কোলনোস্কপির আগে ও পরে পেট ব্যথা, বমি ও পেট ফাঁপা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

কোলনোস্কপি করাতে যাচ্ছেন? জেনে নিন এই সাতটি তথ্য

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০১৯, ২১:৩১
আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯, ২১:৩১

(প্রিয়.কম) কোলন বা মলাশয়ের কোনো রোগের আশঙ্কা থাকলে রোগীকে কোলনোস্কপি করতে বলেন ডাক্তাররা। এ ছাড়া ৪৫ বা ৫০ বছরের পর রুটিন চেকআপের অংশ হিসেবেও কোলনোস্কপি করাতে বলা হয়। কিন্তু কোলনোস্কপি করার আগে শরীর থেকে মল প্রায় পুরোপুরি বের করে দেওয়ার জন্য একটি ল্যাক্সাটিভ বা জোলাপ পান করতে দেওয়া হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে বারবার মলত্যাগ করতে হয় যাতে কোলনোস্কপি করানোর সময়ের মলদ্বারের ভেতরে পরিষ্কার দেখা যায়।  কোলনোস্কপির চেয়ে এর আগের এই প্রস্তুতি অনেকের কাছে বিরক্তিকর এমনকি ভীতিকর মনে হতে পারে। কিন্তু তা সহজ করে আনার কিছু উপায় আছে। জেনে নিন সে উপায়গুলো-

১) নিজের টয়লেট হ্যাবিট জেনে রাখুন

প্রত্যেকের টয়লেট হ্যাবিট আলাদা। কেউ সকাল সকাল প্রতিদিন পেট খালি করে ফেলেন একদম রুটিন মতো। কারও আবার কোনো রুটিনই নেই। যাদের আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম আছে তাদের এই প্রস্তুতি বেশ কষ্টকর হতে পারে। আবার অনেকের পেট ভালো থাকলেও এই প্রস্তুতির সময়ে পেটব্যথা বা বমি হতে পারে। আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তাহলে আগে থেকেই ডাক্তারকে জানিয়ে রাখুন।

২) কী খাবেন, কী খাবেন না

কোলনোস্কপির দুই-তিনদিন আগে থেকে লো-ফাইবার ডায়েট মেনে চলতে পারেন। যেসব খাবার সহজে হজম হয় ও শরীর থেকে বের হয়ে যায়, সেগুলো এ সময়ে উপকারী, যেমন আলু ভর্তা, ভাত, পাস্তা, রুটি, মুরগির মাংস, ডিম ও দুগ্ধজাত খাবার।

কোলনোস্কপির আগের দিন শুধুই তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া কোলনোস্কপির ৩-৭ দিন আগে থেকে ভুট্টা, বাদাম ও শস্যদানা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি হোল হুইট রুটি বা বিস্কুট, কাঁচা ফল ও সবজি, ডাল ও পপকর্ন খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া ভালো।

৩) ওষুধটি পান করবেন যেভাবে

কোলনোস্কপির আগে অনেকটা ল্যাক্সাটিভ পান করতে দেওয়া হয়। এই তরলটির স্বাদ খুবই বাজে, তাই বেশি পরিমাণে পান করতে অনেকেরই বমি আসতে পারে। এর সঙ্গে অল্প পরিমাণে চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। এর পাশাপাশি আদা বা লেবু মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে লাল বা বেগুনি কিছু মেশাবেন না, তা কোলনোস্কপিতে রক্ত বলে ভুল হতে পারে। দ্রুত পান করার জন্য স্ট্র ব্যবহার করতে পারেন, বা নাক বন্ধ করে চট করে গিলে ফেলতে পারেন। আর পান করার পর এক টুকরো লেবু মুখে নিতে চুষতে পারেন। তবে অবশ্যই কম ল্যাক্সাটিভ পান করবেন না। ডাক্তার যে পরিমাণ পান করতে দেবেন, সে পরিমাণটাই ব্যবহার করুন।

৪) ব্যথা ও বমি ভাব দূর করুন

বারবার টয়লেটে ছোটার ফলে পেটে ব্যথা, ক্র্যাম্প বা বমি ভাব হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এমনটা হলে আধা ঘণ্টার জন্য নিজেকে বিশ্রাম দিন। এই উপসর্গ দূর হলে আবার ল্যাক্সাটিভ পান করতে পারেন। যদি এই সমস্যাটি দূর না হয় তাহলে ডাক্তারকে জানান।

শুধু কোলনোস্কপির আগে নয়, কোলনোস্কপির পরেও অনেকের পেট ফাঁপা ও গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যাটি কয়েক ঘণ্টার মাঝে চলে যাবে।

৫) পশ্চাৎদেশের যত্ন নিন

স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় কাটাতে হবে টয়লেটে, তাই পশ্চাৎদেশের যত্ন নিতে হবে। বারবার টয়লেটে ছোটার কারণে টয়লেট পেপারের ঘর্ষণে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এ সময়ে ভালো মানের টয়লেট পেপার ব্যবহার করুন, বা ওয়েট টিস্যুও ব্যবহার করতে পারেন।

৬) ডাক্তারকে ওষুধের বিষয়ে জানান

আপনি কী ব্যথা দূর করার ওষুধ, সাধারণ প্যারাসিটামল বা কোনো হার্বাল ওষুধ খাচ্ছেন? কোলনোস্কপির আগেই ডাক্তারকে তা জানিয়ে রাখুন। কোলনোস্কপির আগে এসব ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা লাগতে পারে। আপনি যদি ইনসুলিন নেন, তাহলে তা বন্ধ করার অবকাশ নেই, তবে এর পরিমাণ কম-বেশি করতে পারেন ডাক্তার। এ ছাড়া ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খেলে সেটাও জানিয়ে রাখুন।

৭) কোলনোস্কপি কি আসলেই জরুরি?

আপনার বয়স যদি ৪৫ এর বেশি হয়, তাহলে কোলনোস্কপি করাটা জরুরি হতে পারে। তবে আপনার বয়স কম হয়ে থাকলে কোলনোস্কপির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারেন। যাদের কোলন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে, বা কোলনে কোনো পলিপ দেখা দিয়েছিল অতীতে, তাদের জন্য কোলনোস্কপি করানোটা আসলে উপকারী।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

প্রিয় লাইফ/কামরুল