
ছবি সংগৃহীত
শতেক গুণের আমলকী
আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৩, ০৭:১৭
আমলকি আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ ফলগুলোর মধ্যে একটি। আমলকী বা আমলকি একপ্রকার ভেষজ ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম - আমালিকা। ইংরেজি নাম – Aamla বা Indian Gooseberry। আমলকি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthusemblica বা Emblicaofficinalis। আমলকি খেলে অনেক রোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় বা অনেক রোগ সেরে যায়। এ ফলের গুণাগুণ অমৃত সমান-তাই একে অমৃতফল বলা হয়ে থাকে। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকির স্বাদ আমলকির স্বাদ যদিও টক এবং কষাটে কিন্তু সুস্থ শরীরের জন্য আমলকি খাওয়ার অভ্যেস করা দরকার। এর স্বাদ প্রথমে কষ ঠোঁটে লাগলেও খাওয়া শেষে মুখে মিষ্টি ভাব আসে। যেহেতু আমলকীর গুণের শেষ নেই তাই প্রতিদিন সবার একটি আমলকি খাওয়ার অভ্যেস করা উচিত। ব্যবহার: আমলকির ভেষজ গুণ রয়েছে অনেক। ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। দিনে দুটো আমলকি খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে। স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে টাটকা আমলকি ফলের জুড়ি নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী। লিভার ও জন্ডিস রোগে উপকারী বলে আমলকি ফলটি বিবেচিত। আমলকি, হরিতকী ও বহেড়াকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। এ তিনটি শুকনো ফল একত্রে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ছেঁকে খালি পেটে শরবত হিসেবে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়। বিভিন্ন ধরনের তেল তৈরিতে আমলকি ব্যবহার হয়। কাঁচা বা শুকনো আমলকি বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।কাঁচা আমলকি বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে দুতিন ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত, চুল উঠা এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হবে। আমলকীর ঔষধি গুণ * আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে। * বমি বন্ধে কাজ করে। * দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী। * এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক। ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতেও আমলকী দারুণ সাহায্য করে। আমলকীর গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধেও এখন আমলকীর নির্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। আমলকী খাওয়ার উপকারিতা * আমলকী ত্বক, চুল ও চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। * আমলকী হজমে সাহায্য করে ও স্টমাক এ্যাসিডে ব্যালেন্স বজার রাখে। * আমলকী লিভার ভাল রাখে, ব্রেনের কার্যকলাপে সাহায্য করে ফলে মেন্টাল ফাংশনিং ভাল হয়। * আমলকী ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে। * হার্ট সুস্থ রাখে, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে তোলে। * শরীর ঠান্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, মাসল টোন মজবুত করে। * লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভাল রাখে। * জ্বর, বদহজম, সানবার্ন, সানস্ট্রোক থেকে রক্ষা করে। * আমলকীর জুস দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখার জন্য উপকারী। ছানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যায় উপকারী। * পেটের জ্বালাভাব কম রাখে। লিভারের কার্যকলাপে সাহায্য করে, পাইলস সমস্যা কমায়। * শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। ব্রঙ্কাইটিসেও এ্যাজমার জন্য আমলকীর জুস উপকারী। * আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে থেকে পারেন। এটি ক্ষিদে বাড়াতে সাহায্য করে। * এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকী গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। এ্যাসিডিটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে। * খাবারের সঙ্গে আমলকীর আচার খেতে পারেন। হজমে সাহায্য করবে। রোগ-ব্যাধিতে আমলকির ব্যবহার: ১. শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি মেটাতে আমলকির জুড়ি নেই। ভিটামিন সি এর অভাবে যেসব রোগ হয়, যেমন - স্কার্ভি, মেয়েদের লিউকরিয়া, অর্শ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমলকি খেলে উপকার পাওয়া যায়। ২.হার্টের রোগীরা আমলকি খেলে ধরফরানি কমবে। টাটকা আমলকি তৃষ্ণা মেতে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বন্ধ করে, পেট পরিষ্কার করে। ৩. আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে।এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী। ৪. পিত্ত সংক্রান্ত যেকোনো রোগে সামান্য মধু মিশিয়ে আমলকি খেলে উপকার হয়। ৫. বারবার বমি হলে শুকনো আমলকি এককাপ পানিতে ভিজিয়ে ঘন্টা দুই বাদে সেই পানিতে একটু শ্বেত চন্দন ও চিনি মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়। নিয়মিত কয়েক টুকরো করে আমলকি খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে। আমলকি খিদে বাড়ায়, শরীর ঠান্ডা রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে রয়েছে- জলীয় অংশ - ৯১.৪ মোট খনিজ - ০.৭ আঁশ - ৩.৪ খাদ্যশক্তি - ১৯ আমিষ - ০.৯ চর্বি - ০.১ শর্করা - ৩.৫ ক্যালসিয়াম - ৩৪মি: লৌহ - ১.২ ক্যারোটিন - ০ ভিটামিন বি-১ - ০.০২ ভিটামিন - ০.০৮মি: ভিটামিন সি – ৪৬৩ রূপচর্চায় আমলকী আমলকী ত্বক ও চুলের যত্নে অসাধারণ। এর আছে অ্যান্টি-এজিং বা বয়স প্রতিরোধক ক্ষমতা। আমলকীর পেস্টের সঙ্গে তিলের তেল মেখে মুখে ঘষলে রিংকল বা বয়সের ভাঁজ কম দেখায়। রিংকল কমাতে আমলকীর ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য আধা কাপ আমলকীর শাঁসের পেস্ট, ২৫০ গ্রাম তিলের তেল, দুই টেবিল-চামচ মৌমাছির মোম প্রথমে চুলায় জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। তারপর ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা হয়ে এলে এক টেবিল-চামচ মধু মেশাতে হবে। এই ক্রিম প্রতিদিন কিছুক্ষণ ব্যবহার করতে হবে।