ছবি সংগৃহীত

সত্যিকারের ভ্যাম্পায়ার কাহিনী!

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৩, ১৩:১১
আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৩, ১৩:১১

গভীর রাত। পৃথিবীর সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে। এমন সময়ে খুব সন্তপর্ণে কে যেন বের হয়ে আসে আঁধার গুহা, খনি, গাছের আড়াল এবং ভূতুড়ে বাড়িঘর থেকে। রাত্রির আকাশে নিশ্চিন্তে ডানা মেলে খাবারের খোঁজ করে তারা। কী তাদের এই খাবার? তা হলো, রক্ত! হ্যাঁ, যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর উষ্ণ রক্ত পান করে বেঁচে থাকে। তবে এরা কাউন্ট ড্রাকুলার মত মনুষ্যরূপী নয়। এরা হলো এক ধরণের বাদুর। রক্তপিপাসু স্বভাবের কারনেই এদের নাম ভ্যাম্পায়ার ব্যাট। এদের পাওয়া যাবে মেক্সিকো, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকায়।

কি এই ভ্যাম্পায়ার ব্যাট?

• তিনটি প্রজাতির ভ্যাম্পায়ার ব্যাট আছে, এরা হলো- Desmodus rotundus, Diaemus youngi, এবং Diphylla ecaudata। এর মধ্যে প্রথম প্রজাতিটি বেশি দেখা যায়। বাকি দুই প্রজাতি বেশিরভাগ সময় পাখির রক্ত খেয়ে বাঁচে। • অন্যান্য বাদুরের চাইতে এদের দাঁতের সংখ্যা কম। • ডানা ছড়ানো অবস্থায় এদের দৈর্ঘ্য প্রায় আট ইঞ্চি, কিন্তু এর মূল শরীরটা মানুষের বুড়ো আঙ্গুলের সমান ছোট।
• এদের ওজন হয় ১৫ থেকে ৫০ গ্রামের মধ্যে। • নিশাচর এই প্রাণীগুলোর দৃষ্টিশক্তি ভয়ঙ্কর রকমের ভালো! প্রায় ৪২৯ ফুট দূর থেকে একটা গরুকে শনাক্ত করতে পারে এরা। • এরা খুব পরিষ্কার প্রাণী। নিজেদের এমনকি অন্যান্য বাদুরের শরীর চেটে পরিষ্কার রাখে সবসময়। • খাঁচায় রাখলে এরা প্রায় ২০ বছর বাঁচে। • এদেরকে ধরে ধরে খায় পেঁচা।

রক্ত খাওয়ার কৌশলঃ

এদের সম্পর্কে জানা তো হল। এবার দেখা যাক অন্ধকারে বের হওয়া এই প্রাণীগুলো কী করছে! গরু, শুকর, ঘোড়া এবং পাখির রক্ত খায় এরা। কদাচিৎ মানুষের রক্তও খায়। শিকার খুজে বের করার জন্য তিনটি পদ্ধতি ব্যবহার করে এরা। শিকারের গন্ধ শুঁকে, তাদের ডাক শুনে আর একোলোকেশন (echolocation) পদ্ধতি ব্যবহার করে। একোলোকেশন পদ্ধতিতে উচ্চ স্বরের শব্দ তৈরি করে বাদুড়। এই শব্দ কোনও বস্তুতে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে বাদুড়ের কানে। সেই ফিরে আসা শব্দের প্রকৃতি থেকে বাদুড় বুঝতে পারে সামনে কোনও শিকার আছে কিনা। শিকার খুঁজে তো পাওয়া গেল, এরপর সেই শিকারের শরীরের কোন অংশ থেকে ভালোভাবে উদরপূর্তি করা যাবে তা সে জানতে পারে গন্ধ শুঁকে। এরপর বিশেষ দাঁত দিয়ে চামড়ার কিছু অংশ কেটে ফেলে তারা। হ্যাঁ। গল্পের মত করে কামড়ে ধরে চামড়া ফুটো করে না এরা। বরং চামড়া কেটে ফেলে সেখান থেকে রক্ত চেটে চেটে খায়। তাদের জিহ্বার লালায় এক ধরণের পদার্থ আছে যেটা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়, ফলে এই বাদুড়ের রক্তের সরবরাহ থাকে অব্যাহত। এরা এতই হালকা প্রাণী যে যার রক্ত খাওয়া হচ্ছে তার ঘুমই ভাঙ্গে না!
এভাবে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে রক্ত খেতে পারে ভ্যাম্পায়ার ব্যাট। নিজের ওজনের অর্ধেক পরিমান রক্ত খেতে পারে এরা! আর বেশি রক্ত খেয়ে ফেলার পর অনেক সময় এরা নিজের ভারী শরীর নিয়ে চলতে পারে না! নিজেদের বিশেষভাবে তৈরি বুড়ো আঙ্গুলের সাহায্যে মাটি থেকে মাত্র তিন ফুট উঁচুতে উঠে উড়তে থাকে।

রক্ত খাবার পর.........

  • - ভ্যাম্পায়ার নামটা শুনলেই ভয় লাগে! কিন্তু ভয় পাওয়ার কি তেমন কিছু আছে? এরা মানুষকে খুব একটা আক্রমন করে না। তবে এদের রয়েছে একটা সমস্যা। এদের কামড়ে হতে পারে জলাতঙ্ক। বেশিরভাগ সময়ে গরু মারা যায় এই রোগে। তবে এরা বেশ শান্ত প্রাণী।
  • - মেয়ে ভ্যাম্পায়ার বাদুড়কে আটকে রাখা অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করা হলে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। ভ্যাম্পায়ার ব্যাটের বাচ্চা হবার পর সেই মায়ের খাবার দাবারের দিকে লক্ষ্য দেয় অন্য বাদুরগুলো এবং বাচ্চা জন্মানোর পর প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এই ব্যাপারটা দেখা যায়।
  • - ভ্যাম্পায়ার ব্যাট যদি পর পর দুই রাত রক্ত না খায় তবে কি হবে? এরা মরে যেতে পারে। তবে মেয়ে ভ্যাম্পায়ার বাদুরগুলো বেশ উদার প্রকৃতির। এদের পেটে যথেষ্ট রক্ত থাকলে এরা উগড়ে দেয় খেতে না পাওয়া বাদুড়ের জন্য। আর তার বদলে সেই বাদুড়কে দিয়ে নিজের শরীর পরিষ্কার করিয়ে নেয়!