর ঠিকাদারও কৌশলগত কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। পাঁচ মাসে তাদের প্রায় ২ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে বলে দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। এই অবস্থায় আটকে গেছে শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও। তাই উপায়ন্তর না দেখে বকেয়া টাকা আদায়ের দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেন শ্রমিকরা। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম বকেয়া টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম লিমিটেডের বেনাপোল প্রতিনিধি সুলতান আহম্মেদ বাবু বলেন, ‘গত জুলাই মাস থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো বিল পরিশোধ করছে না। বারবার বিল পরিশোধের কথা বলা হলেও আমাদের কোনো কথা তারা শুনছে না। এদিকে আমরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ নুরুজ্জামান বলেন, ‘শত শত কনসাইনমেন্টের সরকারি শুল্ক পরিশোধ করেও আমরা পণ্য খালাস নিতে পারছি না। এর সম্পূর্ণ দায় বন্দর কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষকান্তি দাস বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দরে গত দুই দিন ধরে ইকুইপমেন্ট সাইটের সমস্ত ধরনের পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ করে রেখেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অনেক আগেই বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি শেষ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি নবায়ন করেনি। সেই কারণে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের নামে উচ্চ আদালতে একটি মামলা করে। ওই মামলায় উচ্চ আদালত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বন্দরের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে রায় দেয়।’

প্রিয় সংবাদ/রিমন