ছবি সংগৃহীত

১০ শর্তে আবাসন বা রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বৈধ অন্যথা অবৈধ!

priyo.Islam
লেখক
প্রকাশিত: ০৯ আগস্ট ২০১৫, ০১:২১
আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০১৫, ০১:২১

সুন্দর একটি বাড়ি মানুষের জীবনে লালিত একটি স্বপ্ন, প্রশান্তি লোভের জায়গা, সর্বোপরি এটি মহান আল্লাহর অপার নিয়ামত, যা তিনি বান্দাকে দান করেন। আল্লাহ বলেছেন, 'আর আল্লাহ তোমাদের ঘরগুলোকে তোমাদের জন্য আবাস করেছেন এবং তোমাদের পশুর চামড়া দিয়ে তাঁবুর ব্যবস্থা করেছেন, যা খুব সহজেই তোমরা সফরকালে ও অবস্থানকালে বহন করতে পার। আর তাদের পশম, তাদের লোম ও তাদের চুল দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গৃহসামগ্রী ও ভোগ-উপকরণ (তৈরি করেছেন)। আর আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং পাহাড় থেকে তোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন, আর ব্যবস্থা করেছেন পোশাকের, যা তোমাদের গরম থেকে রক্ষা করে এবং বর্মেরও ব্যবস্থা করেছেন, যা তোমাদের রক্ষা করে তোমাদের যুদ্ধে। এভাবেই তিনি তোমাদের ওপর তার নেয়ামতকে পূর্ণ করবেন, যাতে তোমরা অনুগত হও।' (সূরা নাহল : ৮০-৮১)। মানুষের জীবনে ঘরবাড়ির গুরুত্ব অপরিসীম বলে ইসলাম এ সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। মুসলিম হিসেবে আমাদের সব কাজই হওয়া উচিত ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী। তাহলে আবাসন ক্ষেত্রে ব্যয় করেও সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে। জীবনের অনস্বীকার্য উপাদান ও মানবিক চাহিদার বিবেচনায় ইসলামী শরিয়ত আবাসন নির্মাণ বৈধ করেছে এবং এ সম্পর্কে কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করেছে। সেগুলো হলো- ১. অন্যের ক্ষতি বা হক নষ্ট না করা। ইসলামের প্রতিটি বিধানের মূলই হলো কাউকে কষ্ট না দিয়ে এবং কারও প্রতি সীমা লঙ্ঘন না করে নিজের মালিকানা ভোগ করা। রাসুল (সা.) বলেন, 'ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহ্য করাও যাবে না।' (ইবনে মাজাহ : ২৩৪০)। ২. প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নানা কারণে প্রতিবেশীর ক্ষতি সাধিত হয়, যেমন-ধোঁয়া, দুর্গন্ধ, উচ্চশব্দ, রাস্তার অপব্যবহার, দরজা ও জানালা দিয়ে কারও ঘরের দিকে দৃষ্টিপাত করা ইত্যাদি। সুতরাং অন্যকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে গৃহনির্মাণ করা হারাম। এমনকি কাউকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য না থাকলেও জমির মালিকের কার্যক্রমে যদি ক্ষতির আশঙ্কা থাকে ফিকহবিদদের মতে তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখা হবে। যেমন-কেউ তার জমিনের সীমানায় যদি কাঁটাযুক্ত গাছ লাগায় বা এমনভাবে গৃহনির্মাণ করল যা অন্যকে আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত করে; মোট কথা হলো, যথাসাধ্য অন্যের ক্ষতি না করে নিজের মালিকানা উপভোগ করার চেষ্টা করা। ৩. গৃহনির্মাণের স্থান ও উপকরণ হালাল হওয়া। জোরপূর্বক অন্যের জায়গায় বাড়িঘর নির্মাণ করলে তা মালিককে ফেরত দিতে হবে। ৪. অপ্রয়োজনে উঁচু অট্টালিকা তৈরি, নির্মাণ কাজে অপব্যয়, জালিম ও অমুসলিমদের অনুসরণ না করা। কেননা অতি উঁচু ভবন নির্মাণ কেয়ামতের আলামত, আর এটা কখনও কখনও অহঙ্কারের কারণ। তবে প্রয়োজন হলে উঁচু ভবন নির্মাণে কোনো বাধা নেই। হাদিসে জিবরিলে এসেছে, 'আগন্তুক বললেন, আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল (সা.) বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল (সা.) বললেন, তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে; আর নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে।' (বোখারি : ৪৭৭৭)। ৫. তাছাড়া গৃহকে অতি সাজে সজ্জিত করা, কারুকার্য করা মাকরূহ। কেননা মানুষ এ জগতে স্থায়ী নয়, এখানে প্রয়োজন অনুসারে মানুষের জীবন অতিবাহিত করা উচিত। হাদিসে এসেছে, আবু তালহা আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, ফেরেশতারা সে ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কোনো কুকুর কিংবা কোনো মূর্তি থাকে। বর্ণনাকারী জায়দ ইবনে খালিদ (রহ.) বলেন, পরে আমি আয়েশা (রা.) এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ইনি (আবু তালহা) আমাকে বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ফেরেশতারা সে ঘরে প্রবেশ করেন না, যে ঘরে কোনো কুকুর কিংবা মূর্তি থাকে। আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে এ বিষয়ে আলোচনা করতে শুনেছেন?' তিনি বললেন, 'না। তবে আমি তাঁকে যা করতে দেখেছি, তার বর্ণনা তোমাদের দিচ্ছি। আমি তাকে দেখেছি, তিনি (কোনো) যুদ্ধে বেরিয়ে গেলেন। তখন আমি একটি মসৃণ চাদর সংগ্রহ করলাম এবং তা দিয়ে দরজার পর্দা বানালাম। তিনি ফিরে এসে যখন চাদরটি দেখতে পেলেন, তখন তার চেহারায় আমি অসন্তুষ্টির আলামত প্রত্যক্ষ করলাম। তিনি তা টেনে নামিয়ে ফেললেন, এমনকি তা ছিঁড়ে ফেললেন অথবা টুকরো টুকরো করে ফেললেন। আর বললেন, মহান আল্লাহ পাথর কিংবা মাটিকে পোশাক পরানোর হুকুম আমাদের দেননি।' আয়েশা (রা.) বলেন, 'আমরা চাদরটি কেটে দুইটি বালিশ বানালাম এবং সে দুইটির ভিতরে খেজুর গাছের অংশ ভরে দিলাম। তাতে তিনি আমাকে দোষারোপ করলেন না।' (মুসলিম : ২১০৭)। তবে কেউ যদি আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের জন্য কারুকার্য ও সৌন্দর্য করে তবে তা জায়েজ। ৬. আপনার গৃহটি যেন স্থায়িত্ব, শক্ত, মজবুত ও হালাল উপকরণ দ্বারা তৈরি হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা বান্দার মজবুত ও নিপুণ কাজ পছন্দ করেন। আল্লাহ বলেছেন, 'আর বল, তোমরা আমল করো। অতএব, অচিরেই আল্লাহ তোমাদের আমল দেখবেন, তাঁর রাসুল ও মোমিনরাও। আর অচিরেই তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানীর কাছে। অতঃপর তিনি তোমাদের জানাবেন যা তোমরা আমল করতে সে সম্পর্কে।' (সূরা তওবা : ১০৫)। ৭. পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, পানির সুব্যবস্থা ও পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে মসজিদের আশপাশে গৃহনির্মাণ উত্তম। কেননা মসজিদ ছাড়া মোমিনের জীবন যেন পানি ছাড়া মাছের মতো। ৮. আপনার স্বপ্নের বাড়িতে পরিবার পরিজনের সতর (গোপনীয়তা) যেন উত্তমরূপে রক্ষা হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখবেন। দরজা-জানালা এমনভাবে তৈরি করা, যেন অন্য ঘর থেকে তাকালে সরাসরি মানুষের চোখ না পড়ে। বিশেষ করে ঘরের একই দিকে সব দরজা দেয়া ঠিক নয়, এতে সামনের রুম থেকে ভেতরে তাকালে অনায়াসেই অন্দরমহলের সব কিছু দেখা যায়। ঘরের ছাদে কেউ আরোহণ করলে তাকেও খেয়াল রাখতে হবে, সে যেন অন্য কারও ঘরের দিকে তাকিয়ে তাদের বিব্রত না করে। ৯. ঘরের মধ্যে ছেলে-মেয়ে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। মেহমানদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকা চাই। নারী-পুরুষ যেন পর্দার বিধান রক্ষা করে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে সে ব্যবস্থাও রাখতে হবে। ১০. আপনার আত্মীয়স্বজন, এমনকি কাজের ছেলে-মেয়েটিও যেন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় গৃহনির্মাণের সময় সেদিকেও খেয়াল রাখবেন। সর্বোপরি, ইসলাম মানুষের জান, মাল, ইজ্জত হেফাজতে সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলোর দিকে খেয়াল রেখেই সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্দর পরিবেশে বাসস্থান নির্মাণ করা উচিত। লিখেছেন : আবদুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী সৌজন্যে : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ