ছবি সংগৃহীত

নাম তার বেনারসি

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০১৩, ১০:৩৫
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৩, ১০:৩৫

শাড়ি বাঙালি নারীদের একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক। শাড়ি নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে, কোনো শাড়ি পেয়েছে জনপ্রিয়তা আবার কোনো শাড়ি হারিয়ে গিয়েছে কালের বিবর্তনে। সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শাড়ির ফ্যাশনে ঘটেছে নানান উত্থান-পতন, কিন্তু একটি শাড়ি আজও স্থির - বেনারসি শাড়ি!

বেনারসি শাড়ির মূল উত্‍পত্তিস্থল হলো ভারতের বেনারস শহর। ঠিক কবে থেকে এই শহরে মুসলিম তাঁতিরা বংশ পরম্পরায় বেনারসি শাড়ি তৈরি করে আসছে, তা আজও জানা যায়নি। তবে এ বিষয়ে একটি গল্প বেশ প্রচলিত রয়েছে। এই তাঁতিদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন আনসারী। মহানবী (স) যখন মক্কা থেকে মদিনায় আত্মরক্ষা করতে যান, তখন তিনি আশ্রয় পেয়েছিলেন এই আনসার সম্প্রদায়ের কাছে। তারা পূর্বে ঈসা (র)-এর অনুসারী থাকলেও এ সময়ে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেন। বেনারসের পুরোনো বাসিন্দারা বলেন, বেনারসের তাঁতশিল্পীদের নব্বই শতাংশই নাকি এই আনসারদের বংশধর! বেনারসের বেনারসি শাড়ি কী করে বাংলাদেশে বিকশিত হলো, তারও রয়েছে ইতিহাস! ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ভারতের বেনারস থেকে কয়েকটি পরিবার বাংলাদেশে চলে আসে। তারা বসবাস শুরু করে মিরপুর ও পুরান ঢাকা এলাকায় এবং তৈরি করতে থাকে মোহনীয় বেনারসি শাড়ি। বাংলাদেশের কেবল ঢাকাতেই বেনারসি শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কাজের অভাবে জীবিকাহীন হয়ে পড়ায় অনেক পরিবারই জীবিকা হিসেবে বেছে নেয় এ পেশাকে। ফলে বাড়তে থাকে তাঁতির সংখ্যা এবং পরিবর্তন আসতে থাকে বেনারসি শিল্পে। সে সময় পুরান ঢাকার কারখানাগুলো সরে আসে ঢাকার মিরপুরে।
শুরুর দিকে ক্রেতারা তাঁতিদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতেন বেনারসি শাড়ি। পরে ব্যবসায়ী ও তাঁতিদের সুবিধার্থে একটি প্রদর্শন কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯৫ সালে বেনারসি পল্লীতে প্রথম প্রদর্শন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়ে। বর্তমানে দোকানের সংখ্যা ১৫০টিরও বেশি! মিরপুর ১০ থেকে ১১ নম্বর পর্যন্ত সারি সারি বেনারসি শাড়ির দোকান, যা দৃষ্টিকে স্বভাবতই আকর্ষিত করে।বেনারসি শাড়ি তৈরির মূল উপাদান হলো কাঁচা রেশম সুতা। এর সাথে ব্যবহার হয় জরি সুতা। দেশীয় কাঁচা রেশম সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁতিরা বেনারসি তৈরিতে চায়না সিল্ক সুতা ব্যবহার করে থাকেন। সহজ বুননের একটি শাড়ি তৈরি করতে একজন তাঁতির সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ। আবার কঠিন ও নিখুঁত বুননের কাজ করতে তিনজন তাঁতির তিন মাস সময়ও লেগে যায়! শাড়ি তৈরির পর তা পলিশ করা হয়। বেনারসি শাড়ির রঙের বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। লাল, হলুদ, মেরুন, মেজেন্টা, বেগুনী ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের ওপর জমকালো সোনালি-রূপালি জরির কাজ সহজেই নজর কাড়ে। বেনারসি শাড়ির ধরন বা নকশার ওপর ভিত্তি করে রাখা হয় নানান নাম। যেমন - ব্রোকেট কাতান, পিরামিড কাতান, মিরপুরী রেশমি কাতান, বেনারসি কসমস, চুনরি কাতান, প্রিন্স কাতান ইত্যাদি। শুরুর দিকে বেনারসির মোটিফগুলো পার্সিয়ান ধরনের। এরপর আসে মুঘল মোটিফ। গত কয়েক দশকে এই ডিজাইনগুলোর সাথে পাবনার তাঁতিদের কিছু মোটিফ যোগ দেয়। আবার কিছু কিছু নকশা জামদানী, টাঙ্গাইল ও পাবনার স্থানীয় নকশার সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। দামদর সিনথেটিক কাতান যেমন ১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, তেমনি কোনো কোনো শাড়ির দাম ৫০ ছাড়িয়ে যায় হাজার। শাড়ির দাম নির্ভর করে শাড়ির মান ও ডিজাইনের উপর। যেমন - মসলিন বেনারসি ১০০০০-১৫০০০ টাকা, নেট জুট ৫০০০-৬০০০ টাকা, কাতান বেনারসি ১১০০-১৮০০ টাকা, মসলিন কাতান ১০০০০-১২০০০ টাকা, পিয়ান বেনারসি ও খাদি বেনারসি ৭০০০-২৫০০০ টাকা। আবার বিয়ের বা যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য জমকালো শাড়ি অর্ডার করলে দোপাট্টাসহ দাম পড়বে কয়েক লাখ!