
ঝরা পাতার দলে
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৩৮
‘বলো কবুল।’
‘বলো মা, কবুল।’
কাজী বলেন। আশেপাশে পরিচিতজনরা বলেন। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার কণ্ঠস্বরও কি শোনা যায়?
না, বাবা এটা কখনো-ই বলবেন না। জানে মৌ।
মা কাঁদছেন। সকাল থেকেই। মেয়ের বিয়ের কান্নার মধ্যেও একটা সুখ আছে। কিন্তু মা কি সুখের কান্না কাঁদছে?
কখনো না। এই বিয়েতে কোনো সুখ নেই, সেটা মা যেমন জানে। বাবা-মৌও জানে।
যার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে বিষয়টা সে জানে এবং তার পরিবারও। এমনকি পুরো এলাকাবাসী সবারই জানা, এটা সুখের কোনো বিয়ে নয়।
বিয়ে তো আনন্দের। সুখ সুখ। উৎসব উৎসব। হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো আমেজ। আত্মীয়-পরিজন ঘিরে ধরবে বিয়ের কনেকে। মেহেদি রাঙা হাতটাকে আলতো ধরে কপালে হলুদ ছোঁয়া। সখীসাজ। বরযাত্রী। গেটধরা। বরকে ঘিরে কনের বন্ধুদের হৈ-হুল্লোড় করা।
এই তো বিয়ে। আনন্দ। মায়ের সুখের কান্না। সুখের বিদায় দিবেন বাবা।
মৌ আর মীম দুই বোন। তাদের ভাই নেই। আশেপাশের মানুষের কত কটূক্তি। চোখে আঙুল দিয়ে বাবাকে দেখান, তোমার ছেলে নেই। তুমি কার কাছে থাকবে বৃদ্ধ বয়সে।
চোখে আঙুল দেওয়া কথাতেও বাবা মুচকি হাসতেন। ‘ছেলে নেই তাতে কী। দুই মেয়েই আমার রত্ন। আমার ঘর আলো করা মুক্তা’, কাউকে কাউকে এমনভাবেই বলতেন বাবা। শৈশবে দুই বোন বাবার দুই হাত ধরে স্কুলে যেত। নেচে নেচে, হেলে-দুলে। শৈশব মানুষের সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটে। সেই শৈশবের স্মৃতি কখনো মুছে যায় না বোনদের।
স্কুলে বরাবরই ভালো ছাত্রী ছিল ওরা। ভালো ছাত্রী ছিল মানে? হ্যাঁ, প্রশ্নটা চলেই আসে কথার পিঠে। এখনো ওরা ভালো ছাত্রী। দুই বোন-ই। কখনো কোনো প্রাইভেট টিউটর রাখেননি বাবা। অঙ্ক-ইংরেজি বাবাই পড়াতেন। আর অন্য সব বিষয় মা তাদের পড়িয়েছেন। বাবা-মা আর দুই বোনের সুন্দর স্নিগ্ধ শান্তির সংসার ছিল। সবুজ-সাদা সমন্বয়ের স্কুল ড্রেস। দুই বেণী। সাদা ফিতা। স্কুলে যেত। স্কুলেই গান শেখার ব্যবস্থা। সেখানেই গাইত। এভাবেই মৌ-মীমের এগিয়ে চলা। বাবা চাইতেন না, মৌ-মীম বাইরে কোনো অনুষ্ঠানে হারমোনিয়ামের তালে গলা মেলাক। যদিও মীমের খুব ইচ্ছা ছিল বিশেষ দিবসে জেলা পরিষদের যে অনুষ্ঠানগুলো হয় সেখানে চাইলেই টুকটাক গান গাইতে পারে। তার চেয়ে কম ভালো করে গাইতে পারা তার সহপাঠীরা নিয়মিত জেলা পরিষদের অনুষ্ঠানে গান গায়। আবৃত্তি করে। ইচ্ছে থাকলেও উপায় হয় না মীমের। কারণ বাবা পছন্দ করেন না। মেয়েদের নিয়ে প্রায় সন্ধ্যায় তিনিও বসে যান হারমোনিয়াম নিয়ে। সুরের সঙ্গে সুর মিলে। তালের সঙ্গে তাল। বাবা-মেয়ের। চা দিতে এসে মাঝে মাঝে মা-ও গলা মেলান স্বামী-মেয়েদের সঙ্গে।
একতলা বাসা। সামনে মাটির উঠোন। তারপর বারান্দা। উঠোনে ঝুঁকে আছে বিশাল আমগাছ। বসন্তের শেষ সময়ে গাছভর্তি আমের মুকুল। আর সেই গাছে কুহু কুহু ডাক। কোকিলের দেখাও মিলে। ছোট্টবেলায় এই আমগাছের একটা ডালে বাবা তাদের একটা দোলনা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। স্কুল থেকে ফিরে দুই বোন দোলনায় বসে দোল খেতো। কত বিকেল যে গেছে দোলনায়। একটু বড় হওয়ার পর নতুন আরেকটা বড় দোলনা লাগানো হবে হবে করতে করতে কেন যেন আর লাগানো হলো না। বৈশাখের শুরুতে কাঁচা আমের মেলা। গাছ ঝুঁকে আম আসত। কোনোরকম একটু ঝড় আসলেই আম পড়, আম পড়। দুই বোন ঝুপঝাপ করে ছাদে দৌড়াত। মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গী হতেন মা। তিনজনে মিলে ঝড়ের সময়ে আম কুড়াত। কাঁচা আমের ভর্তা। আমডাল। ঝড়ের গতি বেশি হলে আমও বেশি পড়ত। তখন আবার মা মেয়েরা বসে যেত কাঁচা আমের নানা রকম আচার বানাতে। আর ঘরের ছোট ছোট কাজগুলো ছন্দের তালে তালে দুই মেয়েকে নিয়ে মায়ের করা হয়ে যেত। সরকারি স্কুলের শিক্ষকের চাকরিতে বাবার যে আয়, তাতেই টেনেটুনে সংসার চালাতেন বাবা-মা। হয়তো অঢেল কোনোকিছু ছিল না তাদের পরিবারে। কিন্তু খুব যে অভাবের সংসার ছিল তা-ও কিন্তু নয়। টেনেটুনে চালিয়ে নিতেন মা।
আশেপাশের বাসার ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে পড়িয়েও দুই বোনের হাতখরচ উঠে যেত। তারা তাদের পছন্দের পোশাক কিনত এই টাকা দিয়ে। মাঝে মাঝে মাকে কিছু উপহার দিত সংসারের জন্য। বাবাকেও। বিশেষ করে ঈদে। পহেলা বৈশাখে তারা দুই বোন মিলেমিশে শপিং করে পুরো পরিবারে জন্য। দুইবোনের টিউশনির টাকা দিয়েই তা হয়ে যেত। আশেপাশের সবাই বলত, সোনার টুকরো মেয়ে দুটি। বাবা-মা কিছু বলতেন না। কিন্তু গোপন সুখ ছিল দুই লক্ষী মেয়েকে নিয়ে।
শহরের কাছেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কাছেই থাকা যাবে বাবা-মায়ের। সকালবেলার গরম ভাত খেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে জায়গা করে নেওয়া যাবে। তাই সবুজে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়টাতেই পড়া শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাওয়া-আসা করে। কিছুটা পথ বাড়তি হাঁটা। গলির মাথায় হেঁটে যেতে হয় বাসের জন্য। তারপর বাসের জন্য অপেক্ষা। আর এই গল্পের উৎসটা শুরু হয় এই হাঁটাপথেই। কুয়াশা কুয়াশা কোনো এক ভোরে। একা-ই হেটে যাচ্ছিল মৌ। যেভাবে যায় বরাবর-ই। শীতে জবুথবু। কিন্তু ক্লাশে যেয়ে প্রিয়মুখগুলো দেখবে সেই খুশিতে দ্রুত পা চালানো। কুয়াশামাখা সুখ সুখ পথ।
হঠাৎ থমকে যায় পা। প্রতিদিনের মতো চালানো পা স্তব্ধ হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। কুয়াশার চাদরে ঢাকা আশপাশ। আর নিজের শরীরকে চাদরে ঢেকে পথরোধ করে সামনে দাঁড়ায় সোহেল।
সোহেল এলাকার কমিশনারের ছেলে। বড় বোনের বিয়ের পর এখন সেই বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান! স্থানীয় কলেজে কোনোরকম নামমাত্রে টেনেটুনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বাপের অঢেল আছে। ফলে চাকরির ধার ধারেনি। লাল রঙা বাইকটা নিয়ে সারাক্ষণ টো টো। বয়সে মৌয়ের চার বছরের বড়। ছোটবেলায় মৌদের গাছে যখন খুব আম ধরত, বাইরে থেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঢিল ছুড়ে সেই আমের বারোটা বাজিয়ে দিত। স্নেহধন্য ছাত্র। আর এ বয়সে এমন একটু-আধটু করবেই। এমন ভাবনা থেকেই মৌয়ের বাবা কখনো কিশোরদের বাধা দিতেন না। ঢিল ছুড়ে পাড়া আমগুলো তাই অনায়াসেই সোহেলরা কুড়িয়ে নিয়ে যেত। স্যারের দুটি মেয়ে আছে। তারা তাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকত। অন্য কিশোররা টুকটাক উঁকি দিলেও সোহেল কখনো বিরক্ত করেনি।
হঠাৎ কেন এই বুড়ো বয়সে ভীমরতি? আর শুরুই বা কবে এই ভীমরতির? বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রেম ছিল সোহেলের একটা। আহা কী তার প্রেম! লাল বাইকে তরুণীর লাল ওড়না উড়ে যায়। তরুণীকে ফেরাতে পারে না বাবা-মা। তাই তারা শহর ছাড়া এবং দেশের বাইরে বিয়ে দেন। গাছের আমে ঢিল ছুড়ত। এর-ওর ডাবগাছের ভাগীদার হতো। কিন্তু নারীঘটিতে কোনো সমস্যা কমিশনারের ছেলে সোহেলের নেই।
তাহলে? মৌয়ের সামনে এসে পথরোধ করলে সেটা নিয়ে আবার গল্পের ইস্যু করার কি আছে?
কিন্তু গল্পটা ওদের দুইজনকে নিয়েই। যে চলে যায়, একেবারে চলে যায়। মনে ব্যাথা দিয়ে, বিরহ জাগিয়ে। সে তো আর ফিরে আসে না। কিন্তু তার চেহারার কিছু ছাপ যদি খুঁজে পাওয়া যায় অন্য কোথাও? অন্য কারো মাঝে? বরং আরো একটু স্নিগ্ধ। আরো একটু মনকাড়া। ঘটনাটা এইখানেই। আর এই ঘটনার জন্য কি আমরা দায়ী করতে পারি ফেসবুককে? না হলে সোহেলের সঙ্গে মৌয়ের দেখা হয় কীভাবে? প্রেমের বিরহে পড়ার পর থেকেই সোহেল সারাদিন নিজেকে গুটিয়ে রাখে। তার দিন শুরু হয় সন্ধ্যায়। ততক্ষণে নিজের আবাসে নিশ্চিন্তে ফিরে মৌ। দেখা হয় না পথে। জানা হয় না স্যারের বড় মেয়েটাকে নিয়ে কোনো কথা। কিন্তু নিয়তি? চাইলেই কি তাকে খণ্ডানো যায়? ফেসবুকে উঁকি মারে স্নিগ্ধ এক মুখ। মহল্লার কয়েকজন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। হাতে রাখা মোবাইলটায় সেই প্রোফাইলে ঘুরে বেড়ানো এবং স্যারের মেয়ে মৌকে মনে ধরা। ফেসবুকে যখন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট হয় না। কিছুদিন খোঁজখবর নিয়ে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে একদিন কথা বিনিময়। তুমি কি আমায় বাসবে ভালো? চোখেমুখে এই অনুভূতি নিয়ে কফির অফার দেয় মৌকে।

‘ভাইয়া বাসায় আসেন। আম্মু কফি বানিয়ে খাওয়াবে আপনাকে’, মফস্বলের মেয়েটি কীভাবেই আর নিজেকে বাঁচাতে পারে অযাচিত প্রস্তাব থেকে। বেলা গড়ায়। দিন যায়। সোহেল কফি শুভেচ্ছা, ঈদ শুভেচ্ছা সব ছাপিয়ে আত্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, ‘বিয়ে করব আমি তোমায়’।
‘এটা কি সম্ভব ভাইয়া? আপনি নিজে-ই চিন্তা করে দেখুন’, কৌশলে এড়িয়ে যেতে চায় মৌ। কিন্তু কৌশল খাটে না। দিন দিন নিজের গণ্ডির সীমানা ছাড়ায় মহল্লার বড় ভাইটি। কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ। ক্লাশ হচ্ছে না। বাবা-মাকে জানাবে কিনা, মনে প্রশ্ন আসে। আবারও উত্তরও পেয়ে যায়, কি দরকার এসব কথা বাসায় বলে। অনর্থক বাবা-মায়ের দুঃশ্চিন্তা বাড়ানো। কয়েকদিন রাস্তায় দেখতে না পেলে নিশ্চয় কমিশনারের ছেলে অন্য কোনো তরুণীকে একই ভাবে দিবে কফির প্রস্তাব।
কবুতর ডাকা বাড়িটাতে শীতের হু হু ঠান্ডায় লেপ মুড়িয়ে মৌ হারিয়ে যায় মানিক বন্দোপাধ্যায়, শওকত ওসমান, হাসান আজিজুল হককে নিয়ে! কখনো কখনো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-সুচিত্রা ভট্টাচার্যও নাওয়া-খাওয়া ভুলিয়ে দেয়। সপ্তাহখানেক পরে আবার শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া। আবার ক্লাশ। ব্যস্ততা। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। আর বাড়ি ফেরা। সেই রুটিন। সেই চেনাপথ।
তাহলে কি ভুলেই গেল সোহেল?
ভুলে গেলে তবে কেন এই লেখা? গল্প কি আসলেই গল্প? মাঝে মাঝে তা জীবন থেকেই উঠে আসে। জীবনের গল্পটাই কালো কালিতে সাদা পাতায় ঘুরে বেড়ায়। কোনো এক সবুজ-নিরিবিলি শহরে এমন ঘটনা তো আকছার ঘটেই থাকে। তবে কেন শুধু মৌকে নিয়েই লেখা? ঘটনার অভাব নেই। তাকে ঘিরে গল্প। এমন ঘটনা হাজারটা হয়। এমন গল্পও। মৌরা নিজেদের বাঁচিয়ে চলে। হয়তো ভাই থাকলে বোনকে পাহারায় পাহারায় প্রতিষ্ঠিত কারো সঙ্গে বিয়ে দিত। স্কুলে যাও, কলেজ যাও। পাড়াত ভাইরা এভাবেই পিছু নেয়। কত কৌশলে এড়িয়ে চলা যায়, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে তা প্রয়োগ করে বড় হয় আমাদের মেয়েরা। কেউ কেউ পার পায় না। শিকার হয় হিংস্রতার।
পথরোধের সেই সকালের কথাটি-ই তাহলে বলি। কুয়াশার চাদরে মোড়া প্রকৃতি। আর শীতের চাদরে মোড়া সোহেল। সোহেল কি একা এসেছিল? ইচ্ছে করলে আসতে পারত। কিন্তু কোনো ঝুঁকি সে নেয়নি। আদর্শবান শিক্ষকের মেয়ের কাছে যেকোনোভাবেই প্রতিরোধের শিকার হতে পারে সে। মনের জোরে। তাই নিজের মনে আর জোর ছিল না তার। দুই সহকারীকে নিয়ে বাবার গাড়িতে তুলে নেয় মৌকে। আহা... এমনটাই তো আমাদের মফস্বলের ঘটনা। আপনি আমি অবাক হলে তো কিছু যায় আসে না। যেটা স্বাভাবিক সেটাকে মানতেই হবে। শাওন-ভাদ্র কিংবা মাঘ-ফাল্গুনে এমন দু-একটা ঘটনা ঘটতেই পারে। সেই সঙ্গে ফিসফিস। কানাকানি। চায়ের দোকানে। বাসায় বাসায়। রটে যায় অমুকের ছেলে, তমুকের মেয়ে। আহা...সেই ঘটনার জালে পড়ে যায় মৌ। দুদিন নিখোঁজ। থানায় জিডি। বিষণ্ন মন। মায়ের আঁচলে মুখ। বোনের চোখে বুড়িগঙ্গা।
‘শোনেন মাস্টর। ঘটনা যেহেতু ঘইটাই গেছে। দুষ আফনেরও না। আমারও না। ওরা পোলাপান। পোলাপানে ভুল করবই। সেই ভুল শুধরানোর দায়িত্ব আমগো মুরুব্বীগোর-ই। মেয়ে ঘরে ফিরা আইলে আফনেরই কলঙ্ক। আর আমার পোলাও তো অত অযোগ্য না। এলাকার লোকজনরে নিয়া চলেন, আমরা বিয়াডা পড়াইয়া দেই’, ছেলের বাবা কমিশনার এভাবেই নিজের ছেলের সঙ্গে মৌয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেন। স্কুলশিক্ষক বাবার উদভ্রান্ত মনের মধ্যে আকাশ ভাঙা বজ্রপাত হয়।
ফোলা চোখ আবারো ভেঙে পড়ে কান্নায়। আঁচলে ঢাকেন মা। বোন নিজের ঘরে চুপিচুপি।
নীরবতা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না মেয়ের পরিবারে। সবসময় যে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ হয় না, আমরা টের পাই অনেক কিছুতে। সাতদিন আটকে রাখা মৌ। এই দেশের আর এই সমাজের-ই মার্জিত এক তরুণী। নিজেকে নিয়ে দেখা টুকরো টুকরো স্বপ্ন। স্বপ্নেরা দিশেহারা হয়। ভালোবাসা ছাড়া যা হয়, তা তো ধর্ষণ-ই। শরীরের ধর্ষণ। মনের ধর্ষণ। স্বপ্নের ধর্ষণ। সব পেরিয়ে বিয়ের আসরে তরুণী।
কমিশনারের বাড়িতে বসে বিয়ের আয়োজন।
‘বলো মা কবুল’, আবারও বলেন কাজী।
মা কি কাঁদছে। মায়ের শরীরটা কি কান্নার সঙ্গে সঙ্গে কাঁপছে? মীম কোথায়, তাকে তো চোখে পড়ল না। বাবাকে কি কেউ ধরে চেয়ারে বসালো? কত চিন্তা মাথায়।
আর কাজী সাহেব বলে চলছেন, ‘বলো মা কবুল’।