ছবি সংগৃহীত

বিখ্যাত সব হীরাগুলো!

monali khan
লেখক
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০১৩, ২২:৫১
আপডেট: ০১ জুন ২০১৩, ২২:৫১

হীরা!নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে দুত্যিময় চোখ ধাঁধানো এক টুকরো পাথর। কালো রঙের কার্বন থেকে পরিণত সাদা,কখনও বা গোলাপী, নীল কিংবা হলুদ আভার এক টুকরো বর্ণিল আলোকছটা। দেখতে যেমন, এর দামটা ও তেমনি সাধারনের নাগালের বাইরে। আবার সাধারনের নাগালে আনতে প্রাকৃতিক হীরার বদলে কৃত্রিম হীরারও প্রচলন ঘটেছে। আসলে কিন্তু হীরার এই চাহিদা আর দামের বিশাল ফারাকের জন্য মূলত দায়ী প্রকৃতি নিজে। কোন খনিতে লুকিয়ে আছে কোন দুর্লভ টুকরোটি,আর কখনই বা তা শোভা পাবে কোন রাজা-রানীর মুকুটে,সবার কাছেই তা অজানা। তাই নতুন হীরার টুকরো মানেই নতুন কোন ইতিহাসের হাতছানি। আসুন এবার আমরা ঘুরে আসি এমনই কিছু হীরারা রাজ্য থেকে।

The Cullinan Diamond-

হীরার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচাইতে বড় টুকরো হল এই Cullinan Diamond। খনি থেকে উত্তোলনের পর এর ওজন ছিল প্রায় ৩১০৭ ক্যারেট। পরে একে কেটে ১০০টি নানা আকারের ছোট বড় টুকরো করা হয়। এর নবম বৃহত্তম টুকরোটিও আছে ব্রিটিশ রাজপরিবারের মালিকানা‍য়।

Koh-i-Noor Diamond-

১০৫ ক্যারেট ওজনের রত্নটি নানা হাত ঘুরে সবার শেষে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্পত্তি বলে ইতিহাসে নাম লেখায়। ১৯৩৭সালে ব্রিটেনের বর্তমান রানী এলিজাবেথের মায়ের রাজ্য অভিষেকের সময়ে তাঁর মুকুটে শোভা পায় এই বিখ্যাত রত্নটি। মুঘল সম্রাট বাবরের বাবর নামা গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। নিজের ছেলে আওরঙ্গজেবের হাতে আটক হয়ে সম্রাট শাহজাহান বন্দী ছিলেন আগ্রা দুর্গে। জীবনের শেষ আটটি বছর তিনি এখানেই অতিবাহিত করেন। কথিত আছে যে, দুর্গের এক জানালায় স্থাপিত এই কোহিনূর হীরায় প্রতিফলিত তাজমহলের সৌন্দর্য উপভোগ করতেন তিনি।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় একে একে ভারতবর্ষের নানা সুলতান, রাজা-মহারাজার হাত ঘুরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পাঞ্জাব দখলের পরে এর তৎকালীন মালিক পাঞ্জাবের ভবিষ্যৎ মহারাজা রণজিৎ সিং এর মালিকানা থেকে কুইন ভিক্টোরিয়ার মালিকানাধীনে আসে কোহিনূর। রানীকে খুশি করতে উপহার স্বরূপ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের ২৫০ বছর পূর্তিতে ১৮৫০ সালে ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেয় এই কোহিনূর হীরা। তখন থেকেই ইংল্যান্ডের রাজপরিবারে, রানির মুকুটে শোভা পাচ্ছে এই চরম মূল্যবান রত্নটি। আরেকটি কথা সবারই কম বেশি জানা আছে নিশ্চয়। বলা হয়ে থেকে এর প্রত্যেক মালিককেই চরম দুর্ভোগের মোকাবেলা করতে হয়েছে। এই বিশ্বাসে সম্রাট আকবর তার ধন ভাণ্ডারের বাইরে কখনই কোহিনূরকে তাঁর সাথে রাখেননি। এমনকি প্রাচীন ভারতের পুরনো এক পান্ডুলিপিতে(১৩০৬)এই বিষয়ে বলা আছে “যে এই অমুল্য রত্নের মালিক হবে,সে পুরো পৃথিবীর মালিক হবে। কিন্তু একই সাথে এর মূল্য শোধ করবার জন্যেও তাঁকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এই রত্ন একমাত্র ঈশ্বর কিংবা কোন পবিত্র নারীর জন্যই কেবল যথার্থ"। হয়তোবা এই জন্যই কুইন ভিক্টোরিয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের শুধুমাত্র রানীদের মাথার মুকুটে শোভা বাড়াচ্ছে এই কোহিনূর। "মহান দৈবদুর্বিপাক" দূরে থাকতে রাজপরিবারের পুরুষেরা একে একটু যেন দূরে রাখতেই পছন্দ করেন।

The Dresden Green-

৪১ ক্যারেটের এই প্রাকৃতিক সবুজ হীরাটি তার রঙের জন্য বিখ্যাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সবুজ ভল্টে লক করে রাখা হয় এই রত্নটি। রাশিয়ান বাহিনীর হাত থেকে একে সুরক্ষাই ছিল এর উদেশ্য।

The Hope Diamond-

ধারনা করা হয় যে প্রায় ১.১ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর বুকের ভেতর এর জন্ম। নামী-দামী সব রত্নের ভিড়ে হোপের নাম সবারই জানা। ইন্ডিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন হয়ে এর বর্তমান আবাসস্থল আমেরিকার ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি। ওজন(৪৫.৫২ ক্যারেট),কাট,আর বর্ণিল নীল রঙের চাইতেও হোপের প্রতি মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারন এর অভিশপ্ত ইতিহাস।
বলা হয়ে থাকে যার কাছেই হোপ গেছে, তার সর্বনাশ হতে বেশি দেরি লাগেনি। এর প্রাক্তন মালিক এভিলিন ওয়ালশ ম্যাকলিন একে তাঁর সবচাইতে লাকি চার্ম বলেছিলেন। যদিও এর মালিকানা অর্জনের ঠিক কিছু দিন পরেই তার ছেলে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়, স্বামীর সাথে তাঁর তালাক হয়ে যায় এবং পাগল হয়ে পরে মারা যাযন তাঁর স্বামী। সেই সাথে তাঁর মেয়েও আত্মহত্যা করে, এভিলিন নিজে মরফিনে আসক্ত হয়ে পরেন। এভিলিনের মৃত্যুর পরে তাঁর সমস্ত অলংকারের সাথে সাথে হোপের নতুন মালিক হন রত্ন ব্যবসায়ি হ্যারি উইনস্টন। পরবর্তীতে তিনিই ১৯৫৯ সালে একটি সাধারন খামে করে আমেরিকার Smithsonian National Museum of Natural History মিউজিয়ামে এই রত্নটি দান করেন। না, কোন অভিশাপের ভয়ে নয়, তিনি আমেরিকার জাতীয় সংগ্রহকে আরও বেড়ে উঠতে সাহায্য করার উদেশ্য নিয়েই এই কাজটি করেন বলে জানা যায়।

The Cora Sun-Drop Diamond-

১১০ ক্যারেটের এই দুর্লভ হলুদ ডায়মন্ডটি ২০১১ সালে দামি রত্নের ইতিহাসে ১১ মিলিয়ন ডলারের নতুন রেকর্ড গড়ে। ২০১০ সালে আফ্রিকার খনিতে পাওয়া এই হীরাটি প্রায় ১-৩ বিলিয়ন বছর ধরে নিজেকে তৈরি করেছে বলে মনে করা হয়। এর নতুন মালিককে ১১ মিলিয়ন মুল্যের বিপরীতে ট্যাক্স দিতে হয়েছে প্রায় আরও ১২.৩৬ মিলিয়ন ডলার। এক টুকরো সূর্য কেন বলা হয় একে? ছবিতে একবার দেখেই নিন না।

The Graff Pink-

২৪ ক্যারেটের এই গোলাপী হীরাটি প্রায় $ ৪৬ মিলিয়ন ডলারে ২০১০ সালে Laurence Graff কেনেন। এবং কেনার পরে তার নিজ নামে নামান্তর করে রাখেন গ্রাফ পিঙ্ক।