ছবি সংগৃহীত

মুখে আলপনা পহেলা বৈশাখে

Tahmina Sultana Chhanda
লেখক
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৩, ১৯:১০
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৩, ১৯:১০

বৈশাখ বাঙালির জীবনে সবচেয়ে আনন্দের একটি দিন। এ দিনটিতে যেন উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে জীবন। নববর্ষ বাঙালির জীবনে উৎসব নিয়ে আসে। ওই উৎসব শহর থেকে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সবাই এক সাজে, এক গানে, একই পান্তা ইলিশ মেন্যু ..... আসলে সবাই এদিন এক !ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে উৎসবটি হয়ে ওঠে মাটি ও মানুষের। বৈশাখের এই প্রথম দিনটি ঢাকার রাজপথ যেমন আলপনায় রঙিন রূপ ধারণ করে তেমনি রঙিন হয়ে ওঠে মানুষের মুখও। শিশু, কিশোর, তরুন, তরুনী, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা সবাইকে দেখবেন এই দিনে মুখে আলপনা এঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাশেই জোড়ায় জোড়ায় ছেলে-মেয়েরা আছে আগ্রহীদের মুখে আলপনা এঁকে দেওয়ার অপেক্ষায়। সেখানেও ভিড় কম নয়, ছোটখাটো লাইনে দাঁড়িয়ে তরুণ-তরুণী ও বাচ্চারা আনন্দ মনে নিজের পছন্দমত আলপনা করে নিচ্ছে মুখের এপাশ-ওপাশে। বেশিরভাগ আলপনায় লেখা হচ্ছে 'শুভ নববর্ষ'। মনের ভেতরকার সব অনুভূতি , দেশের জন্য ভালোবাসা আর সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রকাশের উপলক্ষ ধারণ করে এই আলপনা। ছোট ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীদের মুখ যেন হয়ে ওঠে শিল্পীর ক্যানভাস। রং-তুলি দিয়ে তাতে আঁকা হয় নানা নকশা। এই মুখে আলপনারই আরেক নাম মুখচিত্র। পয়লা বৈশাখের এই আলপনায় বাংলাদেশের পতাকা, হাত পাখা, শুভ নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ লেখা নকশা, ঢোল-একতারা, বাংলার বাঘ সবই আসছে মুখচিত্রের বিষয় হিসেবে। দেশের জন্য, আমাদের সংস্কৃতির জন্য অন্তরের ভালোবাসা তো আছেই শতভাগ। সেই ভালোবাসা যেন প্রতীকী রূপ নিয়ে আরও বেশি রঙিন হয়ে ধরা দেয় এই মুখচিত্রে। মুখচিত্রের ইতিহাস- প্রাচীন গুহাচিত্রে মুখে রং চং মাখা অনেক মানুষের ছবি দেখা যায়। আবার অনেক আদিবাসী গোষ্ঠীও মুখে রং দিয়ে নানা নকশা আঁকে। নানা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে তৈরি হতো সেই সব রং। সেদিক থেকে মুখচিত্রের ইতিহাস অনেক পুরোনো বলা যায়। অনেক দেশেই মুখে রং দিয়ে নকশা করার চল আছে। মুখমণ্ডলকে চিত্রপট হিসেবে ব্যবহার করার এই কায়দা তাই খুব নতুন কিছু নয়। ফেস আর্ট বা ফেস পেইন্টিং নামে সেটা পরিচিত। বাংলায় তা হয়েছে মুখচিত্র। আমাদের দেশে ঠিক কবে থেকে চালু হয়েছিল মুখচিত্রের এই রেওয়াজ, তা বলা মুশকিল তো বটেই। তবে সেটা খুব পেছনের কথা নয়। বড়জোর বছর দশেক। বিভিন্ন বিশেষ উপলক্ষ পালনের জন্যই এর প্রচলন হয়। মুখচিত্রের আঁকিয়ে যারা- আমাদের দেশে মুখচিত্র প্রচলনের কৃতিত্বটা দিতে হবে চারুকলায় পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের। নানা উপলক্ষে রোদে দাঁড়িয়ে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে তারা মুখে ফুটিয়ে তুলেছে নানা নকশা। এখন অবশ্য চারুকলার বাইরের অনেক ছেলেমেয়েও তা করছে। যারা আলপনা এঁকে দিচ্ছেন তাদের এই সুবাদে ছোটখাটো কিছু আয়ও হয়ে যাচ্ছে একটি আনন্দঘন এবং আবেগতাড়িত কাজের মাধ্যমে। রং-তুলিতে নকশা আঁকি- এসব ছবি আঁকার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রং-তুলির প্রয়োজন হয়। মুখে ছবি আঁকার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ফেব্রিক কালার। এ ছাড়া অ্যাক্রোমিন রং অথবা প্লাস্টিক রঙের মাধ্যমেও আঁকা যায়। যথেষ্ট কম দামে এসব রং পাওয়া যায়। ফেব্রিক রঙের ছোট কৌটা ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে, অ্যাক্রামিন রং প্রতিকৌটা ২০ থেকে ৫০ টাকা, অ্যাক্রলিক রং প্রতি টিউব ৫০ থেকে ১৫০ টাকা এবং প্লাস্টিক রং ৩০ থেকে ১৮০ টাকায় পাওয়া যায় বিভিন্ন রঙের মার্কেটে। এবারের পয়লা বৈশাখেও পথে নামলে রং-তুলি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এমন বেশ কিছু শিল্পী পেয়ে যাবেন। রমনা তো বটেই, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত ছোট-বড় মেলাগুলোতেও নিশ্চিতভাবেই থাকছে মুখচিত্রের আয়োজন। আপনি তাই চাইলেই হয়ে উঠতে পারবেন বৈশাখের রঙে পুরোদস্তুর রঙিন। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। মুখে পানির ঝাপটা দিলেই রং উঠে যাবে।