
ছবি সংগৃহীত
মিশরের রহস্যময় বর্ণমালাঃ হায়ারোগ্লিফ
প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০১৩, ১৫:২৪
আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৩, ১৫:২৪
আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৩, ১৫:২৪
প্রাচীন পৃথিবীর খুব রহস্যময় এবং প্রগতিশীল মিশরীয় সভ্যতার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে অনেকেরই এবং মিশরের নাম শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে পিরামিড বা মমির ছবি। আরও একটি জিনিস রয়েছে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে মিশরীয় সভ্যতার সাথে আর তা হল প্রাচীন পুঁথি রচনার বর্ণমালা হায়ারোগ্লিফ। ছবির মাধ্যমে ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত মানবসভ্যতার প্রথম লিখিত ভাষা এটি। শুধু মিশরীয় সভ্যতাই নয় বরং মায়ান এবং সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শনেও ছবির মাধ্যমে ভাব প্রকাশের জন্য হায়ারোগ্লিফস এর ব্যবহার দেখা যায়। হায়ারোগ্লিফ শুধু আমাদের জন্য বিস্ময়ের ব্যাপার নয় বরং এ থেকে প্রাচীন মিশরের শাসনব্যবস্থা, সামাজিক স্তরবিন্যাস, ধর্মকর্ম এসব ব্যাপারে অনেক তথ্য লাভ সম্ভব হয়েছে।

ইতিহাসঃ
হায়ারোগ্লিফ শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ “হায়ারোগ্লিফিকোস” থেকে যার মানে হল “পবিত্র খোদাইকৃত বর্ণমালা”। মিশরীয় শব্দ “মেডু-নেটজার” এর অনুবাদ হল এটি যার অর্থ “ঈশ্বরের কথা”। মনের ভাব প্রকাশের জন্য বর্ণমালার পরিবর্তে ছবি এঁকে কোনও বিষয় বা পরিস্থিতি বর্ণনা করা হত এর মাধ্যমে। পরিচিত বস্তুগুলোর ছবি ব্যবহার করা হত এই পদ্ধতিতে। কখনো কখনো অবশ্য আধুনিক বর্ণমালার মতও আলাদা বর্ণ ব্যবহার করা হত। হায়ারোগ্লিফের মাধ্যমে বর্ণনা করা হত কোনও বিশেষ ঘটনা, ধর্মীয় বিশ্বাস এমনকি দৈনন্দিন ঘটনাগুলো। ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ সালের দিকে প্রথম এই ভাষা ব্যবহার করা শুরু হয়। লেখার জন্য সবাই এই বর্ণমালা ব্যবহার করতে পারতো না। শুধুমাত্র লিপিকার এবং পুরোহিতরা এর ব্যবহার করতেন। এই লেখার কাজ করতে গিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হত লিপিকারদের কারণ ছবি ব্যবহার করে লেখার কাজটা বেশ সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য। প্যাপিরাসে লেখার সময়ে তারা হায়ারোগ্লিফের আরেকটি রূপ ব্যবহার করতেন যা হল হায়ারাটিক। এর মাধ্যমে কিছুটা দ্রুত লেখা যেত। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সালের দিকে আরও পরিবর্তিত হয়ে হায়ারোগ্লিফ থেকে জন্ম হয় ডেমোটিক পদ্ধতির। আমরা এখন যে বর্ণমালা ব্যবহার করি এই পদ্ধতির সাথে অনেকটাই মিল ছিল ডেমোটিক এর এবং বিভিন্ন শব্দের জন্য বিভিন্ন বর্ণ ব্যবহার করা হত। আর তিনশ খ্রিষ্টাব্দের দিকে প্রচলিত হয় আরেকটি রূপ যাকে বলা হয় কপ্টিক। ডেমোটিক এবং গ্রীক বর্ণমালার ব্যবহার হত এই ভাষায়। ১৩শ শতাব্দীর দিকে কপ্টিক উঠে গিয়ে প্রচলন হয় আরবি ভাষার।
হায়ারোগ্লিফের অনুবাদঃ
হায়ারোগ্লিফের অর্থ উদ্ধারের জন্য অনেক চেষ্টা করেও সফল হচ্ছিলেন না গবেষকরা। হায়ারোগ্লিফিকের মর্মোদ্ধারে সমস্যা হবার কারণ হল, একই ছবি দিয়ে অনেক কিছু বোঝানো যেত। যেমন একই পুঁথির মাঝে চোখের ছবি দিয়ে “চোখ” এবং “দর্শন” উভয় বোঝানো হত। ৭০০ শব্দের এই বর্ণমালায় নেই কোনও স্বরবর্ণ বা দাঁড়ি-কমা। অবশ্য একধরণের শব্দ দিয়ে বাক্যের শেষ নির্দেশ করা হত। হায়ারোগ্লিফ পড়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও দিক ছিল না। ডান থেকে বামে, বাম থেকে ডানে, ওপর থেকে নিচে বা নিচ থেকে ওপরে- যেকোনো ভাবে একে পড়া হত।পরে ১৭৯৯ সালে এক ফরাসী গবেষক এমন একটি পাথর খুঁজে পান যাতে খোদাই করা ছিল তিন ভাষার লেখা। রোসেটা নামের এলাকার কা���ে পাওয়া যায় বলে এর নাম দেওয়া হয় রোসেটা স্টোন। এই তিনটি ভাষা হল হায়ারোগ্লিফ, গ্রীক এবং ডেমোটিক। গ্রীক লেখাটিকে ব্যবহার করে বাকি লেখাগুলোর মর্মোদ্ধার করা সম্ভব হয়।
হায়ারোগ্লিফের ধরনঃ
তিন ধরণের বর্ণ ব্যবহার করা হত হায়ারোগ্লিফ লেখার সময়। পিক্টোগ্রাম বা ইডিওগ্রাম হল সেই সব বর্ণ যেখানে একটা বস্তু আঁকার মাধ্যমে সেই বস্তুকে বা তার অর্থকে নির্দেশ করা হত। যেমন পিক্টোগ্রাম হিসেবে একটা সিংহ আঁকা থাকলে তার অর্থ হল সেখানে একটা সিংহ এসেছিলো অথবা ইডিওগ্রাম হিসেবে ব্যবহার করলে তার অর্থ হল সাহসিকতা। ফোনোগ্রাম হল আরেক ধরণের বর্ণ যা অনেকটা আধুনিক বর্ণের মতো ব্যবহার করা হত অর্থাৎ একেকটা শব্দের জন্য আলাদা আলাদা বর্ণ। ১০০ টি ফোনোগ্রাম ছিল কিন্তু এর মধ্যে ২৪ টি বেশি ব্যবহার করা হত বলে ধারণা করা হয়। লেখার সময়ে পিক্টো-ইডিওগ্রাম এবং ফোনোগ্রাম দুটোই ব্যবহার করা হত একসাথে। আরেকটি উপাদান ছিল এই বর্ণমালায় আর তা হল Determinative। একটি বাক্যের শেষে এই বর্ণ বসানো হত এবং তা থেকে বোঝা যেত ওই বাক্যে কি নিয়ে কথা বলা হচ্ছিল। উদাহরণস্বরূপ, কোনও বাক্যের শেষে যদি কোনও মানুষের ছবি থাকতো তবে তার মানে হল ওই বাক্যে সেই মানুষটিকে নিয়ে কথা হচ্ছিল।
হায়ারোগ্লিফের বিখ্যাত সব নমুনাঃ
মিশরীয় লিপিকার এবং পুরোহিতরা প্যাপিরাস, সমাধিস্তম্ভ, ভাস্কর্য এমনকি যে ছোট ছোট পাথরের ওপরে লিখে রাখতেন হায়ারোগ্লিফ। গবেষকদের পাওয়া বিখ্যাত কিছু হায়ারোগ্লিফের নমুনার মধ্যে রয়েছে রোসেটা স্টোন যা পাওয়া যায় উত্তর মিশরের রোসেটা নামক স্থানের কাছে। ধারণা করা হয় এর লেখাগুলো খ্রিস্টপূর্ব ১৯৬ সালের। মিশরীয় রাজা তুতানখামুনের সমাধির দেয়ালেও প্রচুর পরিমাণে হায়ারোগ্লিফ লেখা পাওয়া যায়। এর একেকটা দেয়ালে লেখা হায়ারোগ্লিফ একেক রকম অর্থ প্রকাশ করে। পূর্ব দেয়ালে পাওয়া যায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মিছিলের দৃশ্য। দক্ষিণ দেয়ালে আছে তুতানখামুনের পাতালপুরীতে আগমনের চিত্র। আর উত্তর দেয়ালে তার পরকালের ছবি। প্রাচীন মিশরীয়দের পরকাল সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণার আঁচ পাওয়া যায় এগুলো দেখলে। আরেকটি বিখ্যাত নিদর্শন হল ক্লিওপেট্রার সুঁই (Cleopetra's Needle) । এর নামটা অবশ্য ভুল কারণ সুঁচালো এই তিনটা স্তম্ভ ক্লিওপেট্রার রাজত্বকালের অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান। লন্ডন, নিউ ইয়র্ক এবং প্যারিসে রাখা আছে এই তিনটি স্তম্ভ।- ট্যাগ:
- বিজ্ঞান
- ইতিহাস
- মিশরীয় সভ্যতা
২৮ মিনিট আগে
৩১ মিনিট আগে
৩ ঘণ্টা, ৬ মিনিট আগে