ছবি সংগৃহীত

রঙে রঙিন কামরাঙ্গা

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০১৩, ১৫:৩৪
আপডেট: ২৭ জুন ২০১৩, ১৫:৩৪

বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত ফল হলো কামরাঙ্গা। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি খেতে অনেকেই খুব পছন্দ করেন। ফল হিসেবে তো বটেই কোনো কোনো অঞ্চলে কামরাঙ্গার তরকারি রান্না করেও খাওয়া হয়। কামরাঙ্গার টক, চচ্চড়ি বা মাছের ঝোল বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে খুব জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু জায়গায় কাঁচা কামরাঙ্গার সাথে আপেল ও চিনি দিয়ে রান্না করে খাওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়াতে কামরাঙ্গা সবজি হিসেবে এবং আচার বানিয়ে খাওয়া হয়। জ্যামাইকাতে পাকা কামরাঙ্গা শুকিয়ে খাওয়ার চল রয়েছে এবং এই পদ্ধতিতে কামরাঙ্গা সংরক্ষণও করা হয়। হাওয়াই ও ভারতে কামরাঙ্গার জুস বেশ জনপ্রিয়। পাকা কামরাঙ্গা দিয়ে আচার, সস, জেলি, ওয়াইনও তৈরি করা হয়।

কামরাঙ্গার আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়া। বাংলাদেশে কামরাঙ্গার চাষ না হলেও যুক্তরাষ্ট্র, মালয়শিয়া, ভারত, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে এর চাষ হয়। কামরাঙ্গার ইংরেজি নাম Carambola। কোথাও কোথাও একে Starfruit নামেও ডাকা হয়। কামরাঙ্গার বৈজ্ঞানিক নাম Averrhoa carambola Linn। কামরাঙ্গা চিরসবুজ গাছ। ঘন ডালপালা এবং ছোট ছোট পাতার এই গাছটি লম্বায় প্রায় ১৫-২০ ফুট উঁচু হয়। কামরাঙ্গার ফুল দেখতে খুবই সুন্দর। গাছ লাগানোর ৩-৪ বছরের মধ্যেই গাছে ফুল চলে আসে। জুন মাসের শুরুর দিক থেকেই গাছে ফুল ফোটা শুরু হয়। গাঢ় গোলাপি রঙের অসংখ্য ছোট ছোট ফুলে ছেয়ে যায় ডাল। উজ্জ্বল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে গোলাপি রঙের ফুল খুবই চমত্‍কার দেখায়। ফল আসা শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাস থেকে। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। ফলে পাঁচটি খাঁজ থাকে। পুরো ফলটাই ভক্ষণযোগ্য। ফলের ভেতর ছোট ছোট, লম্বাটে পিচ্ছিল বীজ থাকে। অন্যান্য আর সব ফলের মতোই কামরাঙ্গাও পুষ্টিগুণের আধার। এতে রয়েছে মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম কামারাঙ্গার খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে -
খাদ্যশক্তি- ৩১ কিলোক্যালরি শর্করা- ৬.৭৩ গ্রাম চিনি- ৩.৯৩ গ্রাম খাদ্যআঁশ- ২.৮ গ্রাম চর্বি- ০.৩৩ গ্রাম আমিষ- ১.০৪ গ্রাম প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.৩৯১ মিলিগ্রাম ফোলেট- ১২ আইইউ ভিটামিন সি- ৩৪.৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ১৩৩ মিলিগ্রাম জিংক- ০.১২ মিলিগ্রাম থায়ামিন- ০.০১৪ আইইউ রিবোফ্লেভিন- ০.০১৬ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ০.৩৬৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.০১৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই- ০.১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম- ৩ মিলিগ্রাম আয়রন- ০.০৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ১২ মিলিগ্রাম ম্যাংগানিজ- ০.০৩৭ মিলিগ্রাম সোডিয়াম- ২ মিলিগ্রাম
পুষ্টিগুণের পাশাপাশি কামরাঙ্গার রয়েছে বেশ কিছু ভেষজ গুণও। যেমন -
  • কামরাঙ্গার কচি পাতা ও ফল পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি পান করলে বমি বন্ধ হয়।
  • গাছের পাকা পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে খেলে কৃমি নিরাময় হয়।
  • কাঁচা কামরাঙ্গা পুড়িয়ে খেলে সর্দি-কাশির উপশম হয়।
  • কামরাঙ্গা গাছের মূল বিষনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • পাকা কামরাঙ্গার রস অতিরিক্ত ঘাম, পেট ব্যথা, কফ ও বাতের প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।