ছবি সংগৃহীত

পাকা জামের মধুর রসে

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ৩১ মে ২০১৩, ১০:৩৯
আপডেট: ৩১ মে ২০১৩, ১০:৩৯

গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে টক-মিষ্টি স্বাদের জাম খুব জনপ্রিয়। ছোট ছোট কালো কালো জাম বেশ লোভনীয় রসালো ফল। খাদ্য হিসেবে তো বটেই, ওষুধ হিসেবেও ব্যাপক সমাদর রয়েছে এই ফলের। জামের আদি নিবাস ভারতবর্ষ। পরবর্তীতে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃটিশ উপনিবেশগুলো জাম বেশি দেখা যায়। জামকে একেক জায়গায় একেক নামে ডাকা হয়। যেমন জাম্বুল, জাম্ভুল, জাভা প্লাম, জামুন, ডুহাট প্লাম, জ্যামসন প্লাম, কালো প্লাম, পর্তুগীজ প্লাম ইত্যাদি। তেলেগু ভাষায় একে ডাকা হয় নেরেন্দু পান্ডু, মালায়লাম ভাষায় নাভাল পাজহাম, তামিল ভাষায় নাভা পাজহাম এবং কানাড়া ভাষায় নেরালে হান্নু। ফিলিপাইনে জামকে বলা হয় ডুহাট।

বেশির ভাগ মানুষেরই ধারণা জামের ইংরেজি নাম Blackberry, আসলে তা নয়! জামের ইংরেজি নাম হলো Jambul। এর বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cumini এবং এটি Myrtaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। জামগাছ চিরসবুজ বৃক্ষ। এর পাতা বেশ চকচকে হওয়ায় আলংকারিক গাছ হিসেবেও জামগাছ লাগানো হয়। জামের পুষ্টিমূল্য অত্যধিক। এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অত্যন্ত বেশি। জামের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে - কার্বোহাইড্রেট- ১৫.৫৬ গ্রাম এনার্জি- ৬০ কিলোক্যালরি প্রোটিন- ০.৭২ গ্রাম ফ্যাট- ০.২৩ গ্রাম জলীয়- ৮৩.১৩ গ্রাম থায়ামিন- ০.০০৬ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন- ০.০১২ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ০.২৬০ মিলিগ্রাম প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.১৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.০৩৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি- ১৪.৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম- ১৯ মিলিগ্রাম আয়রন- ০.১৯ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ১৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ৭৯ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ১৭ মিলিগ্রাম সোডিয়াম- ১৪ মিলিগ্রাম

স্বাস্থ্যরক্ষায় জাম-

এসব পুষ্টিগুণের কারণে স্বাস্থ্যরক্ষায় জাম নানাভাবে সাহায্য করে। যেমন -
  • জাম রক্ত পরিষ্কার করে। ফলে রক্ত ও ত্বকের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ হয়। দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছিয়ে হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
  • চোখের নানা রোগ প্রতিরোধে জাম সাহায্য করে। বিশেষ করে চোখের ইনফেকশন ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে জামের তুলনা নেই।
  • জামে রয়েছে প্রচুর আঁশ যা পরিপাকতন্ত্রকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • জামে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের জন্য দায়ী ফ্রিরেডিক্যালস তৈরিতে বাধা প্রদান করে।
  • উচ্চ রক্তচাপ, মাঢ়ির রোগ, হজমের সমস্যা প্রতিরোধে জাম অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • জাম ডায়াবেটিস ও হরমোনজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • জামে উপস্থিত আনফ্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা হ্রাস করে।
  • জামে রয়েছে স্যালিসাইলেট নামক একটি উপাদান, যা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।
  • সর্দি-কাশি ও বাতরোগ প্রতিরোধে জাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে জামের যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

ভেষজগুণ-

খাদ্যগুণের পাশাপাশি জামের রয়েছে নানা ভেষজগুণ। বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় জাম, জামের বীচি ও গাছের নানা অংশ ঔষধি হিসেবে ইউনানী, আয়ুর্বেদ এবং চৈনিক চিকিত্‍সায় ব্যবহৃত হয়। যেমন -
  • জাম থেকে মদ ও সিরকা তৈরি হয় যা ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন-লিভার টনিক।
  • জামের বীজ বহুমূত্র রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • পাকা জামের রস সৌন্ধর্ব লবণ মিশিয়ে পান করলে দাস্ত, অরুচি ও বমিভাব দূর হয়।
  • কচি জামপাতার রস গরম করে পান করে খেলে আমাশয় সারে।
  • কাঁটা-ছেঁড়ার রক্তপাত বন্ধ করতে জামপাতার রস খুব ভালো কাজে দেয়।
  • জামপাতা সেদ্ধ করা পানি দিয়ে পচা ঘা ধুলে দু তিনদিনের মধ্যেই তা সেরে যায়।
  • জামগাছের ছালের গুঁড়া ক্ষতে লাগালে তা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
  • দাঁতের মাঢ়িতে রক্তপাত হলে জামগাছের ছালের গুঁড়া দিয়ে দাঁত মাজলে উপকার হয়।
  • হাত-পা জ্বালায় পাকা জামের রস মাখলে তত্‍ক্ষণাত্‍ কমে যায়।
  • চুলপড়া কমাতে কাঁচা জামের রস চুলের গোড়ায় লাগালে চুলপড়া কমে যায়।