ছবি সংগৃহীত

ফ্লাইওভারে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চায় ডিএসসিসি

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১২:৪৯
আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১২:৪৯

গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) ফ্লাইওভারে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত ১৭ নভেম্বর জারি করা এক রুলের জবাবে আদালতে এ দাবি জানায় সংস্থাটি। চুক্তি ভঙ্গ করে উদ্বোধনের প্রথম দিন থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে অতিরিক্ত টোল আদায় করছে ওরিয়ন গ্রুপ। এজন্য দুই দফা চিঠি দেয়া হলেও তা বন্ধ করা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী সত্যরঞ্জন মণ্ডল, এম সাইফুল আলম ও মো. রুহুল কুদ্দুস পাটওয়ারী জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। রিটের শুনানি শেষে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে রুল জারি করেন আদালত। রুলের জবাবে হাইকোর্টকে ডিএসসিসি জানায়, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের কোনো অধিকার ওরিয়নের নেই। কারণ ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ওরিয়নের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এর টোলের হার নির্ধারণের ক্ষমতা একমাত্র ডিএসসিসির। কিন্তু ডিএসসিসির অনুমতি ছাড়াই অতিরিক্ত টোল আদায় করছে ওরিয়ন। এটা বন্ধে তাদের কয়েক দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে তা মানছে না ওরিয়ন। তাই ফ্লাইওভার থেকে আদায় করা অতিরিক্ত টোল আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও সম্পূর্ণ অবৈধ। এছাড়া ওরিয়নের এ ধরনের কার্যক্রম সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নতুন প্রকল্প গ্রহণে সিটি করপোরেশনকে নিরুত্সাহিত করবে। আদালতে দাখিল করা জবাবে ডিএসসিসি আরো বলেছে, ২০১১ সালের স্থানীয় সরকার সংশোধিত আইনের আওতায় গঠিত ডিএসসিসির দায়িত্ব নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। তাই নাগরিক অধিকার রক্ষায় অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে হাইকোর্ট প্রয়োজনীয় রায় দেবেন বলে প্রত্যাশা করে ডিএসসিসি। ডিএসসিসির আইন কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে জনস্বার্থে দায়ের করা রিটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এর জবাব দেয়া হয়েছে। ওরিয়ন চুক্তি ভঙ্গ করে অতিরিক্ত টোল আদায় করছে। আশা করা যায়, জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে হাইকোর্ট এ বিষয়ে রায় দেবেন। জবাবের সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মামলা ও আইনি কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত নীতিমালা, ফ্লাইওভার নির্মাণে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ওরিয়নের সম্পাদিত চুক্তি এবং অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে ওরিয়নকে পাঠানো ডিএসসিসির চিঠির সত্যায়িত অনুলিপি জমা দেয়া হয়। প্রসঙ্গত, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে অতিরিক্ত টোল আদায় কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না— তা জানতে চেয়ে গত ১৭ নভেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ফ্লাইওভারে ‘অতিরিক্ত হারে’ টোল আদায় বন্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না— রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচাপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। সড়ক বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব; ঢাকার জেলা প্রশাসক, ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এক সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রুলের জবাব দেয় ডিএসসিসি। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, ওরিয়ন অতিরিক্ত টোল আদায় করছে— এটা সঠিক। নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধির যুক্তিতে তারা টোল হার বৃদ্ধি করেছে বললেও বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় সেখানেই সমাধান করা হবে। জানা গেছে, ২০০৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী— ফ্লাইওভারটিতে মোটরসাইকেলের টোল ৫ টাকা, অটোরিকশা ১০, কার ৩৫, জিপ ৪০, মাইক্রোবাস ৫০, পিকআপ ৭৫, মিনিবাস ও চার চাকার ট্রাক ১০০, বাস ও ছয় চাকার ট্রাক ১৫০ এবং ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান ২০০ টাকা। ২৪ বছরের জন্য টোলের এ হার বহাল থাকবে। প্রকল্পটির দরপত্র চূড়ান্ত করার সময় এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই করেন ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম, ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্কালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী। কিন্তু গত ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর থেকে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ৭০-১০০ শতাংশ বেশি টোল আদায় করছে ওরিয়ন। বর্ধিত হার অনুযায়ী, মোটরসাইকেলের টোল ১০ টাকা, অটোরিকশা ১৮, কার ৬০, জিপ ৭০, মাইক্রোবাস ৮৫, পিকআপ ১৩০, মিনিবাস ও চার চাকার ট্রাক ১৭৩, বাস ও ছয় চাকার ট্রাক ২৬০ এবং ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান থেকে ৩৪৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুই দফা চিঠি দিলেও তা মানছে না ওরিয়ন গ্রুপ। এদিকে নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দফায় দফায় ফ্লাইওভারের ব্যয় বাড়িয়ে চলেছে ওরিয়ন। ২০০৩ সালে ফ্লাইওভারটির ব্যয় ধরা হয় ৬৬৮ কোটি টাকা। ২০১০ সালে নির্মাণ শুরুর সময় তা এক দফা বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা করা হয়। পরে ২০১২ সালে তা আরো বাড়িয়ে ২ হাজার ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা করা হয়। ২০১৩ সালের জুনে ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৪০৮ কোটি ৫৪ লাখ ও অক্টোবরে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা দাবি করে ওরিয়ন। অতিরিক্ত এ ব্যয় অনুমোদনে ডিএসসিসি সম্মত না হওয়ায় আরবিট্রেশনে মামলা করে ওরিয়ন। এ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বর্ধিত টোল আদায় বন্ধে ডিএসসিসি যাতে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নিতে না পারে, সেজন্য গত বছর অক্টোবরে হাইকোর্টে আবেদন করে ওরিয়ন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ অক্টোবর ১২ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থের রিটের জবাবে হাইকোর্টকে এ কথা জানায় ওরিয়ন। তবে স্থগিতাদেশের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ প্রসঙ্গে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রকল্প দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের সময়সীমা এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে। তার পরও তারা সময় বৃদ্ধি করলে প্রয়োজনে আপিল বিভাগে আবেদন করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা হবে। ওরিয়নকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। তবে মামলায় জয়ী হয়ে অতিরিক্ত টোল বহাল ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ওরিয়ন গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিবারের মতো এবারো ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনে ব্যতিক্রম হবে না। আর জনস্বার্থের রিটের রায়ও ওরিয়নের পক্ষেই আসবে। অর্থাত্ অতিরিক্ত টোল আদায় বহাল থাকবে। উল্লেখ্য, বিল্ড ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে ডিএসসিসি। বিনিয়োগকৃত অর্থ মুনাফাসহ টোলের মাধ্যমে ২৪ বছরে তুলে নেবে ওরিয়ন। সূত্র: বণিক বার্তা