ইন্টারনেটের উপকারী অনেক অনেক দিক রয়েছে সত্য, কিন্তু রয়েছে ক্ষতিকর দিকও। শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার চলে এসেছে তার মানে এই নয় যে ইন্টারনেট ব্যবহারে আমাদের বুদ্ধি শানিত হবে। বরং বাস্তবে তার উল্টোটা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বেশি সময় ইন্টারনেটে কাটালে আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনেকাংশেই লোপ পেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বুঝতে পারা অথবা স্মৃতি মনে রাখার ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক ভূমিকা পড়তে পারে এভাবে।

স্টকহোমের KTH Royal Institute of Technology এর গবেষক এরিক ফ্রান্সেন এর মতে, কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে আসা অগুনতি তথ্যের ভিড়ে আমাদের মস্তিষ্ক খেই হারিয়ে ফেলতে পারে। তার গবেষণার মূল বিষয় ছিল মস্তিষ্কের স্বল্পস্থায়ী/কার্যকরী স্মৃতি সংরক্ষণ এবং রোগাক্রান্ত নিউরন সারিয়ে তোলার প্রক্রিয়া নিয়ে। মস্তিষ্কের এই ক্ষণস্থায়ী/কার্যকরী স্মৃতি সংরক্ষণ হলো অনেকটা কম্পিউটারের র্যামের মতো। এখান থেকে কিছু জিনিস চলে যায় দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির ভাণ্ডারে। কিন্তু একটা মানুষের মস্তিষ্ক যখন কম্পিউটার ব্রাউজিং করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় তখন এই ক্ষণস্থায়ী স্মৃতির ভান্ডার থেকে তুলনামুলকভাবে অনেক কম স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। “কার্যকরী স্মৃতির কাজ হলো তথ্য ফিল্টার করা এবং আমাদের কি কি দরকারি তা আলাদা করা”, বলেন ফ্রান্সেন। “এর ফলে আমরা কাজ করতে পারি এবং যেটা দরকারি সেই স্মৃতি জমা করে রাখতে পারি। কিন্তু এর স্মৃতি ধারণার ক্ষমতা সীমিত”।
পূর্ববর্তী অনেক গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের এই কার্যকরী স্মৃতি ধারনের ক্ষমতা সীমিত। “আপনি যখন অনলাইনে বসে আছেন তখন মস্তিষ্কে দরকারি স্মৃতিগুলো ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে”, বলেন ফ্রান্সেন। “আর যখন আপনি অতিরিক্ত তথ্য রাখেন আপনার কার্যকরী স্মৃতিতে তখন আপনার তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষমতা কমে যায়”।
ইন্টারনেট ঘাঁটার সময়ে আমরা যখন মস্তিষ্ককে একসাথে অনেক তথ্য নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করি, তখন সে বাধ্য হয়েই কিছু তথ্য মুছে ফেলে। আর সেই তথ্য ফেইসবুক স্ট্যাটাস বা ইমেইলের চাইতে অনেক বেশি দরকারি হয়ে থাকতে পারে। ফ্রান্সেন আরও বলেন, ইন্টারনেটের বিভিন্ন চটকদার এবং অবাক করা তথ্য দেখার ফলেও মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমার সম্পর্ক রয়েছে।

এছাড়াও মস্তিষ্কের রয়েছে কাজ এবং বিশ্রাম দুইটি পর্যায় এবং এর কর্মক্ষম থাকার জন্য দুইটি পর্যায়ের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। আমাদের কাছে মনে হতে পারে মস্তিষ্ককে বিশ্রামে রাখা মানে সময়ের অপচয়। কিন্তু এই সময়ে মস্তিষ্ক নিজেকে গুছিয়ে নেয় এবং পরবর্তী কাজের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু বিশ্রামের সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা এই প্রক্রিয়া ব্যাহত করছি এবং আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা একটু একটু করে কমে যাচ্ছে।
নিজেদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বজায় রাখতে হলে আপনি যা করতে পারেন তা হলো মস্তিষ্ককে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম দেওয়া যাতে তা নিজেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারে। এর মাঝে সবচাইতে সরল হলো একটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম। আপনি যা নিয়ে চিন্তায় ব্যস্ত তা কিছুক্ষনের জন্য ভুলে যান এবং খুব গভীরভাবে কয়েকটি নিঃশ্বাস নিন। দেখবেন নিজেকে কতটা চাঙ্গা লাগছে!