জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। ছবি: শাছুল হক রিপন ও জুয়েল, প্রিয়.কম।

‘একটুখানি আলো তার একটুখানি ছায়া’

কুদরত উল্লাহ
সহ-সম্পাদক, বিনোদন
প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০১৭, ০১:০৬
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭, ০১:০৬

(প্রিয়.কম) এ পাড়ে দাঁড়িয়ে আমি ওপাড়ে দাঁড়িয়ে তুমি, মাঝখানে নীল সমুদ্র। ধূর ছাই! সমুদ্র আবার কখনও নীল হয় নাকি! একটা সমুদ্র সমুদ্রই থেকে যায়। আকাশের গুণে নীল হয় তার জল। তবু ভালো, একটা লাল গোলাপের জলসমুদ্রে একমাত্র নীল গোলাপই বসত করে। যেমনটা দেখেছিলাম রঙদ্বীপের ওই লাল পাহাড়ের মাঝে। নীল পাহাড়ী ফুল ফুটেছিল বনে। ছিল শরৎ কাল। ছিল ‘একটুখানি আলো তার একটুখানি ছায়া’। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। তাদের ভেসে বেড়ানো সেই স্মৃতি আজও মনে পড়ে। সমুদ্রের জল আর দেখার সৌভাগ্য কোথায়? চারিদিকে শুধু ব্যস্ততা।

আহা কি স্মৃতিই না ছিল! এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ গাড়ির হর্ণের শব্দ। আহ আবার দেখি গানও বাজে। এসব হচ্ছেটা কী? পুরানো স্মৃতির কল্পনা থেকে আস্তে আস্তে মস্তিস্ক বাস্তবে ফিরে আসে। বসে আছি গাড়ির সিটে। পাশের সিটে বসা মডেল ও অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। যিনি লাক্স সুন্দরী হিসেবে মূলত প্রবেশ করেন মিডিয়াতে। পরনে তার নীল শাড়ি। কানে ঝুমকা। হাতে তার বালা আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। মাঝে মাঝে গাড়ি ব্রেক করলে ঝুমকার শব্দ কানে আসে। এভাবেই সবে মাত্র উত্তরার দিয়াবাড়ির অলি গলি ঢুঁ মারছি মৌসুমী, আমি আর দুই ফটোগ্রাফার রিপন ও জুয়েল। উদ্দেশ্য শরতের নীল আকাশ আর সাদা মেঘে কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় আজ শরতের নীল বালিকা বানাব তাকে।

মৌসুমী বললেন, এই গলিতে ঢুকি কী বলেন? আমি বললাম, ওটা ছবির কারিগররা ভালো বলতে পারেন। এই বলে আমি বাইরের দিকে তাকাই। লুকিং গ্লাসে খুঁজতে থাকি ফেলে আসা সময়গুলোকে। ধীরে ধীরে আবারও মস্তিস্ক চলে যায় আমার শরতের লেখায়। আশ্বিন মাস। তালপাকা গরম। যখন তখন বৃষ্টি চলে আসতে পারে। তারপরও শরতের অনেক সৌন্দর্য, যা অস্বীকার করার সাধ্য কারও আছে কী? নাহ নেই। ছয় ঋতুর এই দেশে বৈচিত্র্যেময় এবং সৌন্দর্য নিয়ে বাংলাদেশে আবারও এসেছে শরৎ কাল।

এর মাঝেই বদলে গেছে প্রকৃতি। নীল আকাশে সাদা তুলোর মতো মেঘ। উড়ে বেড়াচ্ছে। তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর সারা দিয়াবাড়ি ঘেঁষে কাশফুলের গুচ্ছ। মৃদু মন্দ বাতাসে দোল খাচ্ছে। এসব দেখে কার না মন ভালো হয়ে যায়। প্রকৃতিপ্রেমীরা অবশ্য এ সময়টা দারুণভাবে উপভোগ করছেন। প্রিয় ঋতুর রং রূপে নিজেকে খুঁজছেন, যেমন খুঁজেছেন অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পীরা। কত শত গান, উপন্যাস, কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে এই শরৎ। কত প্রেমিক, প্রেমিকা জন্ম লাভ করেছে এই ঋতুতে। কিন্তু আমার হয় নাই। হয়েছে বর্ষাকালে। অবশ্য বদলে যেতে শুরু করেছে আবহাওয়া। এখন আর আগের মতো শরৎ নেই। এই রোদ উঠে আবার এই বৃষ্টি নামে। এই দেখি মেঘলা আবার এই দেখি নীল আকাশ। কী যে একটা পাগলামি শুরু করেছে প্রকৃতি। উফ! তা আর নাই বা বলি।

এই যে এই যে এই গলিতে থামেন। কণ্ঠটা পরিচিত লাগছে। ওহ হ্যাঁ, এটা ছবির কারিগর রিপনের কণ্ঠ। থেমে যাচ্ছে গাড়ি। আর আবারও আমি ফিরতে শুরু করি বাস্তবে। শেষমেষ ফিরেই আসি গাড়ি থেকে নেমে। কচি কাশফুল খুঁজে, শুরু হলো আমাদের শরতের ফটোশুট। নানান ঢঙ্গে ছবি তুলে নীল বালিকার নীল শাড়ি কাশফুলের ফুলে ছেয়ে গেছে। ওটা দেখে আমি হাসি দেই। নীল বালিকা বলে, হাইসেন না, আমার শরীর জ্বলতেছে কাশফুলের ছোঁয়ায়। আমার হাসি বন্ধ হয়ে যায় মুহূর্তেই। আমি বলি, তাহলে আমি পরিষ্কার করে দেই? এবার মৌসুমী হেসে ফেলেন। ‘হইছে আর ঢং করতে হবে না।’ নীল শাড়িতে ভালোই লাগছে আপনাকে, বললাম আমি। শুনে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ‘নীল এবার শেষ। আকাশের অবস্থা বেশি ভালো না। বৃষ্টি চলে আসতে পারে। অন্য শাড়িটা পরে আসি। গাড়িতেই আছে। আশপাশ একটু খেয়াল রাইখেন।’ আমি বললাম, অবশ্যই। এটাই তো আমার কাজ।

খানিক বিরতি চলছে। এর মধ্যে চারপাশটা ঘুরে দেখি কাশফুলের আনাচে কানাচে শুধু কাশফুলই না, রয়েছে প্রেমিক যুগল আর একটি করে বাইক। আমাকে দেখে একটু নড়েচড়ে বসে তারা। আমি হাসি দেই। তারাও হাসি দেয়। তবে কিছুটা ভয়ে। আমার চেহারার দিকে অনেক মনযোগী তারা। কিন্তু কেন এই প্রশ্নের উত্তর নিজেই দেই। হয়তো ভেবেছে আমি আবার তাদের পরিচিত কি না। কেউ কেউ আবার সেলফি তোলায় ব্যস্ত। এগুলো দেখতে দেখতে আর ঘুমুর কথা ভেবে কিছু কাশফুলের ছোঁয়া নিয়ে আনমনে হাঁটতে হাঁটতেই ডাক আসে মৌসুমীর। চলেন যাই শুটে। আমি রেডি। কিছুটা দূরে থাকায় আর কাশফুলের জন্য শুধু শব্দটাই কানে আসছিল। সামনে যেতেই আমি অবাক!

বদলে গেছে তার রূপ। অনেকটা শরতের আকাশেরই মতো করে। পরনে এখন তার সাদা শাড়িতে লাল পাড়। হাতে সেই বালা আর কানে ঝুমকা। মাথায় তার টায়রা আর গলায় পরেছেন সিতাহার। কপালে তার লাল টিপের জায়গায় এক বিন্দু লাল দাগ। আমার অবাক করা চাহুনি তার নজর কারে। বলেই ফেললেন, ‘কী চেনা যায় আমাকে?’ সঙ্গে মুচকি হাসি। আর আমি মনে মনে ভাবি আসলেই তিনি অভিনেত্রী। চলেন যাই শুটে। আবারও শুরু হয় শুট। এবার কিছুটা আমাকেও এগুতে হলো কারণ ছবির কারিগরের নাকি কাশফুলের ফ্রেম লাগবে। তাই কিছু কচি কাশফুলের দলকে চেপে ধরে নাড়া দেই। তারা উড়তে থাকে। মৌসুমীর গায়ে পৌঁছে যায়। আর আমার বেশ আনন্দ লাগে। আহ কি সুন্দর।

 ছবি তুলতে তুলতে বেলা গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। কাশফুলের আনাচে কানাচে থাকা মানুষ ফিরতে শুরু করেছে। কারণ ইতোমধ্যেই জানাজানি হয়ে গিয়েছে, এখানে অভিনেত্রী এসেছেন। তাও মৌসুমী হামিদ। আমি বলি, তাড়াতাড়ি শেষ করেন। তারা আমার কথার পাত্তা না দিয়ে ছবি তোলাতেই মগ্ন। মানুষ দেখে তারা আরও কাশফুলের গভীরে চলে যায়। এর মধ্যে বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে দুজন দাড়িওয়ালা মুরুব্বি আসেন। আমাকে বললেন, ‘কি চলে এখানে।’ বললাম পত্রিকার জন্য ছবি তোলা হচ্ছে। তারা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। একজন বললেন, ‘বাদ দেন সাংবাদিক তো!’ চলে গেলেন তারা বিড়বিড় করতে করতে। আমিও চুপ করে অপেক্ষায় রই মৌসুমী, রিপন আর জুয়েলের। কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হয়ে আসলেন তারা। মৌসুমী ভক্তরা চেপে ধরলেন তাকে সেলফি তুলতেই হবে। মৌসুমীও সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন। শেষ হলো সেলফি তোলা, শেষ হলো আমাদের শরতের শুট।

এবার ফেরার পালা। আবারও গাড়িতে উঠেছি আমরা। তখন সন্ধ্যা। খিদে পেয়েছে সবার। একেক জনের একেক অভিমত শুরু। আমি বললাম ‘বাতাস চাচার ধাবায় খাব’। আমার এক কথায় সবার পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। বসে গেলাম বাতাস চাচার ধাবায়। মন ভরে খেয়ে মনে একটা কথা আসল। আসলে বাতাসের কোন গন্ধ নেই, আছে শুধু অনুভূতি। সেই অনুভূতি নিয়ে ফিরে চললাম বাড়ির পথে। যেতে যেতে আবারও আমি চলে যাই আমার লেখায়। কখনও হয়নি তোমার হাতে হাত রেখে নীল সমুদ্র দেখা। হঠাৎ মাঝ দুপুরের বৃষ্টিতে ভিঁজে তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ভালোবাসি বলা। এই তো জীবন। তবুও সুন্দর।

প্রিয় বিনোদন/শামীমা সীমা/গোরা।