ছবি সংগৃহীত

সাপের ইতিবৃত্ত

Nusrat Sharmin Liza
লেখক
প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ১৮:০৪
আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ১৮:০৪

সাপ শব্দটি শুনলে অনেকেই আঁতকে ওঠেন। সাপ বলতেই যেন কোনো ভয়ঙ্কর বিষাক্ত একটি প্রাণীর চেহারা আমাদের চোখে ভাসে। কিন্তু পৃথিবীর বেশিরভাগ সাপই কিন্তু বিষাক্ত না। দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা থেকে পাওয়া ১৫ কোটি বছরের পুরোনো সাপের ফসিলের গঠন ছিলো গিরগিটির মত। ধারণা করা হয় গিরগিটি থেকেই সাপের উৎপত্তি।

সাপ

সাপ এক প্রকার সরীসৃপ প্রানী। এর কোনো পা নেই। বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী প্রাণী জগতের, কর্ডাটা পর্বের এক সদস্য হলো সাপ। ড: আলী রেজা খান তার বই ‘বাংলাদেশের বন্যপ্রানী’তে উল্ল্যেখ করেছেন যে বাংলাদেশে ৭৯ প্রজাতির সাপ পাওয়া যায় এবং তারমধ্যে ৫২ টি বিষ ছাড়া আর ২৭ টি বিষধর প্রজাতির সাপ।

বাংলাদেশের বিষহীন কিছু সাপ

বাংলাদেশের কিছু বিষহীন সাপ হলো ঢোঁড়া সাপ, আঁচিল সাপ, সবুজ ঢোড়া সাপ, অজগর,বার্মিজ অজগর ,ভারতীয় অজগর, মৈটা সাপ,সবুজ দাঁড়াশ সাপ, গেছো সাপ, শামুকখোর সাপ, দুধরাজ সাপ ,ঘরগিলক্ষী, কুকরী সাপ, কালনাগিনী সাপ,দাঁড়াশ সাপ ইত্যাদি।

বাংলাদেশের বিষাক্ত কিছু সাপ

বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন বিষাক্ত কিছু সাপ হলো শঙ্খিনী, শঙ্খচূড়, শাঁখামুঠি, তানলি সাপ, ফণিমনসা, জলবোড়া, চন্দ্রবোড়া, বাঁশবোড়া, পানি সাপ, সুক্টদরী সাপ, লাল ঢোড়া সাপ, বড়শি-নাক সামুদ্রিক সাপ, মালাবার সামুদ্রিক সাপ, সরু-মুখ সামুদ্রিক সাপ, হলুদ পেট সামুদ্রিক সাপ ইত্যাদি।

সাপের স্বভাব

  • সাপ সাধাণরত ছোট ছোট প্রানী খেয়ে বাঁচে। সাপের খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো টিকটিকি, অন্য ছোট সাপ, শামুক, পোকা ও ছোট স্তন্যপায়ী প্রানী।
  • শিকার ধরার আগে সাপ খুব ধীরে এগোয় এবং হঠাৎ করে আক্রমন করে।
  • কিছু বিষাক্ত সাপ শিকার করার সময় তাদের বিষ ব্যবহার করে।
  • সাপ খাবার গিলে খায় এবং পরে ধীরে ধীরে হজম করে।
  • সাপ একটি শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রানী।
  • সাধাণরত শীতকালে সাপ খোলস বদলায়।
  • সাপকে পাড়া না দিলে বা বিরক্ত না করলে সাধাণরত সাপ কামড়ায় না।
  • সাপ নিজের আত্মরক্ষার জন্য ছোবল দেয়।

সাপ সম্পর্কে নানান ভ্রান্ত ধারণা

সাপ নিয়ে যুগে যুগে নানান ভুল ধারণা ও কুসংস্কার আছে। প্রাচীন কালের বিভিন্ন রূপকথায় সাপের মাথার মনির কথা উল্ল্যেখ আছে। সাপুরেরাও এই ধারণার অপব্যবহার করে মুক্তা বা অন্য কোনো পাথরকে সাপের মনি বলে ধোকা দেয়। কেউ কেউ আবার মনে করে সাপ কামড় দিলে সাপের ওঝা বিষ নামিয়ে দিতে সক্ষম। কিন্তু সাপের বিষ ওঝার পক্ষে নামানো সম্ভব নয়। বরং এই ভুল ধারণার জন্য অনেক মানুষের জীবনহানী হয়। আবার কারো কারো ধারণা সাপ জিভ দিয়ে শুনতে পায়। কিন্তু এটাও একটি ভ্রান্ত ধারণা। সাপ বার বার জিভ বের করে বায়ুর বিভিন্ন পদার্থ অনুভব করে।

সাপের উপকারীতা

সাপ নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই পরিবেশের অনেক উপকার। সাপ ইঁদুর ও পোকা মাকড় খায়। ফলে কৃষকের ফসল ভালো থাকে। সাপ মাটির উর্বরতাও বাড়ায়। সাপের বিষ দিয়ে বিজ্ঞানীরা তৈরি করছেন ক্যান্সার সহ অনেক জটিল রোগের ওষুধ। চড়া দামে বিক্রি হয় সাপের বিষ। তাছাড়া সাপের চমৎকার কারুকার্যময় চামড়া দিয়ে নানান রকম সৌখিন জিনিসপত্র তৈরী করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের একটা প্রবণতা হলো সাপ দেখলেই মেরে ফেলা। বিষাক্ত নাকি বিষহীন তা না জেনেই বেশিভাগ মানুষ পিটিয়ে সাপ মেরে ফেলে। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাপ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ পরিবেশের বিরূপ প্রভাব শেষ আমাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই পরিবেশ রক্ষার্থে সাপ সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরী।