
ছবি সংগৃহীত
মানুষকে সাদা-কালো বা নানা বর্ণে সৃষ্টি করা হয়েছে কেন?
আপডেট: ০৭ জুন ২০১৫, ০৩:২৩
এক আল্লাহ তায়ালাই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন । কিন্তু কেনো তিনি মানুষের মধ্যে কাউকে সাদা কাউকে কালো আবার কাউকে ভিন্ন বর্ণের করে সৃষ্টি করলেন? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে। হয় তো তিনি এর উত্তরও অনুসন্ধান করছেন। জানতে চাইছেন, এ রহস্যের কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক কোনো উত্তর আছে কি না? আবু মুসা আশয়ারি [রা.] বর্ণনা করেন, রাসুল [সা.] বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আদমকে এক মুঠো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, এবং এই মাটি তিনি জমিনের সব জায়গা থেকে নিয়েছেন, যার কারণে আদম সন্তান হয়েছে জমিনের প্রকৃতির মতো, কেউ লাল, কেউ কালো, কেউ সাদা ও কেউ হলুদ ইত্যকার নানা রঙের । এভাবে কেউ হয়েছে নরম স্বভাবের, কেউ হয়েছে কঠিন, কেউ ভালো, আবার কেউবা খারাপ।’ (তিরমিযি, ইবনে হিব্বান) এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, মানুষের নানা বর্ণ ও তাদের স্বভাব আল্লাহর একান্ত সৃষ্টি ও মানুষের তাকদির অনুসারে হয়েছে। মানুষ হয়েছে তার উপাদানের ধরণ অনুযায়ী, যেই মাটি থেকে সে সৃষ্ট ঠিক সেই মাটির মতো। কেননা, পৃথিবীর সব জায়গার মাটি এক বর্ণের নয়, বরং লাল, সাদা ও কালো- এ রকম নানা বর্ণের হয়ে থাকে। মাটির স্বভাবও বিভিন্ন ধরণের । কোথাও কঠিন ও রুক্ষ আবার কোথাও নরম কোমল। মানুষের স্বভাবও হয়েছে তেমন। এসবই আল্লাহর কুদরত ও মহান ক্ষমতার নির্দশন। তিনি চান সকল মানুষ তার ক্ষমতার অধীনে থাকুক। তিনি তার প্রজ্ঞা অনুসারে যেভাবে ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারেন। কেননা, তিনি যা চান, যেভাবে চান করতে পারেন। তিনি মানুষকে নানা বর্ণে বিভক্ত করে তার ক্ষমতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন । যেমন তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘জেনে রেখো, সৃষ্টি ও নির্দেশ তারই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির প্রতিপালক ।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৫৪) অপর আয়াতে তিনি বলেন, ‘আর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। (সুরা রুম, আয়াত ২২) আল্লামা শানকিতি রহ. বলেন, ‘এ ছাড়া একাধিক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ঘোষণা করেছেন যে, মানুষের রঙ ও বর্ণের পার্থক্য অথবা তার অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে তারতম্য আল্লাহর সৃষ্টিক্ষমতার বহির্প্রকাশ। এসব বস্তুর বিভিন্ন রঙ ও বর্ণ তার মহান সৃষ্টি ও নিখুঁত পরিকল্পনার ফসল।’ (আদওয়াউল বায়ান ৬/১৭৩) মানুষের কর্তব্য কেবল আল্লাহর সৃষ্টি ও বিধানে হেকমতকে মেনে নেওয়া। যে হেকমত ও রহস্যের কারণ আমরা জানতে পারবো, তার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করা। যদি আমাদের কাছে তার কোনো রহস্য উন্মোচিত না হয়ে থাকে, তাহলেও আমরা তা তার কাছেই সমর্পণ করবো। সব অবস্থায়ই আমরা তার প্রতি ঈমান রাখবো । আল্লাহ তায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তিনিই তোমার প্রতি যে গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, তার মধ্যে আছে বিধান-সংবলিত আয়াত; এগুলোই কিতাবের মূল । আর অন্যগুলো ‘মুতাশাবিহ’ (যা প্রচ্ছন্ন)। যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, তারা ফেতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে ‘মুতাশাবিহ’ আয়াতসমূহের পেছনে লেগে থাকে, অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে গভীরতা রাখে, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। আর বুদ্ধিমানেরই উপদেশ গ্রহণ করে ।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৭) মাওলানা মনযূরুল হক [লেখক পরিচিতি : মাওলানা মনযূরুল হক- বর্তমানে তিনি দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে লেখক ও সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি একজন হাফেজ, আলেম এবং লেখক-সাংবাদিক। পড়াশুনা করেছেন ঢাকার শীর্ষস্থানীয় কওমি মাদরাসা দারুল উলুম মাদানি নগর, কাকরাইল মাদরাসা ও জামেয়া কুরআনিয়া লালবাগে। বেশ কয়েকটি মৌলিক ও অনুবাদিত গ্রন্থ রয়েছে তার। আহলে হাদিস সমস্যার সমাধান তার লেখা আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি বই। এছাড়াও প্রকাশের অপেক্ষায় আছে, ফিলিস্তিনের গল্প সংঙ্কলন আশিক মিন ফিলিস্তিন, শিশুতোষ গল্প এই পৃথিবীর পাতায়, নবিয়ে রহমত, সিরাজাম মুনীরা, খোদার আজব বান্দা এরা সহ আরো বেশ কিছু গ্রন্থ।]