আপনি যদি খুব সহজে আপনার কম্পিউটারে একটি নোট টুকে রাখতে চান যেটি কিনা আপনার মনিটরে স্টিকি হয়ে থাকবে তবে উইন্ডোজ ৭ এর 'স্টিকি নোট' অ্যাপলিকেশনটি এক্ষেত্রে আপনাকে খুব ভালো সেবা প্রদান করবে। 'স্টিকি নোট' নতুন কিছু নয় এবং উইন্ডোজ ৭ এর সাথেই প্রথম আসা এই অ্যাপলিকেশনটি খুব বিষ্ময়কর কিছুও নয়, তবে যেহেতু শিরোনামেই লিখেছি যে আজকের এই ব্লগ পোষ্টটি মূলত নতুন কম্পিউটারের ব্যবহারকারীদের জন্য, তাই বলতে চেষ্টা করব বিস্তারিতই। আর নিশ্চয়ই সাথে থাকবে কিছু এক্সট্রা তথ্য যা আশা করি আপনাদের কাজে লাগবেই। তাহলে, চলুন - স্টিকি নোট অ্যাপটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জেনে নেয়া যাক।

প্রাথমিক কিছু কথা

আপনি যদি এই টিউটোরিয়ালটি দেখার আগে 'স্টিকি নোট' অ্যাপলিকেশনটি ব্যবহার না করে থাকেন তবে হয়ত এতক্ষনে আপনি স্টিকি নোটের সন্ধানে ডেস্কটপের গ্যাজেট গ্যালারী দেখে নিয়েছেন। তবে উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমে এই অ্যাপটি আপনি গ্যাজেট গ্যালারীতে পাবেন না তবে আরও সহজে স্টার্ট মেন্যুতেই পেয়ে যাবেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই অ্যাপলিকেশনটি আসলে উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমের সাথেই প্রথম আসেনি। এটি উইন্ডোজ ভিস্তায় ছিল গ্যাজেট আকারে। সেই উইন্ডোজ ভিস্তায় ব্যবহৃত গ্যাজেটই উইন্ডোজ ৭-এ নতুন করে 'স্টিকি নোট' অ্যাপলিকেশন হিসেবে এসেছে। আপনি স্টার্ট মেন্যু থেকে সার্চ করেও এটি পেতে পারেন অথবা Start menu > Accessories এর ভিতরেও পাবেন। 'স্টিকি নোট' অ্যাপলিকেশনটি খুব সাধারন একটি অ্যাপলিকেশন হলেও প্রয়োজনের সময় মনে করার জন্য দ্রুত কোন নোট টুকে রাখতে বলা চলে খুবই পারদর্শী। যেমন, হঠাত করে হয়ত আপনার কোন অ্যাড্রেস বা টেলিফোন নম্বর বা প্রয়োজনীয় কিছু লিখে রাখতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে হাতের কাছে কাগজ কলম না থাকলেও চলবে। ডিফল্ট ভাবে এই অ্যাপলিকেশনটি হলুদ রঙের ব্যাকগ্রাউন্ড বিশিষ্ট হয়ে থাকে যাতে সিজো নামের একটি ফন্ট ব্যবহার করা হয় এবং ফন্ট সাইজ থাকে ১১। আপনি খুব সহজেই এই নোটের রঙ মাউসের রাইট-ক্লিকের মাধ্যমে পরিবর্তন করে নিতে পারেন। আপনি যদি কোন টেক্সট স্টিকি নোট অ্যাপ্লিকেশনটিতে পেস্ট করেন, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি পেস্ট করা লেখাটির আসল ফরম্যাটটিই ব্যবহার করে থাকে। আর লেখার পরিমান যদি বড় হয়ে থাকে তবে আপনি নোটের ডান পাশে একটি স্ক্রল বার দেখতে পারবেন যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই স্ক্রল করে নিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, আপনি নোটটির কর্নারে মাউসের ক্লিকের মাধ্যমে সহজেই ড্রাগের মাধ্যমে নোটের আকার পরিবর্তনও করে নিতে পারবেন। একটি নতুন নোট তৈরী করার জন্য বাম দিকের উপরে কর্নারে অবস্থিত 'যোগ' চিহ্নে ক্লিক করতে হবে আর যদি মুছে দিতে চান একটি নোট তবে ডান দিকের কর্নারে থাকা X এ ক্লিক করলেই নোটটি মুছে যাবে। তবে মুছে দেয়ার ক্ষেত্রে উইন্ডোজ ডাবল চেক করে দেখবে যে সত্যিই আপনি নোটটি মুছে দিতে চাচ্ছেন কি না। আপনি যদি এই ডাবল চেকে বিরক্ত হন তবে 'Don't display this message again' বক্সে ক্লিক করলেই আর এই ডায়লগ বক্সটি পরবর্তী সময়ে আর আসবেনা। আপনি যে স্টিকি নোট গুলো লিখবেন সেগুলো নিচের লোকেশনে জমা হয়ে থাকবেঃ

%AppData%\Microsoft\Sticky Notes\StickyNotes.snt

লোকেশনটিতে আপনার নোটটি মূলত স্ট্যান্ডার্ড ফর্মে জমা থাকবে না। তাই, আপনি যদি আপনার নোট একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে নিয়ে যেতে চান তবে আপনি ফাইলগুলো কপি করে নিতে পারেন।

স্টিকি নোটের টেক্সট গুলো ফরম্যাট করবেন যেভাবে

'স্টিকি নোট' অ্যাপলিকেশনটি টেক্সট ফরম্যাটের জন্য আলাদা টুল ব্যবহার করার সুবিধা না দিলেও এটি মূলত বেশ কিছু কমন কী-বোর্ড শর্ট কাট সাপোর্ট করে থাকে। যেমনঃ ♦ Ctrl+B - Bold ♦ Ctrl+I - Italics ♦ Ctrl+U - Underline ♦ Ctrl+T - Strikethrough আপনি যদি উপরের কোন একটি ফরম্যাটিং ব্যবহার করতে চান তবে আপনার প্রয়োজন মত শর্ট কাট কী প্রেস করবেন এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবার জন্য ঐ শর্ট কাট কী-টিই আবার প্রেস করতে হবে। এছাড়াও আপনি আপনার নোটে টেক্সট গুলোর অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নিচের শর্ট কাট কী গুলো ব্যবহার করতে হবে। ♦ Ctrl+L – left ♦ Ctrl+E – Center ♦ Ctrl+R – Right আপনি একটি সিম্পল আউটলাইনও তৈরী করতে পারবেন 'স্টিকি নোট' অ্যাপলিকেশন দিয়ে। আউটলাইন অথবা লিস্ট তৈরী করতে হলে নিচের শর্ট কাট কী প্রেস করতে হবে আপনাকেঃ

Ctrl+Shift+L

এর ফলে আপনি বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করতে পারবেন। যদি আপনি আবার এটি প্রেস করেন তবে নিচের ছবিটির মত অপশন গুলো পরিবর্তন হতে থাকবে। এরকম চাপতে চাপতে ৭ বারের সময় গিয়ে আবার নরমাল প্লেইন টেক্সট মোড অ্যাকটিভ হবে। আউটলাইনের ক্ষেত্রে পরবর্তী তালিকার জন্য আপনাকে শুধুমাত্র এন্টার প্রেস করতে হবে, ঠিক মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতই। এই সুবিধাটি কোন শিডিউল তৈরীর সময় খুবই কাজে আসে।

উইন্ডোজ ৭-এর সাথে ইন্টিগ্রেশন

উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে স্টিকি নোট খুব চমৎকার ভাবে ইন্টিগ্রেট করা আছে। আপনি চাইলেই জাম্প লিস্ট থেকে একটি নতুন নোট তৈরী করতে পারেন। আপনি যদি টাস্কবারে এই অ্যাপলিকেশনটি পিনড করে রাখেন তবে আপনি খুব দ্রুত এই কাজটি করতে পারবেন। আপনার কম্পিউটারটি বন্ধ করার সময় যদি কোন নোট খোলা অবস্থায় থেকে থাকে তবে পরবর্তী সময়ে কম্পিউটার চালু করার সময়ে আপনি নোটগুলো খোলা অবস্থাতেই পাবেন। অনেক গুলো নোট খোলা অবস্থায় রাখলে টাস্কবারে অথবা Alt+Tab ভিউ-তে নোটগুলোকে ইন্ডিভিজ্যুয়াল হিসেবে প্রদর্শন করেনা তবে টাস্কবারে মাউস রাখলে আপনি নোটগুলোর একটি aero প্রিভিউ দেখতে পারবেন। এছাড়াও উইন্ডোজ আপনার স্টিকি নোটগুলোকে ইন্ডেক্স আকারে জমা করে থাকে এবং এর ফলে খুব সহজেই আপনি স্টার্ট মেন্যু সার্চ থেকেও নোটগুলো পেতে পারেন। আপনি যদি সার্চ রেজাল্টে এমন কোন ইনপুট লিখে থাকেন যা আপনি নোটে লিখে রেখেছেন তবে আপনি নোটটিকে সহজেই খুঁজে পাবেন।

শেষকথা

আমি শুরুতেও বলেছি যে এটি হয়ত খুব জনপ্রিয় বা খুব প্রয়োজনীয় অ্যাপের মাঝে পরবেনা তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ছোট্ট অ্যাপলিকেশনটি কিছুটা হলেও কাজে লাগে। আর এই ব্লগ পোষ্টটি মূলত নতুনদের জন্য তাই আশা করি যারা স্টিকি নোট এখন পর্যন্ত ব্যবহার করে দেখেন নি তাদের কিছুটা হলেও কাজে আসবে আজকের ব্লগটি। আর যদি তা না হয়, তবে চোখ রাখুন প্রিয় টেকের পাতায়, শীঘ্রই নতুন কিছু নিয়ে হাজির হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকবেন।