আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ছবি: সংগৃহীত

‘জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য-লক্ষ্মী নারী’

ওমর ফারুক
সহ-সম্পাদক এসবিসি ৭১ডটকম।
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০১৮, ১০:৩০
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮, ১০:৩০

(প্রিয়.কম) ‘যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’

মানবসভ্যতার বিকাশে নারী ও পুরুষের অবদান সমান। নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। কিন্তু পুুরুষতান্ত্রিক সমাজের উত্থানে ধীরে ধীরে নারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। কিন্তু নারী পুরুষে ভেদাভেদে তো মানুষ জাতিকেই বরং খাটো করা হয়। স্নেহে, মায়ায়, মমতায় নারী মাতা, ভগিনী; আর প্রেমে, পূজায়, নিবেদনে নারী প্রিয়া। আর কবি বলেছেন,   

‘জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য-লক্ষ্মী নারী,
সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি।
পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ,
কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি-সাহস, নিশীথে হয়েছে বধূ,
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে, নারী যোগায়েছে মধু।’

আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস। যার আদি নাম আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস। প্রতি বছরের মার্চের ৮ তারিখে এই দিবসটি সারা বিশ্বে পালন করা হয়। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারী দিবস উদযাপন হয় এক এক রকম। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও নারীদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।

কবে থেকে কি ভাবে এই দিবসের সূচনা হয়?

১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটি সূচ কারখানার নারী শ্রমিকরা কারখানার মানবেতর পরিবেশ, অসম মজুরি ও ১২ ঘণ্টা কর্মদিবসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সেদিন তারা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। 

কিন্তু পুলিশ নিরীহ নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায় এবং অনেককে বন্দী করে। পুলিশি অত্যাচারের দিনটি স্মরণ রেখে নিউ ইয়র্কের সূচ কারখানার নারী শ্রমিকরা ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ একত্রিত হয়ে নারী শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে। তাদের আন্দোলন এগিয়ে চলে। এক সময় তাদের আন্দোলন কারখানা ও ইউনিয়নের সীমা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়ে।

১৯০৮ সালে নিউ ইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্ব প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন পালন করা হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের এক জন।

এরপর ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছরের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।

সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ সালে থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এর পর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে।

বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তার মধ্যে আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া, চিন, ম্যাসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার ও নেপালে শুধু নারীরাই সরকারি ছুটি পেয়ে থাকেন। 

প্রিয় সংবাদ/ফারজানা/রুহুল