
নারীরা সারাক্ষণই আতঙ্কে থাকেন, তার ছবি হয়তো ছড়িয়ে পড়েছে কোনো পর্নোসাইটে। ছবি: সংগৃহীত
‘মেয়েরা প্রস্রাব করতে যেতেও ভয় পান, কেউ হয়তো ভিডিও করছে’
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮, ২৩:০৬
(প্রিয়.কম) স্পাইক্যাম বা গোপন ক্যামেরায় মেয়েদের ছবি এবং ভিডিওর বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
৭ জুলাই, শনিবার রাজধানী সিউলে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নারী বিক্ষোভ হয়েছে।
তথাকথিত স্পাইক্যাম ভিডিও নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের মধ্যে। স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, টয়লেটে বা চেঞ্জিং রুমে হরহামেশাই গোপনে মেয়েদের ছবি বা ভিডিও স্পাইক্যামে রেকর্ড করছে পুরুষরা।
দক্ষিণ কোরিয়ার আইনে পর্নোগ্রাফি বিতরণ করা নিষিদ্ধ। অথচ এসব ছবি বা ভিডিও আবার শেয়ার করা হচ্ছে অনলাইনে। এ রকম ঘটনার শিকার মেয়েদের কাহিনী প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এর বিরুদ্ধে রীতিমতো গণবিক্ষোভে নেমেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা। শনিবার রাজধানী সিউলে বিক্ষোভে প্রায় ৫৫ হাজার নারী যোগ দেন বলে জানান বিক্ষোভের আয়োজকরা। এদের বেশির ভাগই টিনএজার, যারা কি না এ রকম স্পাইক্যাম পর্নোগ্রাফির শিকার হয় বেশি।
২২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি আর আমার বন্ধুরা সারাক্ষণ কিন্তু এই স্পাইক্যামের আতঙ্কে থাকি। যখনই কোনো পাবলিক টয়লেটে যাই, কোনো দেয়ালে বা কোনো ছিদ্রের মধ্যে বা দরোজায় কোনো সন্দেহজনক কিছু লুকোনো আছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া এখন কী ধরনের একটা দেশে পরিণত হয়েছে? এখানে মেয়েরা এখন প্রস্রাব পর্যন্ত করতে যেতে পারে না, তাদের আতঙ্কে থাকতে হয় যে কেউ গোপনে তাদের ভিডিও করছে কি না।’
দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর প্রযুক্তির দেশগুলির একটি বলে গর্ব করে। দুর্দান্ত গতির ব্রডব্যান্ড থেকে শুরু করে সর্বাধুনিক স্মার্টফোন, সবকিছুতেই এগিয়ে তারা। পাঁচ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষের হাতেই আছে স্মার্টফোন। কিন্তু এই প্রযুক্তিই আবার সর্বনাশ নিয়ে এসেছে তাদের জন্য। সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তিকে এক শ্রেণির মানুষ গোপনে মেয়েদের ছবি বা ভিডিও তোলার কাজে ব্যবহার করছে।

২০১০ সালে যেখানে ‘স্পাইক্যাম অপরাধের’ সংখ্যা ছিল ১১০০, গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ছয় হাজারে। এসব অপরাধের শাস্তি বড়জোর জরিমানা বা স্থগিত জেলবাস, যাকে নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলো একেবারেই লঘুদণ্ড বলে বর্ণনা করছে।
স্পাইক্যাম অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা মূলত পুরুষ। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, স্কুল শিক্ষক, ডাক্তার থেকে শুরু করে গির্জার পাদ্রি, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ অফিসার এমনকি বিচারক পর্যন্ত রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এই স্পাইক্যামের ব্যাধি এতটাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে সরকার নিয়ম করেছে, সেখানে যেসব স্মার্টফোন বিক্রি হবে, সেগুলোতে ক্যামেরায় ছবি বা ভিডিও তোলার সময় শাটারে জোরে শব্দ হতে হবে। কিন্তু তাতেও ফল হচ্ছে না। অনেকে স্মার্টফোনে অ্যাপস ডাউনলোড করে এই শব্দ ‘মিউট’ করে দিচ্ছে। এ ছাড়া আরও অনেক অত্যাধুনিক ক্যামেরার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। চোখের চশমা, সিগারেটের লাইটার, ঘড়ি, গাড়ির চাবি, এমনটি গলায় পরা টাইয়ের মধ্যে পর্যন্ত লুকিয়ে রাখা যায় এই ধরনের ক্যামেরা।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন গত মে মাসে এই স্পাইক্যাম মহামারির বিরুদ্ধে কঠোর সাজার বিধান করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
প্রিয় সংবাদ/শান্ত