
ছবি সংগৃহীত
কিভাবে ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন
আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১১, ০৮:০৪
ওয়াই-ফাই(Wi-Fi) বা তারহীন নেটওয়ার্ক এখনকার সময়ে বেশ জনপ্রিয়। তারের ঝামেলা এড়াতে আজকাল বাসায় বা অফিসে অনেকেই ওয়াই-ফাই(Wi-Fi) ব্যবহার করেন। যেকোন নেটওয়ার্কেই নিরাপত্তার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ন আর সেটা যদি হয় ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) তবে কথাই নেই।
ধরুন আপনি আপনার অফিসের লোকাল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) বা তারহীন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, এখন যদি নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা যথেষ্ঠ শক্তিশালী না হয়, তবে হ্যাকাররা আপনার নেটওয়ার্ক থেকে যেকোন গুরুত্বপূর্ন ফাইল চুরি করতে পারে; এমনকি তারা আপনার নেটওয়ার্ক সেটআপও নষ্ট করে দিতে পারে, তাই নির্দিষ্ট কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখলে নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা শক্তিশালী হবে।
প্রথমেই আপনার রাউটারের আই.পি এড্রেস ব্রাউজারের এড্রেস বারে লিখে রাউটারে প্রবেশ করুন। রাউটারের ডিফল্ট আইপি সাধারনত 192.168.1.1 হয়ে থাকে। রাউটারের আইপি নিশ্চিত হতে আপনি ইউজার ম্যানুয়াল অথবা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট অনুসরন করতে পারেন।
পাসওয়ার্ড পরিবর্তন:
প্রথমেই আপনার রাউটারের প্রধান লগইন পাসওয়ার্ডটি এবং ওয়াই-ফাই(Wi-Fi) পাসওয়ার্ডটি (যে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ইউজার আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করবে) পরিবর্তন করুন। সাধারনত ডিফল্ট পাসওয়ার্ড হিসেবে admin বা passward দেয়া থাকে অথবা অনেক রাউটারে প্রথমে কোন পাসওয়ার্ড থাকে না সেগুলোতে OK বাটনে ক্লিক করলেই লগইন হবে।
আপনার রাউটারের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যাতে হ্যাকার সহজেই অনুমান করতে না পারে। পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করেতে বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা, অক্ষর একই সাথে ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন আপনার পাসওয়ার্ড যেন জটিল এবং ব্যতিক্রম হয়। কিভাবে আপনার পাসওয়ার্ডকে শক্তিশালী করবেন বিস্তারিত পড়তে পারেন।
নেটওয়ার্ক নাম/এসএসআইডি (SSID) পরিবর্তন:
প্রত্যেকটি ওয়াই-ফাই(Wi-Fi) নেটওয়ার্কের একটি নাম থাকে, একে বলা হয় Service Set Identifier বা SSID. এই SSID বিভিন্ন নামে হতে পারে। সাধারনত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের Default SSID নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে। আপনার নেটওর্য়াক নিরাপত্তার জন্য প্রথমেই Default SSID পরিবর্তন করে আপনার পছন্দমত SSID ঠিক করে নিন।
তবে SSID নির্ধারনে প্রাতিষ্ঠানিক নাম বা নামের অংশবিশেষ ব্যবহার না করাই ভাল এ ক্ষেত্রও ব্যাতিক্রমী নাম ব্যবহার আপনার নেটওয়ার্কের জন্য নিরাপদ। মনে রাখবেন SSID-এর মাধ্যমে হ্যাকাররা কোন ভাবেই যেন আপনার কাজের বিষয় সম্মন্ধে ধারনা না পায়।
SSID নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল SSID ব্রডকাস্ট বন্ধ করে দেয়া। SSID ব্রডকাস্ট বন্ধ থাকলে নেটওয়ার্কে অনাকাঙ্খিত কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। হ্যাকারদের প্রবেশ বন্ধ রাখতে এটি একটি ভাল পদ্ধতি। রাউটার কনফিগার করার সময়ে এই বিষয়টিতে লক্ষ্য রাখুন।
ব্যবহার করুন WPA-2:
ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের সিকিউরিটি সেটআপের সময়ে WPA-2 পদ্ধতি অনুসরণ করে নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি কী (Network security key) বা পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করুন। এটা পূর্বের WEP এবং WPA পদ্ধতির চেয়ে আধুনিক এবং আপনার নেটওয়র্কের জন্য অধিক নিরাপদ। তবে আপনার নেটওয়ার্কের আকার যদি বড় হয় বা বানিজ্যিক ভিত্তিতে কোন কাজ করেন তবে নিরাপত্তার স্বার্থে রেডিয়াস সার্ভার (Radius Server) ব্যবহার করুন।
ম্যাক এড্রেস ফিল্টারিং (Mac Address Filtering):
ম্যাক এড্রেস হল প্রতিটি ডিভাইসকে আলাদাভাবে চেনার জন্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ৬টি গ্রুপে ১২ সংখ্যার একটি হেক্সাডেসিম্যাল নম্বর। ম্যাক এড্রেসের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রতিটি ডিভাইস স্বতন্ত্র (Unique)। কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ক্ষেত্রে এটি সাধারণত নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ডে প্রস্তুকারক প্রতিষ্ঠার কর্তৃক স্থায়ীভাবে দিয়ে দেয়া হয়। ম্যাক এড্রেস হতে পারে এমন 01-23-45-67-89-ab বা 01:23:45:67:89:ab।
ওয়্যারলেস রাউটার কনফিগার করার ক্ষেত্রে ম্যাক (Mac) ফিল্টারিং এনাবল করে যে যে ডিভাইস গুলোকে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করতে চান তার ম্যাক এড্রেস, লিস্টে পূর্বে থেকেই যোগ করে দিতে হবে। আপনাকে যদি ১০ টি ডিভাইস ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করতে হয়, তাহলে ১০ টি ডিভাইসের ম্যাক এড্রেস রাউটারের ম্যাক (Mac) ফিল্টারিং লিষ্টে উল্লেখ করে দিন। এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ডিভাইস ফিল্টার করতে পারেন।
ডিএইচসিপি (DHCP) রেঞ্জ নির্ধারন করুন:
আপনার নেটওয়ার্কে যতগুলো ডিভাইস সংযুক্ত থাকবে সেই আনুযায়ি ডিএইচসিপি (DHCP) রেঞ্জ নির্ধারন করুন। প্রথমে সংখ্যা নির্ধারন করুন কতটি ডিভাইস আপনার রাউটার ব্যবহার করবে, রাউটারের ডিএইচসিপি (DHCP) সেটিংসে গিয়ে সেই অনুযায়ী রেঞ্জ নির্ধারন করুন।
প্রয়োজন অতিরিক্ত ডিএইচসিপি (DHCP) রেঞ্জ আপনার নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা কমিয়ে দেয়। অনাকাঙ্খিত ব্যক্তি আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে ফ্রি নেটওয়ার্ক সুবিধা নিতে পারে ফলে বাড়তি ট্রাফিকের জন্য নেটওয়ার্কের গতি কমে যেতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হোন।
আরো কিছু বিষয়:
• কিছু দিন পর পর নেটওয়ার্ক পাসওয়ার্ড বা নেটওয়ার্ক কী (network key) পরিবর্তন করুন।
• রাউটারের ফায়ারওয়াল অন রাখুন।
• রাউটারের ফার্মওয়্যার নিয়মিত আপডেট রাখুন।
• WAN অপশনটি প্রয়োজন না হলে বন্ধ রাখুন।
• সর্বদা নেটওয়ার্ক মনিটর করুন।
সবশেষ কথাটি হল সাইবার নিরাপত্তা আসলেই অনেক কঠিন বিষয় এখানে শতভাগ নিরাপদ কোনকিছুই নয়। তবে হ্যাকারদের কাজকে কঠিন করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে তো কোন দোষ নেই।
- ট্যাগ:
- প্রযুক্তি
- টিউটোরিয়াল
- wifi
- wireless