ছবি সংগৃহীত

কৃষি খাতে যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক

এম. মিজানুর রহমান সোহেল
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০৮:০৯
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০৮:০৯

এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনোলজি লিমিটেড (ইএটিএল) ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘কৃষি খাতে যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৮ জানুয়ারি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হয়েছে আজকের প্রথম আলোতে। প্রিয়.কমের পাঠকদের জন্য কৃষি খাতে যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বিশদ আলোচনা উপস্থাপন করা হল। আব্দুল কাইয়ুম: দেশের কৃষকেরা কঠোর পরিশ্রম করছেন। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ বিভিন্নভাবে তাদের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন হাতে হাতে মানুষের মোবাইল রয়েছে।মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে চাষিদের কৃষিবিষয়ক তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব। যেমনআখচাষিদের আগে অনেক দুর্ভোগ ছিল, এখন তাঁরা মোবাইল ফোনে আখ ভাঙানোর তারিখ জানতে পারেন। ই-কমার্সের মাধ্যমে উৎপাদিত সবজির দাম জানতে পারছেন। এসব কাজে ব্যাংক, মোবাইল কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আলোচনায় এসব বিষয় আসবে। এখন আলোচনা করবেন এম এ মান্নান। এম এ মান্নান: আজকের আলোচ্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অর্থনীতিতে তথ্যপ্রযুক্তি ভূমিকা রাখছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষককে সাহায্য করতে পারলে নিশ্চয়ই কৃষিতে আরও সুফল আসবে। এ ক্ষেত্রে মোবাইলসহ অন্য প্রযুক্তি রয়েছে। সবকিছুকে সমন্বয় করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে কৃষি উৎপাদন বাড়বে। ফলে আমরা কৃষিতে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারব। এম এ মুবিন খান: কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আজকের আলোচনার মূল বিষয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। কৃষি হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বড় শিল্প। জিডিপির প্রায় ২৩ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিকে আরও গতিশীল করতে হবে। দেশে ১৬ কোটি মানুষ। এর মধ্যে ১১ কোটি মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে। আধুনিক বিশ্বে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। থাইল্যান্ডে কল সেন্টার, মোবাইল অ্যাপস ও ওয়েব পেজের সমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে জিডিপি বেড়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বিশ্বের ১২০টি দেশে গবেষণা করেছে। তারা দেখেছে কোনো দেশে যদি ১০ শতাংশ মোবাইলের ব্যবহার বাড়ে, তাহলে এক শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ে। কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপক সুফল আসতে পারে। এখন এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে। মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবা, কৃষি তথ্য ও কৃষি বাজার—এসব বিষয়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। ভোডা ফোন কোম্পানি বিশ্বের ২৬টি দেশের ওপর একটি গবেষণা করেছে। তারা বলেছে, ২০২০ সালে কৃষিতে আয় বাড়বে ১৩৮ বিলিয়ন ডলার। ভোডা অন্য একটি গবেষণায় বলেছে, সরকার, এনজিও, মোবাইল কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই একসঙ্গে কাজ করলে কৃষিতে নিশ্চিত ব্যাপক উন্নয়ন হবে। নিজাম উদ্দিন আহমেদ: আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিতে অনেক সুযোগ আছে। আবার অনেকগুলো চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কৃষিতে কাজ করছে। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে ৯৪তম। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আমরা কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থার মধ্যেও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার খুব কম। এখনো প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। কৃষির পর্যাপ্ত তথ্য আছে। কিন্তু কৃষক সে তথ্য ঠিকমতো পাচ্ছেন না। ১৯৭১ সালে খাদ্যের যে উৎপাদন ছিল, আজকে সেটি প্রায় ২৬ গুণ বেড়েছে। ২০৫০ সালে এ দেশের লোকসংখ্যা হবে ৩২ কোটি। সে ব্যাপারে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তা না হলে এত লোকের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে। তবে আশার কথা হলো, দেশের কৃষি মন্ত্রণালয় খুবই সফল ও দক্ষ। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত খাদ্যের জোগানের জন্য প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সবার সমন্বিত উদ্যোগে কৃষিতে একটি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। আবার তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারও কম। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে দ্রুত এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কৃষকদের জানাতে হবে কখন কোন ফসলের চাষ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক জানতে পারবেন তাঁর ফসল ঢাকায় না খুলনায় বিক্রি করবেন। বিশ্বের সর্বাধিক ১০টি মোবাইল ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করলে বর্তমান কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এবং দেশের মাটিতে যে কৃষি উৎপাদন করলে লাভবান হওয়া যায় তা জানা যাবে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষককে সহায়তার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি জাতিকে উন্নয়নের দ্বারে পৌঁছে দেবে। মোহাম্মদ কায়কোবাদ: সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এরা হলো তৈরি পোশাকশ্রমিক, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা অর্থ পাঠায় এবং দেশের কৃষক। দেশ স্বাধীনের সময় আমাদের খাদ্য ঘাটতি ছিল। অথচ তখন জনসংখ্যা ছিল কম। ভূমির পরিমাণ ছিল বেশি। এখন জনসংখ্যা বেশি। ভূমির পরিমাণ কম। তার পরও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্যে এমন বিপ্লব কারা এনেছে? দেশের কৃষকেরাই এ বিপ্লব এনেছেন। আমাদের মতো মানুষ যারা শিক্ষাসহ বিভিন্ন কাজে জড়িত তারা দেশের জন্য খুব একটা অবদান রাখতে পারিনি। আমাদের পাশের দেশগুলো আমাদের থেকে অনেক বেশি এগিয়েছে। তাদের তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি। আমাদের ভূমির পরিমাণ অনেক কম। এটা পৃথিবীর এক হাজার ভাগের এক ভাগ। জনসংখ্যা এক হাজার ভাগের ২৪ ভাগ। ভূমি খুব যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। হাউজিংসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর আমাদের ভূমি হারাতে হচ্ছে। গৃহনির্মাণের জন্য এখন বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। এসব বিষয় এখনই ভাবতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে অনেক মানুষ বেকার হয়। ব্যাংকগুলো যোগ-বিয়োগের মাধ্যমে হিসাব রাখে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষাগুলোয় যোগ-বিয়োগ করে হিসাব রাখে। তাহলে তথ্যের ব্যবহার কোথায়? যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। এখান থেকে কৃষক ও আমাদের সবাইকে জানতে হবে। সায়েদ আখতার হোসাইন: অধিকংশ কৃষক ফোন ব্যবহার করেন। কিন্তু এগুলো স্মার্টফোন না। আমাদের কৃষকদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। দেশের শতকরা ১০ জন কৃষকেরও স্মার্টফোন নেই। এ ফোনে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োগ থাকবে। কৃষকেরা এ প্রয়োগগুলো ব্যবহার করে তাঁদের প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে পারেন। কৃষকেরা যদি স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাঁদের উৎপাদন, বাজারজাত—সব ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে পারেন, তাহলে সবার মধ্যে একধরনের সাড়া পড়ে যাবে এবং কৃষি খাতে আরও উন্নয়ন ঘটবে। শাইখ সাহেব ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ একটি অনুষ্ঠান করেন। স্মার্টফোন আনন্দ নামে একটি অনুষ্ঠান করা যায় কি না, সেটি ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের যদি কোনো সহযোগিতা লাগে আমরা কৃষকদের জন্য সেটা করতে প্রস্তুত আছি। টি আই এম নূরুল কবির: দেশের ১১ কোটি মানুষ মোবাইল ব্যবহার করছে। মোবাইল অপারেটররা একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এরা পরিবর্তনের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। থ্রিজি আসার আগে মোবাইল কোম্পানিগুলো দেশে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। থ্রিজির পর এটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। মোবাইল কোম্পানিগুলো সেবার নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের লাভের অধিকাংশই খেয়ে ফেলত। এখন মোবাইলের যুগে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষকেরা নিজেরাই জেনে নিচ্ছেন কোথায় তাঁর পণ্যের দাম বেশি। কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। পরে আরও উন্নতি করবে। তথ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে কৃষকসহ সাধারণ মানুষকে তথ্য দিচ্ছে। বিনা পয়সায় সেবা দেওয়ার প্রসঙ্গটি এসেছে। সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলে বিনা পয়সায় তথ্য সরবরাহের বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। মো. কাজী রফিকুল আলম: ৬৫ লাখ মানুষের মধ্যে কাজ করি। ২৬টি জেলার গ্রামে গ্রামে আমাদের গণকেন্দ্র আছে। এ রকম গণকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৬৫টি। ৪৫টি কমিউনিটি রিসার্চ কেন্দ্র আছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন প্রকার কৃষি তথ্য দিয়ে থাকি। আলোকিত বাংলাদেশ নামে আমাদের একটি পত্রিকা আছে। সেখানে সুসংবাদ নামে প্রতিদিন একটি পাতা বের হয়। কৃষকদের সফলতার ঘটনা নিয়ে পাতাটি বের হয়। আমাদের একটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়তা ইউনিট আছে। এখান থেকে হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি ভিডিও, বই ইত্যাদির মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হয়। আমাদের একটি হটলাইন আছে। দেশের যেকোনো জায়গা থেকে ফোন করা যায়। হটলাইনের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি তথ্য দিই। বুটিক, ফুলের চাষ, নার্সারি, মুরগি পালন ইত্যাদি চাষের সিডি দিয়ে থাকি। জামালপুরের কৃষকেরা কীভাবে ঢাকায় বেশি দামে ফসল বিক্রি করতে পারেন সে ব্যবস্থা করেছি। শাইখ সিরাজ: কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, নিজেদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান ও রেডিও-টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে কৃষক এত দিন তথ্য পেয়েছেন। মোবাইলে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকের খরচের দিকটি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে অনেকগুলো বাটন চেপে তথ্য পেতে কৃষকের খরচ বেশি হয়। আসলে এ প্রক্রিয়ায় কৃষক সুবিধা পাচ্ছেন না। এখানে সরকারি ও বেসরকারি সবাই মিলে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষক প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকখানি এগিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল নাটুয়ারচরে গেলাম। দেখি দুজন বৃদ্ধ কৃষক মোবাইলে গান লোড করছেন। বললাম, ‘কৃষি তথ্য কেন লোড করেন না।’ বললেন, ‘এ বিষয়ে আমরা জানি না।’ আমার ‘কৃষি বাজেট’ অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার কৃষক উপস্থিত থাকেন। এঁদের মধ্যে খুব সামান্য সংখ্যক ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্র সম্পর্কে জানেন। ১৩০টি ইউনিয়ন ঘুরেছি। সরকার যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সেবা দেওয়ার জন্য তাদের খুব একটা পাইনি। এর কারণ তাদের কোনো বেতন নেই। এখানে স্থায়ী নিয়োগের বিষয়টি ভাবতে হবে। কৃষি খাত থেকে যদি ২৩ শতাংশ জিডিপি আসে, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করলে ২০২১ সালে ৫০ শতাংশ হতে পারে। তাহলে কেন তাঁদের বিনা পয়সায় সেবা দেওয়া হবে না? অথবা কৃষিতে বড় রকমের ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষক প্রচলিত ফসল ছেড়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করছেন। কৃষকের কোন ফসলের জন্য তথ্য দরকার, সেটি বিবেচনা করে অ্যাপস তৈরি করতে হবে। অনিল কুমার দাশ: এখন সারা পৃথিবী তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করছে। প্রচলিত পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। লাঙল, ইউরিয়া, এইচওয়াইভি (উচ্চফলনশীল জাত), বায়োটেক, প্রিসিশন (বাস্তবতানির্ভর) ই-কৃষি এভাবে প্রথম থেকে আমরা ষষ্ঠ জেনারেশনে এসেছি। ধাপে ধাপে কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষির অনেক কিছু আমরা জানি না। কৃষির নিয়োজিত ৭৫ শতাংশের ধারণা সারা পৃথিবীতে প্রায় একই রকম। ২০ শতাংশ এগ্রোক্লাইমেটিভ (একই ফসলের বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদনের ভিন্নতা), ১০ শতাংশ মাইক্রোক্লাইমেটিভ (একই জমির বিভিন্ন জায়গায় ফসলের ভিন্নতা) ফসলের এমন বিচিত্র আচরণ রয়েছে। এর কিছু আমরা জানি, অনেক কিছু জানি না। একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো, যেকোনো একটি অ্যাপস (প্রয়োগ) তৈরি করলেই সেটা কৃষকের কাজে আসবে না। কোন সময় কোন জায়গায় কী ধরনের ফসলের জন্য কী ধরনের অ্যাপস প্রয়োজন সেটা নির্ণয় করতে হবে। আমার ২৩ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছুই দেখেছি। একজন বুয়েট থেকে পাস করলেই তিনি কৃষকের ভাষা বুঝবেন, সেটি বলা যাবে না। এ জন্য অনেক অ্যাপসের ভাষা আমি নিজেই বুঝি না। কৃষি পরিকল্পনার সময়, চাষের আগে, চাষের সময়, চাষের পর কী ধরনের অ্যাপস লাগবে সেটা ঠিক করতে হবে। এক গ্রাম মাটিতে ১০০ কোটি জীবাণু আছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও কৃষি বিশেষজ্ঞ নিয়ে সমন্বিতভাবে অ্যাপস তৈরিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। মো. সবুর খান: বাংলাদেশে প্রচুর ফলমূল রয়েছে। এগুলোকে ভালো প্যাকেজিং ও কিছু মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কীভাবে আরও সুস্বাদু করা যায়, সেটি ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপস ভূমিকা রাখতে পারে। ঢাকা চেম্বার একবার দুই হাজার উদ্যোক্তার সঙ্গে আলোচনা করে। এখানে দেখলাম বিসিএসআইআর চার হাজার নয় শ প্রকল্প উন্নয়ন করেছে। আমরা সেখান থেকে নয় শ প্রকল্প নিলাম। সরকারের তহবিলের অভাবে এদের কোনো প্রচার নেই। এদের কাজে লাগাতে হবে। জমির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে। মানুষ পয়সা হলে বাড়ি, বাড়ি থেকে বাগানবাড়ি করছে। নেদারল্যান্ডস পানির ওপর সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে। আমাদের পানির অভাব নেই। আমাদের কৃষক অনেক শক্তিশালী। নেদারল্যান্ডস এ ব্যাপারে সহায়তা দেবে। বিষয়টি সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। কৃষি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম, ব্যবসা-বাণিজ্য, সবাই মিলে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। মো. আনোয়ারুল হক: কৃষি এক্সটেনশন থেকে কৃষকদের সেবা দেওয়া হয়। এ সেবা কেবল বড় কৃষকেরা পেয়ে থাকেন। ছোট ও প্রান্তিক চাষিদেরও সেবা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ও মোবাইল প্রযুক্তি মানুষকে সুযোগ করে দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে কেউ সেবা না পেলে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমান যে তথ্য আছে কৃষককে তার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আমরা চাই বা না চাই কৃষক তথ্য ব্যবহার করছেন। এখন বিভিন্ন অ্যাপস তৈরি করার পর কৃষককে সে তথ্য প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মো. রফিকুল ইসলাম: স্বাধীনতার পর কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি অবদান রেখেছে। কেবল মোবাইল প্রযুক্তির ওপর নির্ভর না করে কৃষিকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে। কৃষিতে যেসব গবেষণা হয় সেগুলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। পিকেএসএফসহ অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষকের সঙ্গে সরাসরি কাজ করে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলো কাজ করতে পারে। মোবাইল কৃষি প্রযুক্তি, বাজারজাতসহ সব বিষয় ভিডিও করে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো হবে। তাহলে কৃষক বেশি উপকৃত হবেন। ওয়াহিদা বানু: এখন বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ পথশিশু আছে। আমাদের প্রকল্পে শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের গ্রামে পাঠাই। কিন্তু গ্রামে তারা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত হয় না। কৃষি একটা শোষণেরও জায়গা। সুযোগ-সুবিধা কেবল বড় কৃষকেরাই পান। ছোট ও প্রান্তিক কৃষকেরা সব সময় বঞ্চিত হন। কৃষকদের একটি নির্দিষ্ট তথ্য থাকতে হবে। আমাদের অধিকংশ কৃষক দরিদ্র। একজন কৃষক কখনো স্বপ্ন দেখেন না তাঁর সন্তান কৃষক হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যলয় থেকে শিক্ষার্থীরা পাস করছে। তারা গ্রামে ফিরছে না। কৃষিকাজ করছে না। গ্রামে উন্নত কৃষি, শিল্প, ব্যবসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কৃষকদের কয়েক প্রকার ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা থাকতে হবে। গ্রামে একটা সচ্ছল জীবন দিতে হবে। যাতে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে আসতে না চায়। গ্রামে তথ্যপ্রযুক্তির মেলা করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শামিম আহসান: আমরা ১৯৯৭ সাল থেকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে কাজ করছি। তথ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে সহযোগিতা করে আসছি। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা হয়েছে। আমরা কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছি। সরকারের ৭০ হাজার এজেন্সিকে ওয়েবসাইট-সংক্রান্ত সহায়তা দিয়েছি। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। পাটের জেনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারে আমরা সহায়তা দিয়েছি। পাঁচ, দশ বা পনেরো বছর পর যাতে বাংলাদেশ কৃষিতে নেতৃত্ব দিতে পারে, সে জন্য এখন থেকে কাজ করতে হবে। গুগল ও মাইক্রোসফট স্টানফোর্ড ও হার্ভার্ডে জন্ম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে কাজকরলে আমরা সেখানে সহায়তাদেব। মো. মুজিবুর রহমান: কৃষিক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা বেশিদিন শুরু হয়নি। কৃষকেরা যতটুকু জেনেছেন সেটাকে কম বলা যাবে না। কৃষি এক্সটেনশনের লোকজন গ্রামে গিয়ে চাষ শেখাচ্ছেন। এখন চারটি মোবাইল কোম্পানি থ্রিজি ব্যবহার করছে। আমরা ইতিমধ্যে ১৮টি জেলায় কাজ করেছি। আমরা সামনের দিকে যাচ্ছি। ফলে এসব এলাকার লোকজন কেবল মোবাইল ব্যবহার করছে না। তা���া ব্রডব্যান্ড কম্পিউটারও ব্যবহার করছে। আগে ছিল এসএমএস। এখন এমএমএস করা যাচ্ছে। এমএমএসের মাধ্যমে মোবাইলে সবকিছু দেখা যাবে। প্রযুক্তির একটা ভালো জায়গায় আমরা আছি। মোবাইল কোম্পানিগুলোর সিএসআর ও বিজ্ঞাপনের একটা অংশ এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। মো. রফিকুল হক: এত দিন ভাবতাম আমি এবং আমার কিছু শিক্ষার্থী কেবল কৃষি নিয়ে ভাবে। আজকে খুব ভালো লাগছে যে এ কাজের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত। এখন বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অবদান রেখেছে। কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষদের নিয়ে। তাদের জন্য কাজ করাই আমার প্রধান ভাবনা। আমাদের গবেষণা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিই। আগামী দিনে কৃষিতে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে। সেসব মোকাবিলা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ফসল যাতে সব ধরনের প্রতিকূলতা সহ্য করতে পারে, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সীমাবদ্ধ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ায় তেজগাঁও বিমানবন্দরের চেয়ে খারাপ বিমানবন্দর দেখেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দলবেঁধে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসত। আজকে তাদের অবস্থান ও আমাদের অবস্থানের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের চরম সমস্যা। যেকোনোভাবে এটি দূর করতে হবে। মো. লুৎফর রহমান: বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ যাবৎ ২০৩টি ফসলের ওপর গবেষণা করেছে। এ গবেষণা থেকে ৪১৫টি উন্নত ফসল বের করা হয়েছে। আমরা ২৬টি গ্রামে কাজ করি। কৃষক বড় অর্থনীতিবিদ। অনেকে ধান বাদ দিয়ে অন্য ফসল তৈরি করছেন। একই জমিতে চারটি ফসল উৎপাদন করা যায়, এমন গবেষণা করছি। ছাদে কীভাবে বেগুন, শসা, ক্যাপসিকামসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যায় তার প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ আছে। কিন্তু এ সুযোগ গ্রহণ করার সামর্থ্য আছে কজনের? মোবাইলের মাধ্যমে একটা তথ্য সারা দেশে পাঠানোর দরকার নেই। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ লোক নিতে হবে। মাহমুদ হোসাইন: মোবাইল অপারেটরদের কথা সাধারণ মানুষ এবং কৃষক ভালোভাবে নিচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। প্রযুক্তি ক্রয়-বিক্রয়, তথ্যের আদান-প্রদান, এমনকি সুশাসনেও কাজ করতে পারে। স্মার্টফোনের দাম কমে আসছে। এখন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে একে সহজ করে উপস্থাপনের বিষয় আছে। জোনভিত্তিক মোবাইল সার্ভিস দেওয়ার বিষয়টি আমরা ভাবছি। আমাদের দিক থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। আহমেদ আল-কবীর: যেকোনো ভাবনা থেকে তথ্যপ্রযুক্তি বের করলে হবে না। এটি হতে হবে কৃষকদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে। সব ক্ষেত্রে একটা সমন্বিত উদ্যোগ ও অংশীদারি বাড়াতে হবে। কৃষককে মানসম্পন্ন তথ্য দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং কৃষিভিত্তিক কাজে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি গবেষণা, এনজিও সবার মধ্যে একটি সেতু তৈরি করতে হবে। পাঁচ বছর আগে ডিজিটাল শব্দটি ছিল কৌতুকের মতো। আজকে পাঁচ বছর পর এটি বাস্তবতা। তথ্যপ্রযুক্তিতে সত্যিকার একটি বিপ্লব ঘটেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তেমন অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। বিশেষ করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যাদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখার কথা ছিল তারা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। এসব আলোচনায় তরুণ পেশাদারদের বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে। কৃষিকাজে আমাদের সব সময় সহযোগিতা রয়েছে এবং থাকবে। মিফতাউর রহমান: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উদ্যোগ অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে, সেটা কেউ ভাবছে না। আমাদের দেশের মানুষ অনেক সৃজনশীল। বিদেশে এ দেশের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী যথেষ্ট ভালো করছেন। কিন্তু দেশে এঁদের কখনো কাজে লাগানো হয়নি। ২৫০ মিলিয়ন ডলারের তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিশাল অর্থনীতির ভিত্তি হতে পারে। কেবল গার্মেন্টসকে আমাদের অর্থনীতি মনে করি, সেটা ভুল। নিজস্ব অর্থনীতি কী সেটা ভাবতে হবে। অবশ্যই আমাদের কৃষি অন্যতম। বিদেশি কোম্পানিগুলো এ দেশে ব্যবসা করছে। আমরা হচ্ছি বিশ্ব বাণিজ্যের অংশ। আমরা প্রকৃতপক্ষে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সেবা করছি। গ্রামীণফোন থেকে কৃষকেরা সেবা পাচ্ছেন। এ কোম্পানি যদি কখনো চলে যায়, একে চালানোর সামর্থ্য আমাদের কি আছে, সেটা কি ভেবেছি? আমাদের সামর্থ্যকে ব্যবহার করছি না। রেজওয়ানুল ইসলাম : আমার জন্য আজকের অনুষ্ঠানটি খুবই প্রযোজ্য। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রচারমাধ্যম হিসেবে কাজ করি। আমাদের একটি বাংলা ওয়েবসাইট আছে। এর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ আছে। প্রতি মাসে প্রায় ছয় হাজার মানুষ এটার সুযোগ নেয়। কিন্তু কৃষকদের কতজন শিক্ষিত, সেটি একটি বিষয়। আমরা কৃষকদের মডেম, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ক্যামেরা, জেনারেটর ইত্যাদি দিয়ে থাকি। তাঁদের নিজস্ব আয়ের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এমন ১৪৫টি পদক্ষেপ চালু হয়েছে। ১০০টি চালু করা হবে। চার হাজার ৫০০ ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্র আছে। বরগুনার আমতলীতে একটি কমিউনিটি রেডিও আছে। বিভিন্ন দুর্যোগের সময় এখান থেকে সতর্কসংকেত দেওয়া হয়। একটি কল সেন্টারের ব্যবস্থা হয়েছে। ই-বুক আছে। টেক্সট, ভিডিও, অ্যানিমেশন ও অডিও সংমিশ্রণ আছে। কৃষকেরা যার যেভাবে সুবিধা এখান থেকে তথ্য নিতে পারেন। মো. সাইফুল ইসলাম: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে দুটি বই বের করেছি। এর মধ্যে কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি আছে। এটা যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে। এটা ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। দ্রুত এর বাংলা ওয়েবসাইট করা হবে। কৃষিকাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলে অ্যাপস কৃষকের কাজে আসবে না। আমাদের দীর্ঘদিনের মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাদেরসহ মাঠপর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন অ্যাপস করার সময় তাঁদের সহযোগিতা নিতে হবে। তা না হলে অ্যাপসগুলো কৃষকদের কাজে নাও আসতে পারে। মো. নজরুল ইসলাম খান: এক গবেষণা বলছে, ভবিষ্যতে মোবাইলে সবচেয়ে বেশি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হবে। স্মার্টফোনের দাম ভবিষ্যতে অনেক কমে আসবে। এটি ব্যবহার করতে কারও অসুবিধা হবে না। সরকার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, একডেমি, এনজিও সবার মধ্যে একটা সমন্বয় আনতে হবে। আজকে দারিদ্র্য নিরসনে এনজিওগুলোর অবদান আছে। কৃষির প্রতিটি বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি যুক্ত করতে হবে। জিডিপিতে কৃষির আয় বাড়াতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। যাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান আছে তাদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছি। সেখানে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। কীভাবে অ্যাপস তৈরি করতে হয়, সেটা শেখানো হচ্ছে। এ অ্যাপসগুলো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প, কৃষি খাত ও এনজিওগুলো ব্যবহার করবে। কেবল সরকারের দোষ দিলে হবে না। দেশে একটিও তথ্যপ্রযুক্তি এনজিও নেই। এনজিওগুলো তথ্যপ্রযুক্তিতে ঋণ দিলে মানুষ দ্রুত সফলতা অর্জন করবে। বিভিন্ন খাতভিত্তিক জনসংখ্যা রেজিস্টার করতে হবে। কিছু জায়গায় বন্ধ থাকলেও ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্রগুলো ভালো কাজ করছে। অনেক কেন্দ্র লাভজনকভাবে কাজ পরিচালনা করছে। এখান থেকে প্রতিবছর ৫০ হাজার মানুষ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এ কাজ বেসরকারিভাবে হলে ভালো হয়। সরকার সহযোগিতা করবে। প্রতি ইউনিয়নে উন্নত তথ্যসেবা সার্ভিস উপকরণ থাকবে। এখানে ফ্রি-ল্যান্স করবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শিখবে। কৃষিসেবা পাবে। বেকার সমস্যারও সমাধান হবে। মো. আবদুল করিম: আমরা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, কেবল ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। ঋণের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। একটি পরিবারের সব সদস্যকে দারিদ্র্য মোচনের চেষ্টা করতে হবে। ২০০ এনজিওর সঙ্গে আমরা কাজ করি। কাজের আওতা দেশের ৯৫ ভাগ গ্রাম। এক কোটি পরিবার। পাঁচ কোটি সদস্য। এদের সেবা দেওয়ার জন্য মোবাইলে অ্যাপস খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রান্তিক চাষির সন্তানদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করার কার্যক্রম আমাদের আছে। এখানেও মোবাইল অ্যাপসের ভূমিকা রয়েছে। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা আছে, তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। কৃষকদের লাইভস্টক, স্বাস্থ্য এসব বিষয়ে ইনস্যুরেন্স করে থাকি।এগ্রিকালচার এক্সটেনশনের সঙ্গে কাজ করছি। এ ধরনের সব কাজের ক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সুনীল কান্তি বোস: প্রযুক্তি কী বিস্ময়কর পরিবর্তন এনেছে, অতীতের দিকে লক্ষ করলে বুঝতে পারব। আজকে যদি যন্ত্রায়িত না হতো, ফার্টিলাইজার না থাকত, তিন ফসল না হতো, অন্য প্রযুক্তি না থাকত তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায় থাকত? যখন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বললাম তখন বিদেশিদের অনেকে বললেন, যে দেশের ৭০ ভাগ মানুষ কি-বোর্ড চেনে না তারা কীভাবে ডিজিটাল হবে। মাত্র পাঁচ বছরে এ ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটেছে। অ্যাপস কী? অ্যাপস হলো তথ্যসেবা ইলেকট্রিক্যালি যাবে, এটাই তো। অ্যাপসের উপস্থাপনায় পরিষ্কারভাবে সবকিছু এসেছে। ইতিমধ্যে কৃষক ইলেকট্রিক্যাল বার্তার সুযোগ নিচ্ছেন। এখানে বইয়ের প্রসঙ্গ এসেছে। বই সমাধান দিতে পারবে না। একে এমনভাবে অ্যাপসের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে কৃষক সহজে বুঝতে পারে। তবে ভিডিওটা খুব ফলপ্রসূ হবে। ভিডিওর মাধ্যমে কৃষক সহজে তাঁর প্রয়োজনটা বুঝতে পারবেন। এখন জীবনের সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি হতে হবে চালিকাশক্তি। আজকের আলোচনায় যেসব বিষয় এসেছে সেসব দেশে আছে এবং আরও হচ্ছে। অ্যাপস কৃষিতে বিপ্লব এনে দিতে পারবে বলে মনে করি। বিটিআরসির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে। এম এ মান্নান: আমাদের সরকার মানুষের সেবা করতে প্রতিজ্ঞ। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের বড় অর্জন।আমরা ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করতে চাই। দেশে এখন প্রায় ১১ কোটি সিম ব্যবহার করা হয়। স্মার্টফোনের দাম পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। অনেকে বলেছেন দাম কমবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে যা কিছু করা দরকার সরকার করবে। স্থানীয়ভাবে সিম তৈরি করা যায় কি না, সেটা ভাবা যেতে পারে। কেউ যদি উদ্যোগ নেয় সরকার সহযোগিতা করবে। গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের স্পিড খুব কম। এ ব্যাপারে অপারেটরদের ভাবা দরকার। ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে স্থায়ী নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করব। বাংলাদেশে আর্থসামাজিক অবস্থার ভীষণ রকমের উন্নয়ন ঘটেছে। আমাদের জীবন বদলে গেছে। এ সরকার তথ্যপ্রযুক্তিতে বিপ্লব এনেছে এবং আরও যা করা দরকার সব ধরনের সহযোগিতা আমাদের পক্ষ থেকে থাকবে। আব্দুল কাইয়ুম: মোবাইল অ্যাপস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন। এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। যাঁরা অংশ নিলেন এম এ মান্নান : প্রতিমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয় মো. রফিকুল হক : উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মো. নজরুল ইসলাম খান : সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সুনীল কান্তি বোস : চেয়ারম্যান, বিটিআরসি মো. কাজী রফিকুল আলম : সভাপতি, ঢাকা আহসানিয়া মিশন মোহাম্মদ কায়কোবাদ : অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এম এ মুবিন খান : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনোলজি লি. মো. আবদুল করিম : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পিকেএসএফ ও সাবেক মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিজাম উদ্দিন আহমেদ : প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনোলজি লি. আহমেদ আল-কবীর : চেয়ারম্যান, রূপালী ব্যাংক মো. সবুর খান : পরিচালক, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি শাইখ সিরাজ : পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই রেজওয়ানুল ইসলাম : পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস অনিল কুমার দাশ : কর্মসূচি পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মো. রফিকুল ইসলাম : সহকারী ব্যবস্থাপক, কর্মসূচি, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র মো. আনোয়ারুল হক : কর্মসূচি পরিচালক, কেয়ার বাংলাদেশ মিফতাউর রহমান : ডিন, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সায়েদ আখতার হোসাইন : প্রধান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মো. লুৎফর রহমান : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মো. সাইফুল ইসলাম : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মো. মুজিবুর রহমান : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড মাহমুদ হোসাইন : চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও), গ্রামীণফোন টি আই এম নূরুল কবির : মহাসচিব, অ্যামটব (বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরস সংগঠন) শামিম আহসান : সভাপতি, বেসিস ওয়াহিদা বানু : নির্বাহী পরিচালক, অপরাজেয় বাংলাদেশ