পানিশূন্যতার সমস্যা থেকেও মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে নিয়মিত পানি পান করতে হবে। ছবি: রিপন।

হুট করে মাথা ঘোরাচ্ছে? জেনে নিন নিরাময়ের ঘরোয়া উপায়

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৩৩
আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৩৩

(প্রিয়.কম) হুট করে যেকোন স্থানে মাথা ঘুরে ওঠার মতো সমস্যা দেখা দেওয়াটা খুব সাধারণ একটি শারীরিক সমস্যা। মাথা ঘোরার এই সমস্যাটা হতে পারে অনেকগুলো কারণেই। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘ দিনের শারীরিক অসুস্থতার ফলে দুর্বলতা থেকে এই সমস্যা হতে দেখা যায়। এছাড়াও খুব বেশী মাত্রার ওষুধ খাওয়া, অনেক বেশী কাজের চাপ থাক, মানসিক এবং শারীরিক চাপের মুখে থাকার ফলেও মাথা ঘোরার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মাথা ঘোরার সমস্যা খুব বেশী ঘনঘন দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। কারণ, শরীরে কোন গুরুতর রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা সেটা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিৎ। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মাথা ঘোরার কারণগুলো হয়ে থাকে সাধারণ। ঘরোয়া কিছু সহজ উপায়ে খুব কম সময়ের মাঝে খুব সহজেই মাথা ঘোরার সমস্যা সারিয়ে তোলা সম্ভব। তেমনই দারুণ কিছু ঘরোয়া উপায় জানিয়েছেন পোর্টল্যান্ডের ভ্রমণ, স্বাস্থ্য, খাবার, বিউটি এবং ফ্যাশন সম্পর্কিত লেখিকা সুশান্ন্যাহ ব্র্যাডলি। তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্যা সিয়াটল টাইমস’, ‘ইউএস উইকলি’, ‘এমএনএস.কম’, সহ আরো বেশ কয়েকটি পাবলিকেশনে।

মাথা ঘোরার সমস্যা

১/ খাবার খাওয়ার পূর্বে পানি পান করা

এই তথ্য নিশ্চয় অজানা নয় যে, প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে পানি পান করা সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। 'দ্যা হার্ভার্ড হেলথ লেটার' তাদের এক গবেষণা থেকে রিপোর্ট করেছে, খাদ্য খাওয়ার ফলে রক্তে চাপ কমে যায়, যার ফলে অনেক সময় মাথা ঘোরাভাব তৈরি হওয়া সহ মাথার ভেতর হালকা বোধ হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাকে বলা হয়ে থাকে 'পোষ্টপ্র্যানডিয়াল হাইপোটেনশন।' মাথা ঘোরার এই সমস্যা দূর জন্য যেকোন খাবার খাওয়ার ১৫ মিনিট পূর্বে পানি পান করে নিতে হবে।

২/ আদা-চা পান করা

শরীরের নানান সমস্যা সমাধানে আদা খুব দারুণ একটি প্রাকৃতিক উপাদান। ওহাইয়োতে অবস্থিত ব্রিংহ্যাম ইয়ং ইউনিভার্সিটি এবং মাউন্ট ইউনিয়ন কলেজ ১৯৮২ সালে এক গবেষণা থেকে জানিয়েছে, আদার মূলের গুঁড়া মাথা ঘোরা ভাব এবং বমি ভাবের ক্ষেত্রে খুব চমৎকার কাজ করে থাকে। মাথা ঘোরার সমস্যা কমাতে  আধা চা চামচ আদা গুঁড়া এক কাপ রঙ চা অথবা গরম পানির সাথে মিলিয়ে খেয়ে ফেলতে হবে। মাথা ঘোরার সমস্যা আধা ঘন্টার মাঝে চলে যাবে।

৩/ ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খাওয়া

ভিটামিন- সি যুক্ত খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা খুবই জরুরি। শরীরে ভিটামিন-সির ঘাটতি দেখা দিলে নানান ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। যার মাঝে রয়েছে মাথা ঘোরার সমস্যাও! Acta Oto-Laryngologica তাদের এক জার্নালে জানিয়েছে তারা তাদের এক গবেষণা থেকে পেয়েছে যে, যে সকল মাথা ঘোরার রোগীরা তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন- সি যুক্ত খাবার রেখেছিলেন, তাদের মাথা ঘোরার সমস্যা অন্যান্যদের তুলনায় অনেক কম দেখা দেয়। যে কারণে সবুজ শাক-সবজি, সাইত্রাস জাতীয় ফল প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

৪/ আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল জানায়, সাদা ভাত, আলু, ময়দা এবং চিনিযুক্ত খাবার খুব দ্রুত পরিপাক হয়ে যায় বলে রক্তে চিনির পরিমাণ হুট করেই অনেক নীচে নেমে যায়। যার ফলে মাথা ঘোরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। মাথা ঘোরার এই সমস্যা দূর করার জন্য আঁশ-যুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রোটিনযুক্ত মাংশ এবং মাছ খেতে হবে।

৫/ নিয়মিত অ্যাপল সাইডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করা 

অ্যাপল সাইডার ভিনেগার শুধুমাত্র শরীরের বাড়তি মেদ নয়, হুট করে মাথা ঘোরার প্রাদুর্ভাব তৈরি হওয়াও কমিয়ে আনে। মূলত অ্যাপল সাইডার ভিনেগার রক্তে চিনি মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে হুট করে রক্তে চিনির মাত্রা অনেক বেড়ে যাওয়া কিংবা কমে যাওয়ার সমস্যা প্রতিহত করে মাথা ঘোরার প্রাদুর্ভাব বন্ধ করে দেয়।

৬/ পানি পান করা

মানসিক দুশ্চিন্তা কিংবা শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলেও অনেক সময় প্রবল মাথা ঘোরা ভাব তৈরি হয়। ‘স্যাফাইর উইম্যান্স হেলথ গ্রুপ ইন চেস্টার’ এর প্রেসিডেন্ট ডনিকা মোর এমডি’র মতে, রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ কমে যায়। রক্তের পরিমাণ বারানোর জন্য প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিলেই দ্রুত পানি খেতে হবে।

৭/ কোন বস্তুর উপরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা 

মাথা ঘোরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া মাত্র যে কাজ করছিলেন সেই কাজ করা বন্ধ করে দিতে হবে। চুপচাপ বসে থাকে চোখের সামনে থাকা কোন একটা বস্তুকে লক্ষ্য করে সেই বস্তুর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হবে। একদম নড়াচড়া না করার ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে দ্রুত। একইসাথে বমি ভাব এবং মাথাঘোরা ভাব কমে যাবে অনেকখানি।

সূত্র: Reader’s Digest   

প্রিয় লাইফ/ রুমানা বৈশাখী