ছবি সংগৃহীত

সিনেমায় অভিনয়ে অনেক টেকনিক্যাল হতে হয়: শতাব্দী ওয়াদুদ

mithu haldar
লেখক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১৪:২৮
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১৪:২৮

ছবি: নাঈম প্রিন্স ও শামছুল হক রিপন।

(প্রিয়.কম) শতাব্দী ওয়াদুদ মূলত একজন মঞ্চ অভিনেতা। মঞ্চ থেকে টেলিভিশন এবং তারপর যাত্রা চলচ্চিত্রে। সব মাধ্যমেই দক্ষ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। তবে ফুল কুমার, রূপান্তর, মেহেরজান, আয়না কাহিনী ইত্যাদি চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও ‘গেরিলা’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সকলের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। বর্তমানে অভিনয় করছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে। এখানে তার চরিত্র পুলিশের এডিসি। চলচ্চিত্রে অভিনয় ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রিয়.কমের সঙ্গে।

প্রিয়.কম: মঞ্চ, সিনেমা,নাটক, তিন মাধ্যমে সমানতালে কাজ করে চলছেন। প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে রূপদান করতে গিয়ে চরিত্রের দিক থেকে নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করেন?
শতাব্দী ওয়াদুদ: প্রত্যেকটি মাধ্যমেই চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে তৈরি করতে কম বেশি পরিশ্রম করতে হয়। থিয়েটারে আমার অঙ্গ প্রতঙ্গ সব টু ডায়মেনশনাল জায়গায় দেখতে পাই। সিনেমাতে অনেক বেশি ক্লোজ দেখানো হয়। তবে উপস্থাপন ভঙ্গিটায় শুধু পরিবর্তন থাকে। মঞ্চের সাথে চলচ্চিত্র আর নাটকের পার্থক্য হচ্ছে, যতটুকু ফ্রেমে আছে ততটুকুই দুনিয়া। এর বেশি কিছু নয়। চলচ্চিত্র ও নাটকে কাজ করতে এসে অনেক বেশি টেকনিক্যাল হতে হয়। যেটা মঞ্চের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় না। সিনেমায় নিজেকে উপস্থাপন করতে হয় টেকনিক্যাল ভাবে। যেহেতু তখন আমার চারপাশে সার্বক্ষণিক লাইট, ক্যামেরা, মেকআপ থাকে। আবার থিয়েটারের ক্ষেত্রে আমাকে কথা বলার সময় এমনভাবে বলতে হচ্ছে যাতে মাইক্রোফোনে বাতাসটা না লাগে। বা আমার সহ অভিনেতার সাথে নিজে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে অভিনয় করতে পারছি কিনা, সেটি খেয়াল রাখতে হয়। আর অভিনয়ের চর্চাটা তো নিয়মিত করতেই হবে।

প্রিয়.কম: একজন অভিনয়শিল্পীর কি কি গুণ থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন?
শতাব্দী ওয়াদুদ: তারঁ সৎ ইচ্ছা থাকতে হবে যে- আমি শিল্পের চর্চা করবো। আমি শিল্পী হতে পারব কি না জানি না। আর প্রতিনিয়ত সহ-শিল্পীর কাছ থেকে তো শিখছিই। সঠিক অনুশীলন থাকতে হবে। তবে ভুল অনুশীলন করে কোন লাভ নেই। শিল্পী হতে হলে প্রচণ্ড পরিশ্রমী হতে হবে। আর আগে যদি গোল নির্ধারণ করা থাকে, তাহলে কিন্তু হবে না। কারণ বড় কোন অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রীকে লক্ষ্য করে সামনে এগুলো আপনি বড় কিছু হতে পারবেন না। এমনও তো হতে পারে, আপনি তাঁর চেয়ে আরও বড় শিল্পী হতে পারেন। শিল্পী মানেই কিন্তু বিনয়ী। তাই শিল্পীকে বিনয়ী হতে হবে। নিজের কাজটা নিজের ভালোবাসতে হবে।

প্রিয়.কম: একজন শিল্পীকে প্রতিনিয়ত গড়তে হয় নানাভাবে। বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ঘুরাঘুরিসহ অনেক কিছু করতে হয়। তো আপনি সর্বশেষ কোন সিনেমাটি দেখেছেন?
শতাব্দী ওয়াদুদ: সর্বশেষ আমি দেখেছি ‘অ্যাগ্রো’ ছবিটি। যদিও এটি আমি পঞ্চমবারের মত দেখেছি। অ্যাকশন মুভি আমি খুব দেখি। গতকাল রাতেও একটি ছবি দেখেছি-‘হাফ পাস্ট ডেথ’ ।

প্রিয়.কম: আপনাকে চরিত্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরতে হয়, পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলোকে মাথায় রাখেন?
শতাব্দী ওয়াদুদ: আমি যখন কোন চরিত্রে অভিনয় করি, তখন চরিত্রটিকে কিন্তু আমি নিজেরমত করে সাজিয়ে নেই। সে চরিত্রটি কি কি করে, সেটিতে বেশি মনোযোগ দেই। চরিত্র এবং পোশাক এ দুটোর মেলবন্ধনটা ভালো হতে হবে। মাঝে মাঝে চরিত্রের সাথে পোশাক অনেক সময় মনঃপুত হয় না। সবসময় যে আমি ঠিক তা কিন্তু নয়, আমারও ভুল হয়। এটি তো একটি টিম ওয়ার্ক। তাই সবার সাথে বসেই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হয়।

প্রিয়.কম: মেকআপ নিয়ে আপনি কতটুকু সচেতন?
শতাব্দী ওয়াদুদ: আমাদের দেশে মেকআপ নিয়ে বেশি এক্সপেরিমেন্ট করতে পারি না। কারণ আমাদের দেশে সে সুযোগটা নেই। সেক্ষেত্রে ঠাণ্ডা থাকতে হয়। যাতে শিল্পী ঘেমে না যায় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। আমাদের দেশে তো ক্যারাভ্যানও তো নেই। আমাদের দেশে আউটডোরে তাপমাত্রাও থাকে অনেক বেশি। বাস্তবজীবন থেকে আমি যে চরিত্রটিতে অভিনয় করবো, সেক্ষেত্রে মেকআপের একটি আলাদা ভূমিকা রয়েছে। কারণ মেকআপের পরেই আমি সেই চরিত্রে সাবলীল হতে পারবো। এরপর ক্যামেরায় ধরলে বোঝা যায় কোথায় ভূল মেকআপ হয়েছে। এ ছবিতে আমার চরিত্রটি অনেক সাবলীল। অভিনয়ের সুযোগ আছে। তবে মেকআপটা ক্যারি করারও বিষয় রয়েছে।

প্রিয়.কম: আপনার মঞ্চের কাজের কি খবর?
শতাব্দী ওয়াদুদ: আমার দল ‘প্রাচ্যনাট’- এ পুরনো যে কাজগুলো নিয়মিত করছিলাম সেগুলোই করছি। শো বন্ধ করি নি। সিনেমা আর টেলিভিশনের ব্যস্ততা আর মঞ্চ তো নিয়মিত একটি বিষয়। আর আমাদের দলে তো অনেক লোক আছে। যার কারণে নিজেকে বাণিজ্যিক কাজের ভীড়ে সেভাবে খাপ খাইয়ে নেই। আর আমি যদি সময় দিতে না পারি-তাহলে সেখানে তো জায়গা খালি রেখে লাভ নেই। আমি সিনিয়র সে বলে।আর নতুন কাজে নিজেকে জড়িত করছি না। সেখানে আমার নাম অতিরিক্ত হিসেবে থাকছে। যখন সময় পাই কিংবা কেউ না থাকলে আমি গিয়ে তার জায়গাটা পূরণ করে দেই। এছাড়া পরিচালক যদি মনে করেন আমার অভিনয় করা উচিত সেখানে আমি কাজ করি।

প্রিয়.কম: ‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রে আপনার চরিত্রের ক্ষেত্রে নিজেকে কিভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন?
শতাব্দী ওয়াদুদ: এ ছবিতে আমার চরিত্র পুলিশের এডিসি। আর চরিত্রের নাম সাজেদুল হক। ছবিতে ঢাকা অ্যাটাক’টা যারা করছে তাঁদের পুরো অ্যাটাকটা আমি আটকে দিচ্ছি। পুরো বিষয়টা আমি নিজেই কো-অর্ডিনেট করছি। সেই সাথে আমার সঙ্গে আর দুজন রয়েছেন-আরিফিন শুভ আর এ বি এম সুমন। তাঁদেরকে নিয়ে আমি পুরো অভিযানটি পরিচালনা করি। এক্ষেত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষনিক আমাদের সাথে রয়েছে, বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন কিছু তাঁরা আমাদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। ছবিতে তাঁদের র‌্যাংকিংয়ের বিষয় অনুযায়ী আমাদের আচার-আচরণ করতে হচ্ছে। সে বিষয়গুলোও আমাদের সুন্দরভাবে বুজিয়ে দিচ্ছেন। এ ছবিতে বেশ কয়েকজন পুলিশের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা অভিনয় করছেন।

প্রিয়.কম: প্রিয়’কে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

শতাব্দী ওয়াদুদ: প্রিয়.কমকেও ধন্যবাদ।