
ছবি : সংগৃহীত
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর সঠিক পদ্ধতি কী?
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭, ১২:২৮
(প্রিয়.কম) মানুষ মরণশীল। নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে মানুষকে একদিন পাড়ি জমাতে হয় অবিনশ্বর জগতের উদ্দেশে। সাড়ে তিন হাত মানুষের শরীর থেকে রুহ্ বা আত্মা বেরিয়ে গেলেই মানুষ মৃত বলে পরিগণিত হয়। মৃত ব্যক্তির জন্য জীবন্ত মানুষের অবশ্যই কিছু করণীয় রয়েছে। তার মাঝে প্রথম জরুরি কাজ হলো সুন্দর ও সঠিকভাবে গোসল করানো।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর সুন্নতি পদ্ধতি: গোসলের সময় মৃত ব্যক্তিকে চৌকি বা গোসলের খাটিয়ার উপর শোয়াতে হয়। তারপর পরনের কাপড় সরিয়ে পুরুষ হলে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটা কাপড় রাখতে হয়। এরপর হাতে কাপড় জড়িয়ে পেশাব-পায়খানার জায়গা পরিষ্কার করে নিতে হয়। এর অজু করাতে হয়। প্রথমে সমূদয় মুখমণ্ডল, পরে কনুই পর্যন্ত দুই হাত, তারপর মাথা মাসেহ্ করতে, অবশেষে দুই পা ধোয়াতে হয়। নাকে ও মুখে পানি দেয়ার দরকার নেই। তুলা ভিজিয়ে দাঁতের মাড়ি এবং নাকের ভেতর মুছে দেয় জায়িজ। গোসল ফরজ অবস্থায় এবং হায়েজ-নেফাস অবস্থায় মারা গেলে মুখে ও নাকে পানি পৌঁছানো জরুরি। পানি যেন ভেতরে না যায় সেজন্য নাক, মুখ ও কানে তুলা দিতে হয়। এরপর ধৌত করতে হয়। সাবান বা এ জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা যায়। এরপর মৃত ব্যক্তিকে বাম কাত করে শুইয়ে বরই পাতা দিয়ে অল্প গরম করা পানি মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢালতে হয় এমনভাবে ডান কাত করে তিনবার পানি ঢালতে হয়। এরপর মৃত ব্যক্তিকে কোনো কিছুর উপর ঠেস দিয়ে বসিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিতে হবে। কোনো মল বের হলে তা পরিষ্কার করতে হবে। এজন্য পুনরায় অজু ও গোসল করানোর দরকার হবে না। পরে বাম কাত করে শুইয়ে কর্পূর মেশানো পানি ঢালতে হবে তিনবার। সবশেষে একটি কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছে দিতে হয়। মৃতকে গোসল দেয়ার এটাই মাসনূন বা সুন্নাতি পদ্ধতি। [দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, বাংলা, পৃষ্ঠা-২৮৪]
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার সময় লক্ষণীয় বিষয়াবলী : ১. নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, কাফন-দাফন তাড়াতাড়ি করো। মৃত ব্যক্তিকে কারো বাড়িতে বেশি সময় রাখা ঠিক নয়। [আবু দাউদ শরিফ] ২. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরজে কিফায়া। কেউ লা-ওয়ারিস হলে তার গোসলের দায়িত্ব সামষ্টিকভাবে সকল মুসলমানের। গোসল ব্যতীত কোনো মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হলে জ্ঞাত সব মুসলমানই গুনাহগার হবে। ৩. গোসল ছাড়া কেন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হলে, তার উপর মাটি দেয়া না হলে, তাকে উঠিয়ে গোসল দেয়া অত্যাবশ্যক। অবশ্য, উপরে মাটি দ্বারা ভরাট করে ফেললে পুনরায় কবর থেকে উঠানো ঠিক নয়। ৪. কাফন পরানোর পর মনে পড়ল যে, মৃত ব্যক্তির কোনো অঙ্গ বা অংশ ধোয়া হয়নি, এমতাবস্থায় কাফন খুলে ধুয়ে নিতে হবে। সামান্য অংশ শুকনো থাকলে, যেমন কোনো আঙ্গুল শুকনো রয়ে গেছে বা সে পরিমাণ অন্য কোনো অংশ, এমতাবস্থায় কাফন খুলে ধুয়ে ফেলার প্রয়োজন নেই। ৫. মৃত ব্যক্তিকে একবার গোসল দেয়া ফরজ। তিনবার দেয়া সুন্নাত। ৬. পুরুষ নারীর এবং নারী পুরুষের গোসল দিতে পারে না। স্ত্রী স্বামীর গোসল দিতে পারবে। কারণ, ইদ্দতের সময় পর্যন্ত তাকে স্বামীর বিয়ের মধ্যেই ধরতে হবে। কিন্তু স্বামী তার স্ত্রীর গোসল দিতে পারবে না। কারণ স্ত্রীর ইন্তিকালের সাথে সাথেই বিয়ে শেষ হয়ে যায়। ৭. অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকাকে নারী-পুরুষ উভয়েই গোসল দিতে পারবে। ৮. মৃত ব্যক্তির প্রিয়জনদেরই গোসল দেয়া ভালো। পদ্ধতি জানা না থাকলে অবশ্য অন্য যে কেউ গোসল দিতে পারে। ৯. নবজাত শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই ইন্তিকাল করলে তাকে গোসল দেয়া ফরজ। মৃতাবস্থায় ভূমিষ্ঠ হলেও গোসল দেয়া ভালো। [দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, বাংলা, পৃষ্ঠা-২৮৩]
প্রিয় সংবাদ/আশরাফ
- ট্যাগ:
- ইসলাম
- ইসলাম
- মৃত ব্যক্তি
- গোসল
- মৃত্যু