
সাপের খোলস পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্ময়কর কিছু তথ্য
সাপের খোলস পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য
আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮, ১৪:০৯
(প্রিয়.কম) সাপ আমাদের অতি পরিচিত মাংসাসী ও সরীসৃপ প্রাণী। এই প্রাণীকে শুধুমাত্র অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে দেখা যায় না। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ২৯০০ প্রজাতির সাপের কথা জানা গিয়েছে।
সাপ সম্পর্কে আমাদের সমাজে অনেক ধরনের উপকথা প্রচলিত রয়েছে। শত শত বছর ধরে নানাবিধ কারণে সাপ আমাদের জানার আগ্রহের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে। এই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে সাপের খোলস পরিবর্তন করা। আজকের লেখায় সাপের খোলস পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্ময়কর কিছু তথ্য জানাবো।
১। সাধারণত প্রত্যেক মেরুদণ্ডি প্রাণীই নির্দিষ্ট সময় পরপর ত্বক পরিবর্তন করে। মেরুদণ্ডি প্রাণী ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গের মাঝে খোলস পরিবর্তনের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। খোলস পরিবর্তনকে একডাইসিস বলা হয় (Ecdysis)।
বিভিন্ন প্রাণীতে এমন কী মানুষেরও ত্বক পরিবর্তিত হলেও, সাপের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ খোলস একইসঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ত্বক বা খোলস জন্মায় বলে তা সহজেই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়।
২। অনেকের ধর্মীয় বিশ্বাস হচ্ছে, সাপ খোলস পরিবর্তনের দ্বারা ঐশ্বরিক রুপ লাভ করে। তাদের বিশ্বাস হচ্ছে, খোলস পরিবর্তনের দ্বারা সাপের বয়স বৃদ্ধি পায় ও তারা অমরত্ব লাভ করে। অর্থাৎ সাপ জন্ম-মৃত্যু চক্র থেকে মুক্তি লাভ করে।
৩। খোলস পরিবর্তনের জন্য সাপের ত্বক শুষ্ক থেকে অধিকতর শুষ্ক হতে থাকে। এভাবে ত্বক পানিরোধী হয়ে যায়। এরপর প্রজাতিভেদে রুক্ষ ও মসৃণ হতে পারে। তবে খোলস পরিবর্তনের জন্য সাপকে পানিতে সাঁতার কাটতে হয়। এর ফলে ত্বক ঢিলা হয় ও পরিবর্তন সহজতর হয়।
৪। সাপ সাধারণত বছরে ২ থেকে ৪ বার খোলস পরিবর্তন করে। তবে ত্বকে কোনো ক্ষতিকর কিছু পরিলক্ষিত হলে, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদি কারণে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। খোলস পরিবর্তন করলে এদের শরীর পরিষ্কার হয়। এছাড়াও পুরনো খোলসে থাকা পরজীবী ও জীবাণু থাকলে তা দূর হয়।
৫। খোলস পরিবর্তন করার প্রায় এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে সাপ নিস্তেজ হতে থাকে। এরপর তারা নির্জন স্থানে চলে যায়। এসময় লিম্ফেটিক বা লসিকাগ্রন্থি নিঃসৃত তরলের কারণে সাপের চোখ অস্বচ্ছ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সাপ কোনো প্রকার খাবারও গ্রহণ করে না।
৬। খোলস পরিবর্তনের ২৪ ঘণ্টা পূর্বে চোখে জমা হওয়া লসিকাগ্রন্থি নিঃসৃত তরল পদার্থ শোষিত হয় ও চোখ আবার স্বচ্ছ হয়। তখন সাপ আবার সঠিকভাবে দেখতে পারে।
খোলস পরিবর্তিত হওয়ার পর সাপ অধিকতর মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। সে সময় সাপকে অনেক বেশি পরিষ্কার ও আকর্ষণীয় মনে হয়।
৭। সাপের খোলস পরিবর্তনের পদ্ধতি খুবই কষ্টদায়ক বিষয়। প্রথমে সাপ চোয়ালের খোলস পরিবর্তন করে। কারণ সেখানকার ত্বক বেশি ঢিলে থাকে। সাপ তার চোয়াল অমসৃণ কোন কিছুর সাথে ঘষতে থাকে। ফলে ত্বক ফেটে যায়। তখন ত্বকের কিছু অংশ গাছের ফাটা বাকল, পাথর, কাঠ ইত্যাদি বস্তুর সাথে আটকে নেয়। এরপর শরীরকে সংকুচিত করার মাধ্যমে খোলস পরিবর্তনের কাজ সম্পাদন করে। খোলস পরিবর্তনের সময় সাপকে খুবই ধকল পোহাতে হয় ও কষ্ট অনুভব করতে দেখা যায়।
৮। সাপের খোলসে সাপের শরীরের বর্ণ বোঝা যায় না। কারণ বর্ণ তৈরি করার জন্য যে রঞ্জক পদার্থ থাকে তা পুরনো ত্বকে না থেকে সাপের সঙ্গে চলে যায়।
সাপ সম্পর্কে মজার মজার তথ্যের শেষ নেই। সাপ পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রাণি। এরা সাধারণত ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে দংশন করে না। তাই পরিবেশের উপকারী এই প্রাণিটিকে বাঁচতে সহায়তা করা আমাদেরই কর্তব্য।
প্রিয় বিজ্ঞান/ফারজানা/গোরা
- ট্যাগ:
- বিজ্ঞান
- প্রাণী জগৎ
- সাপ