ঢেঁড়স চাষ করে স্বাবলম্বী হলেন বাউফলের তাসলিমা

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০১৫, ১৩:৩৬
আপডেট: ২৭ মে ২০১৫, ১৩:৩৬

(মহিবুল্লাহ চেীধুরী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি) ‘আমন উঠলে ক্ষ্যাত-ক্ষলা খালি পইরা থাহে। ঢেঁড়স লাগাইলে ফলন ভালো হয়। হ্যা ব্যাচলে প্রচুর লাভ অয়। পোলা-মাইয়ার খাতা-কলম কিনার দুইডা পয়সা অয়। বাইস্যায়ও সংসারে অভাব থাহে না।’ এ কথাগুলো হাসি মুখে বললেন ঢেঁড়স চাষী তাসলিমা। ঢেঁড়শ চাষে লাভের মুখ দেখা এ নারী হলেন পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ধানদী গ্রামের তাসলিমা বেগম। আমন ওঠার পরে বাড়ির পাশের অলস পরে থাকা জমিতে ঢেঁড়স চাষে লাভের মুখ দেখছেন তিনি। পর পর দুই বছরে হয়েছেন স্বাবলম্বী। হতদরিদ্র পরিবারের বাড়তি আয়ের যোগানদাতা এখন তিনি। কেবলমাত্র স্বামী আ. রহিম বিশ্বাসের কৃষি কাজের আয়ে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে চলছিল না তাসলিমার সংসার। ছেলে মেয়ের স্কুলের খাতা-কলম, পরীক্ষার ফি দেওয়ার মতো টাকা জোটছিল না। অভাবের তাড়নায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। কুল কিনারা না পেয়ে অবশেষে অবিবাহিত বয়সে বাবা-ভাইদের কাছ থেকে পাওয়া সবজি চাষের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রথমে ৮০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন ঢেঁড়স চাষ। ঢেঁড়স গাছে পোকা-মাকঁড়ের আক্রমনও কম হয়। সার ওষুধও তেমন দরকার হয় না। সময় মতো বৃষ্টি হলে সেচ দিতে হয় না। তাই কম খরচে অধিক লাভ করা যায় এমন ধারণা থেকে কাজে হাত দিয়ে প্রথম বছরেই লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন তাসলিমা। এই নিয়ে পর পর দুই বছরই ঢেঁড়সের বাম্পার ফলনে মুখে হাসি ফোটে তার। ঘরের অঙিনায়ও রয়েছে চিচিংগা, শশা, মিষ্টি কুমড়া, করলার মতো আরো কয়েক ধরণের শাকসবজি। এতে নজর কাড়ে স্থানীয় অনেকের। বদলে যায় সংসারের অভাব-অনটনের ছবি। সংসারে বাড়তি আয়ের যোগান পেয়ে তাসলিমা হন স্বাবলম্বী। ২০১৪ সালের সফলতার পরে এবার ট্রাক্টর ইঞ্জিন দিয়ে জমি তৈরি, বাজারে ঢেঁড়স বিক্রিসহ বিভিন্ন কাজে স্বামী রহিম বিশ্বাস সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ বছর ঢেঁড়স চাষ করেছেন একশ শতাংশ জমিতে। ভাই নাজিরপুর গ্রামের চাষি ওসমান সিকদারের পরামর্শে বাউফলের বীজভান্ডার থেকে সংগ্রহ করা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসির) বারি ঢেঁড়স-১ জাতের ঢেঁড়শের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষে ট্রাক্টর খরচ ৪০০ টাকা, ড্যাব, ইউরিয়া, টিএসপিসহ সামান্য সার-ওষুধ ও বীজে ৬০০ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। ক্ষেতের মধ্যে যে পরিমাণ ঢেঁড়স রয়েছে তা বিক্রি করে আরো সমপরিমান টাকা আয় হবে তার। ছেলেমেয়ের জন্য কিনেছেন স্কুলব্যাগ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আরিফ, মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির আরিফার পরীক্ষার ফি, প্রাইভেটের খরচ, খাতা-কলমসহ টিফিনের খরচ জোটে এখন অনায়াসে। ঢেঁড়স চাষে বাড়তি আয়ে সংসারের হাট-বাজার খরচ চলছে অনায়াসে। জমা হচ্ছে পরিবারের জন্য একটা ছোটখাট পুঁজি। কাটছে দরিদ্রতার লেশ। তাসলিমা বেগম জানান, পর্যায়ক্রমে ঢেঁড়স চাষের পরিমাণ আরো বাড়ানোর স্বপ্ন রয়েছে তার। আমন উঠে গেলে পড়ে থাকা অলস জমিতে ঢেঁড়স চাষ করতে চাইলে যে কেউ জমি দিতে রাজি হবে। এতে পরবর্তী ফসলের কোন অসুবিধা নেই। ইতিমধ্যে তার প্রথম বছরের সফলতায় স্থানীয়দের মধ্যে অলস জমিতে এ সময় ঢেঁড়স চাষে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সরোয়ার জামান বলেন, “ঢেঁড়সের রোগবালাই কম। বাজার দরও ভাল পাওয়া যায়। আমন ধান ওঠার পরে অনেক জমি দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকে। দেশের উত্তরাঞ্চলের তুলনায় এখানে সবজির আবাদ কম হয়। নারী হয়ে তাসলিমা বেগম অলস পড়ে থাকা জমিতে পর পর দুই বছর ঢেঁড়স চাষের সফলতায় উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। সবজি চাষে তার মতো সকলের এগিয়ে আসা উচিত। কেউ ঢেঁড়স চাষে উৎসাহিত হলে তিনি কৃষি অফিস থেকে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পাবেন।’’