কোনো ঘরে পেঁচা বসলে কী সে ঘরের কেউ মারা যাবে বা বিপদ আসবে- এটি একটি ভুল বিশ্বাস ও কুসংস্কার। ছবি : সংগৃহীত

সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার, যেগুলো থেকে বিরত থাকা জরুরি

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৩৩
আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৩৩

(প্রিয়.কম) মুসলিম মানে যিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। একজন মুসলিমের জীবনের সব ধরনের সমস্যার সমাধান ও দিক-নির্দেশনা ইসলাম প্রদান করেছে। অধিকাংশ মুসলিমরা সাধারণত ইসলামরে দিক-নির্দেশনাই মেনে চলেন বা চলার চেষ্ঠা করেন। কিন্তু ইসলামের বিধান মান্য করার পাশাপাশি মুসলিম সমাজে বেশ কিছু কুসংস্কারও প্রচলিত রয়েছে। অনেক মুসলিম কুসংস্কারগুলোকে ভালো মনে করেই পালন করেন। এর মাঝে কিছু কুংস্কার এমন রয়েছে যার মাধ্যমে প্রভুর সাথে শিরকও হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। চলুন মুসলিম সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কারের কথা জেনে নিই।

১. বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে- এটি একটি কুসংস্কার। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই যুগকে যেখানে সচেতনতার যুগ বলে দাবি করা হয়, সেই সময় এই ধরনের মারাত্মক কুসংস্কারের কথা যখন পত্রিকার পাতায় দেখি তখন বড়ই অবাক হতে হয়। বৃষ্টির জন্য পুরো দেশজুড়ে হাহাকার উঠলে দেশের উত্তর-দক্ষিণবঙ্গে এই ধরনের একটি প্রথার কথা আমি বেশ ক’বার পত্রিকার পাতায় দেখেছি। অনাবৃষ্টির কারণে এক গ্রামের লোকেরা মিলে একটি ব্যাঙ ধরে অত্যন্ত ঢাকঢোল পিটিয়ে আরেক গ্রামের একটি ব্যাঙের সাথে বিশেষ কায়দায় বিয়ে দেয়। এতে উভয় গ্রামের লোকেরা বিয়ের মতো হৈ-হুল্লোড় করে আনন্দ উদযাপন করে! তাদের ধারণা, এতে করে বৃষ্টি নেমে আসে!! নাউযুবিল্লাহ। বৃষ্টির সাথে ব্যাঙের কী সম্পর্ক? আর তাদের বিয়েরই বা কী তাআল্লুক? এমন হিন্দুয়ানী কুসংস্কার আদি যুগের অনেক কুসংস্কারকেও হার মানায়। আর কেউ যদি বৃষ্টি বর্ষণকে ব্যাঙের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয় তবে তা তো সুস্পষ্ট ঈমান বিধ্বংসী বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই সেই সত্ত্বা, যিনি আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন।’ অনাবৃষ্টি হলে কী করতে হবে, তার সুন্দর নির্দেশনা ইসলামেই বিদ্যমান। ইস্তিগফার করা, উন্মুক্ত মাঠে ‘সালাতুল ইসতিস্কা’ আদায় করা, সম্মিলিতভাবে দুআ করার কথা হাদীসে এসেছে। প্রত্যেকটি হাদীসের ও ফিকহের কিতাবে এই সংক্রান্ত স্বতন্ত্র অধ্যায় রয়েছে। অতএব সে নিয়ম অনুযায়ী আল্লাহর কাছেই বৃষ্টি চাওয়া উচিত।

২. কোনো ঘরে পেঁচা বসলে কী সে ঘরের কেউ মারা যাবে বা বিপদ আসবে- এটি একটি ভুল বিশ্বাস ও কুসংস্কার। কোনো কোনো এলাকার মানুষ মনে করে, যে ঘর-বাড়িতে পেঁচা বসবে সে ঘরের বা বাড়ির কেউ মারা যাবে বা বিপদ আসবে। এটি একটি ভুল বিশ্বাস। পেঁচাকে কুলক্ষণে মনে করা জাহেলী যুগের ভ্রান্ত ধারণা। হাদীস শরীফে পেঁচা বা অন্য কোনো কিছুকে কুলক্ষণ মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। পেঁচা দেখা কুলক্ষণ নয়, পেঁচার অনিষ্ট করার কোনো ক্ষমতা নেই। লাভ-ক্ষতির মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। এ ধরনের অলীক ধারণা-বিশ্বাস থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

৩. ঝুড়িতে করে কবরের মাটি এনে বাড়ির মহিলাদের থেকে ছুঁয়ে নেওয়া- এটি একটি ভুল প্রথা ও কুসংস্কার। কোনো কোনো এলাকায় এ রসম রয়েছে যে, দাফনের সময় কবরের মাটি একটি ঝুড়িতে করে বাড়ির মহিলাদের কাছে নিয়ে আসা হয়। মহিলারা দুআ পড়ে ঐ মাটি ছুঁয়ে দেয়। তারপর তা কবরে ঢেলে দেওয়া হয়। এটি একটি অমূলক রসম, শরীয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই। সুতরাং তা অবশ্যই বর্জনীয়।

৪. প্রথম সন্তান মারা গেলে কি পরের সন্তানের কান ফুটো করে দিতে হয়- এটি একটি কুসংস্কার। কিছু মানুষের ধারণা, প্রথম সন্তান যদি মারা যায়, তাহলে পরবর্তী সন্তানের কান ফুটো করে দিতে হয়; তাহলে সে আর মরবে না বা দীর্ঘজীবি হবে। অনেককে দেখা যায় কান ফুটো করে কানে একটি রিং পরিয়ে দেয়। এটি একটি কুসংস্কার। এর কোনো ভিত্তি নেই। সন্তান দেওয়া না দেওয়া যেমন আল্লাহর ইচ্ছা, তেমনি দেওয়ার পর বেঁচে থাকা না থাকাও আল্লাহর ইচ্ছা। সন্তানের দীর্ঘ হায়াতের জন্য আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করতে হবে; তিনিই হায়াত মওতের মালিক। এর সাথে কান ফুটো করা না করার কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং এ ধরনের জাহেলী রসম থেকে বেঁচে থাকতে হবে এবং সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করতে হবে।

 সূত্র : গবেষণা ম্যাগাজিন আল কাউসার

প্রিয় ইসলাম/কুসংস্কার