ছবি সংগৃহীত

৪০০,০০০ বছর পুরাতন জীবাশ্ম বদলে দিল মানব বিবর্তনের ইতিহাস!

Saiyara Aditi
লেখক
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৩, ০৪:০৭
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৩, ০৪:০৭

বিজ্ঞানীরা মানুষের জৈবিক ইতিহাসের প্রাচীনতম ডিএনএ-এর সন্ধান পেয়েছে, যার ফলে মানব বিবর্তনের হাজারও নতুন রহস্য উন্মুক্ত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত বুধবার জার্নাল নেচারের একটি পেপারে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর প্রাচীনতম মানুষের ডিএনএ পাওয়ার এই খবর জানান। খুঁজে পাওয়া এ জীবাশ্মের বয়স প্রায় ৪০০ হাজার বছর, যা আগের পাওয়া ১০০,০০০ বছরের রেকর্ডকে ভেঙ্গে দিয়েছে। স্পেনে পাওয়া এই জীবাশ্ম, মূলত এটি একটি ঊরুর হাড়। ধারণা করা হয়েছিল নিয়ানডার্থাল নামক মানুষের আদিম প্রজাতিটি তার পূর্বসরী, কিন্তু ডিএনএ বলছে অন্য কথা। ডিএনএ-তে পাওয়া তথ্য মতে এটা ডেনিসোভেন্স নামের এক মানব প্রজাতির জীবাশ্ম, যা প্রথমবার সাইবেরিয়ায় পাওয়া গিয়েছিল। তবে সেটা ছিল ৮০,০০০ বছর পুরাতন এবং এবার পাওয়া ডিএনএ থেকে পূর্ব দিকে ৪০০ মাইল দূরে অবস্থিত। এই শারীরিক এবং জেনেটিক প্রমাণের মধ্যে অমিল এখন বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে যার কারনে তারা মানব বিবর্তনের ইতিহাসকে শত হাজার বছর পুরাতন বলে ধারণা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখনো বিলুপ্ত এমন অনেক প্রজাতি আছে যাদের ব্যাপারে আমরা সঠিক জানিনা। এবং তাদের মাদ্ধমেই বংশানুক্রমিক ভাবে এই ডিএনএ গুলো এসেছে। অত্যন্ত প্রাচীন মানবের এই ঊরুর অস্থি তথা ডিএনএ আরও রহস্যের দ্বার উন্মোচন করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

জার্মানির লিপজিগের ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট এর প্রজনন বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ মাত্থেইয়াস মেয়ের বলেছেন, “বর্তমানে এটা আমাদের জন্য মূলত একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।” বিবর্তনের ইতিহাসের লুকানো অধ্যায়ের প্রমাণ, ৪০০ হাজার বছর বয়সী এই ঊরুর হাড় স্পেনের সিমা দে লস হুএসোস (স্প্যানিশ ভাষায় "হাড় খন্দ") নামক গুহায় পাওয়া গেছে। বৈজ্ঞানিক দল এ প্রাচীন জীবাশ্ম থেকে নতুন আবিষ্কৃত পদ্ধতির ব্যবহার করে ডিএনএ বের করে। এই আবিষ্কারের সহ-আবিষ্কারক ও ইউনিভার্সিডাড কমপ্লুটেন্স দে মাদ্রিদ এর নৃতত্ববিদ জুয়ান লুইস অরসুয়াজা, যিনি প্রায় তিন দশক ধরে খননকার্য করে ২৮ জন প্রাচীন মানুষের প্রায় সম্পূর্ণ কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছেন। তার মতে, "এটি এমনকি এক বছর আগেো করা সম্ভব ছিল না। ” তিনি আরও বলেছেন, ১৯৭০ সাল থেকে স্প্যানিশ বিজ্ঞানীরা শত সহস্র বছর পুরাতন গুহা থেকে বহুসংখ্যক জীবাশ্ম সম্পদ খুঁজে বের করেছে। খুঁজে পাওয়া এ ফসিলের হাড়ের গঠন দেখে তার ধারণা ছিল, এটা ২০০,০০০ থেকে ৩০০,০০০ বছর পুরাতন এবং পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে বসবাসকৃত নিয়ানডার্থালদের অংশ বিশেষ। যখন ডঃ মেয়ের এবং তার সহকর্মীরা এই উরুর হাড়ের ডিএনএ দেখেন, তখনো এই ফসিলকে বেশ প্রাচীন নিয়ানডার্থাল মনে করেন। কিন্তু এই ডিএনএ এর সাথে নিয়ানডার্থাল এর ডিএনএ-এর মিল পাওয়া যায়নি। পরে ডঃ মেয়ের এবং তার সহকর্মীরা ২০১০ সালে সাইবেরিয়ায় আবিষ্কৃত ডেনিসোভেন্স নামের প্রাচীন মানব বংশের ডিএনএ এর এটি তুলনা করেন এবং তাদের মাঝে মিল খুঁজে পান। ডঃ মেয়ের বলেন, "কারো কাছে প্রথমে এটি বিশ্বাসযোগ্য না হতে পারে, তাই আমরা এর থেকে যত সম্ভব তথ্য বের করার চেষ্টা করছি।”
নতুন এ জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর প্রাচীন ডিএনএ উপর ভিত্তি করে তৈরি মানব বিবর্তনের ইতিহাসের বেশ পরিবর্তন এসেছে। ডেনিসোভেন্সকে পূর্ব এশিয়ায় সীমাবদ্ধ মনে করা হয়েছিল, এবং তাদের নিয়ানডার্থালের মত চেহারা হবে বলে ধারণা করা হয় নি। আবিষ্কৃত প্রাচীন ডিএনএ এবং জীবাশ্মের প্রমাণের উপর ভিত্তি করে, বিজ্ঞানীরা মানুষের সরাসরি পূর্বপুরুষ হিসাবে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকায় বসবাসরত নিয়ানডার্থাল ও ডেনিসোভেন্সকে অবিহিত করেছেন। বিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ৩০০,০০০ থেকে ৪০০,০০০ বছর আগে নিয়ানডার্থাল ও ডেনিসোভেন্স এর আবাস্থল ছিল আফ্রিকা। কিন্তু পরে নিয়ানডার্থাল পশ্চিমে ইউরোপের দিকে যাত্রা করে এবং ডেনিসোভেন্স পূর্বে যাত্রা করে। এবং প্রায় ২০০,০০০ বছর আগে নিয়ানডার্থাল ও ডেনিসোভেন্সের সম্মিলনে সংকর প্রাণী হিসেবে মানুষের উৎপত্তি হয়। তখন থেকেই ধীরে ধীরে নিয়ানডার্থাল ও ডেনিসোভেন্সের বিলুপ্তি ঘটে। তবে ডঃ অরসুয়াজা, নিয়ানডার্থাল ও ডেনিসোভেন্সের স্পেন থেকে সাইবেরিয়া এই বিশাল ব্যপ্তি দেখে সন্দিহান, তার মতে এক বিকল্প ব্যাখ্যা হল সিমা দে লস হুএসোস এ প্রাপ্ত হাজার বছরের পুরাতন এ জীবাশ্ম নিয়ানডার্থালের নয়, কিন্তু নিয়ানডার্থাল ও ডেনিসোভেন্স উভয়ের সম্মিলিত কোন পূর্বপুরুষের। এছাড়া এটিও সম্ভব যে এই ফসিল এমন কোন প্রজাতির জীবাশ্ম, যা নিয়ানডার্থাল ও ডেনিসোভেন্স উভয়কে অতিক্রম করে এবং এক পর্যায়ে নিয়ানডার্থাল থেকে বিলুপ্ত হয়ে সম্পূর্ণ আলাধা একটি প্রাণী হিসেবে আবির্ভূত হয়। তবে যাই হোক না কেন, ডঃ মেয়ের তিনি এবং তার সহকর্মীরা আশাবাদী যে তারা স্প্যানিশ ফসিলের প্রাপ্ত জায়গা ও আশেপাশের অন্যান্য জায়গা থেকে আরও জীবাশ্ম সংগ্রহ করে তার ডিএনএ দিয়ে ধাঁধা সমাধানের চেষ্টা করবে। যা নিঃসন্দেহে মানব ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।