রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মৃত-নিখোঁজদের সঠিক সংখ্যা কত?

তানজিল রিমন
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০১৩, ১১:১১
আপডেট: ২৫ মে ২০১৩, ১১:১১

এক মাস পূর্ণ হয়েছে সাভারের রানা প্লাজা ধসের। গত ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ে। উদ্ধারকারীদের হিসাব অনুযায়ী, নিহত হয়েছে ১ হাজার ১ শ ২৭ জন। তাদের মধ্যে ৮ শ ৩৬ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার হয়েছে ২ হাজার ৪ শ ৩৮ জনকে। এদের মধ্যে আহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। এদের অনেকে তাদের হাত হারিয়েছে, পা হারিয়েছে, কারো হয়তো মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। বেঁচে থাকা তাদের জন্য এখন শুধু কষ্টই নয়। বরং ধুকে ধুকে মারা যাওয়া! আসলে এখন তাদের কী হবে? তার কিংবা তার পরিবারের ভরণ-পোষণ কেমনে চলবে? মৃতের সংখ্যা কী আসলেই ১১২৭ জনে সীমাবদ্ধ? ভবন ধসে পড়ার পর অনেকেই বলেছিল, এতে হয়তো ৩/৪ শ লোক মারা যেতে পারে। আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, কমপক্ষে ১ হাজার মারা গেছে! শেষ পর্যন্ত হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু এর সঠিক হিসাব কী মিলেছে? যে লাশগুলো মিশে গেছে কিংবা এই যে যারা নিখোঁজ রয়েছে, তারা কোথায় গেল? অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এখনও ৩১৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। যাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এদের পরিবারের কী হবে? এদের পরিবারের অনেক সদস্য এখনও সাভারের রানা প্লাজার সামনে ভিড় করছেন। তাদের স্বজনের অপেক্ষায়। কিন্তু স্বজন কী ফিরে আসবে? এছাড়াও পোশাক কারখানায় এমন অনেকেই ছিল, যাদের পরিবার বলতে কেউ নেই। কিংবা থাকলেও বাড়ি থেকে রাগ করে চলে এসেছে ঢাকায়। বাড়িতে শুধু জানে, কোনো গার্মেন্টসে কাজ করে তাদের মেয়ে কিংবা ছেলেটি। এখন আমার কথা হলো, এমন যারা ছিল তাদের খবর কে দিবে? যাদের আত্মীয়-স্বজন আছে, খোঁজে পাচ্ছে না, তারা ভিড় করছেন রানা প্লাজার সামনে কিন্তু যার কেউ নেই, তার খোঁজ নিতে কে আসবে? সে বেঁচে আছে নাকি রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপে হারিয়ে মিশে গেছে? এই খবরটি কে নিবে? নিখোঁজের সংখ্যা আসলে কত? ৩১৬ নাকি এরচেয়েও বেশি? এর নিশ্চয়তা চাই। একটা পোশাক কারখানায় কতজন কাজ করে, এই তথ্য কেন থাকবে না? না থাকার কোনো কারণও নেই। থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে সঠিক সংখ্যাটি কত? কতজন কাজ করছিল রানা প্লাজার পোশাক কারখানাগুলোয়? এই সঠিক তথ্যটি এখনও পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ ৩১৬ এর নিশ্চয়তাও নেই। আমার আশঙ্কা, নিখোঁজদের সংখ‌্যা এর থেকে বেশিই হবে। প্রতিটি পোশাক কারখানায় কর্মী নিয়োগের সময় এবং নিয়োগের পরে তাদের তালিকা থাকে নিশ্চয়। এই তালিকাটি সরকার সংগ্রহে রাখতে পারে। কিংবা পোশাক শ্রমিকদের কোনো সংগঠন থাকা উচিত, যেখানে এই সঠিক সংখাটা থাকবে। তাহলে ষড়যন্ত্র করায় আগুন লাগুক কিংবা ঝাঁকুনি দেয়ায় ভবন ধসে পড়ুক, তাতে অন্তত কতজন শ্রমিক ছিল, তার সংখ্যাটা পাওয়া যায়। তাহলে কতজন জীবিত উদ্ধার, কত জনের লাশ পাওয়া গেল, কতজনের পাওয়া যায়নি, মারা গেছে কিন্তু লাশ পাওয়া যায়নি তা নিশ্চিত হওয়া যাবে সহজেই।