ছবি সংগৃহীত

যত্নে থাকুক পোষা প্রাণী

sraboni zaman
লেখক
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০১৩, ০৬:৪৬
আপডেট: ১৮ মে ২০১৩, ০৬:৪৬

কত বিচিত্র রকমের শখই না মানুষের থাকে। কেউ বাগান করে,কেউ ডাকটিকিট সংগ্রহ করে,কেউবা আবার ছবি আঁকে। এত সব শখের মধ্যে মানুষের অন্যতম প্রিয় শখটি হলো পোষা প্রাণী পালন করা। বহুকাল আগে থেকেই মানুষ পোষা প্রাণী পালন শুরু করে, বলতে গেলে সেই আদিম সমাজ হতেই। আজকাল শহরের ফ্ল্যাট বাড়িতেও পোষা প্রাণীর আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। আবার শুধু শখের খাতিরেই নয়, বাসায় পশু-পাখি পালন করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। হাঁস মুরগী পালন যেমন এই কাতারে পড়ে, তেমনি বিদেশী কুকুর-বিড়াল-মাছ ইত্যাদি পালন করে জন্ম নেয়া বাচ্চাও অনেকে বিক্রি করে উপার্জন করে থাকেন। পোষা প্রাণীকে কে না ভালবাসে? বাসায় পশু-পাখি থাকলে শিশুরা যেমন আনন্দ পায় তেমনি বাড়িতে একটা উপভোগ্য দৃশ্যও সৃষ্টি হয়। যেসব পশু-পাখি বাড়িতে পালন করা যায় তাদের মধ্যে কুকুর, বিড়াল ,খরগোশ , ময়না, টিয়া,পায়রা,কবুতর, কোয়েল ইত্যাদি আছে। এছাড়াও নানা বর্ণ ও রঙের বিদেশী পাখি যেমন- লাভ বার্ড , কিংস, জেব্রা ফিঞ্চ, গোল্ডেন ফিঞ্চ, রেড রেম অন্যতম। তবে এ সব প্রাণী শুধু পালন করলেই হবে না। এদের দরকার সঠিক যত্ন ,সঠিক পরিচর্যা ও সর্বোপরি আপনার ভালোবাসা। আসুন জেনে নেই পোষা প্রাণীদের সঠিক যত্ন সম্পর্কে।

কুকুর,বেড়ালের, খরগোশের যত্ন-

-শিশুরা পোষা প্রাণীর সাথে খেলতে দারুন ভালবাসে, বিশেষ করে কুকুর বা বেড়ালের সাথে। কুকুর বেড়ালের আঁচড়ে আপনার সোনামণির যাতে কোন ক্ষতি না হয় তাই পোষা প্রাণীকে বাসায় আনার পর পরই রেবিস ভ্যাকসিন দিতে হবে। তা হলে ক্ষতির কোন আশংকা থাকবে না।
  • -পোষা প্রাণীটি বাড়ির যে স্থান এ রাখবেন সেই স্থানটি যেন অবশ্যই আলো বাতাস পূর্ণ হয়। আলো বাতাস এদের শরীরের জন্য খুবই দরকারী।
  • -বাড়ীর শিশুটি পোষা প্রাণীর সাথে খেলা করে, এদের শরীরে স্পর্শ করে। তাই কুকুর বিড়ালের শরীর সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে, এদের অপরিছন্ন শরীরে পোকাও বাসা বাঁধে । সপ্তাহে অন্তত একদিন জীবাণুনাশক শ্যাম্পু দিয়ে এদের গোসল করাতে হবে। গোসল করানোর পর শরীর ভাল মতো মুছিয়ে শুকিয়ে দিতে হবে।
  • - গোসল করাবার সময়ে অত্যন্ত সাবধান থাকতে হবে যেন কানে পানি না ঢোকে। আর খরগোশকে গোসল করাবার প্রয়োজন নেই। খরগোশ প্রাণীটা পানি সহ্য করতে পারে না।
  • -দিনে ২ বার কুকুরের শরীর মোটা দাঁত অলা চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতে হয়, এতে পশম মসৃণ থাকে আর পোকাও হয় না। পশম ওয়ালা বেড়াল হলে তাদেরকেও ব্রাশ করা যেতে পারে।
  • -পোষা প্রাণীর খাবার আর পানির পাত্রটি অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে। মাঝে মাঝে খাবার থেকে এদের ফুড পয়জনিং হতে পারে,তাই খাবারের দিকে বিশেষ যত্নশীল হতে হবে। বাসি খাবার দেয়া যাবে না,খাবার শেষ হওয়ার সাথে সাথে পাত্রটি পরিষ্কার করে রাখতে হবে। তাহলে এতে জীবাণুর সংক্রমণ হবে না।
  • -পোষা প্রাণীকে সব সময় সুষম খাদ্য দিতে হয়। কুকুরকে চর্বি, মশলা বিহীন সিদ্ধ মাংস, বিড়ালকে দুধ-মাছ দেয়া যেতে পারে। ভাতের ঘন মাড় কুকুর বেড়ালের স্বাস্থ্য ভালো করে। খরগোশকে কচি ঘাস, শসা, গাজর দিতে হয়। এছাড়া বাজারে এদের জন্য তৈরি খাদ্যও কিনতে পাওয়া যায়।
  • -পোষা প্রাণীটি বাড়ির যে স্থানে থাকে শীতকালে সে স্থানে বাড়তি উষ্ণতার আয়োজন করুন।
  • -গর্ভকালীন সময়ে এদের বেশি করে পুষ্টিকর আর ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য দিতে হবে, নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • -খরগোশ যে খাঁচায় পালা হয় সেই খাঁচাটি সপ্তাহে অন্তত একদিন ভাল করে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে,তা হলে জীবাণু ছড়ানোর আশংকা থাকে না।

পাখির যত্ন -

  • -পাখির খাঁচাটি বাঁশের তৈরি হলে বেশি ভাল হয়,কারন ষ্টীল এর খাঁচা কোন কোন পাখির ত্বকের ক্ষতি করে।
  • -পাখিকে সব সময় পাখির জন্য নির্দিষ্ট করা খাদ্যই দিতে হবে। বাজারে পাখির জন্য প্যাকেট জাত খাদ্য কিনতে পাওয়া যায় যা বেশ কম দামে । পাখিকে খাবার হিসেবে শস্য দানা,গম, ভুট্টা , ধান, তিল, তিশি, কাউন, সূর্যমুখী ফুলের বিচি দেয়া হয়ে থাকে।
  • - পাখিকে সব সময় আলো বাতাস পূর্ণ স্থানে রাখতে হয়, বৃষ্টির দিনে যাতে পাখির শরীরে পানি না লাগতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
  • -পাখির খাঁচায় ছোট পেট ফুটো মাটির কলস ঝুলিয়ে দিতে হয়। মাঝে দিতে হয় খড়কুটো। এই কলসে পাখি ডিম পাড়ে আর এই খানেই এদের বাচ্চার জন্ম হয়।
  • -পাখির খাঁচা নিয়মিত পরিষ্কার রাখাটা জরুরি। না হলে পাখির বিভিন্ন রোগ বালাই হতে পারে। যে কোন অসুখে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কোথায় পাবেন?

ঢাকার কাঁটাবন থেকে আপনার পছন্দের প্রাণীটি সংগ্রহ করতে পারেন। এদের দাম বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। বিড়াল ৫০০-৫০০০ টাকা, কুকুর প্রজাতি ভেদে ভিন্ন দামের হয় । খরগোশ ৩০০ থেকে ১০০০ টাকার ভিতর পাওয়া যায়। বাজরিগার পাখি জোড়া ৫০০-২৫০০ টাকা, কবুতর ৫০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। খাঁচার মূল্য সাইজ ভেদে ৩০০-৩০০০ টাকা। তো আজই যান, নিয়ে আসুন আপনার পছন্দের পোষা প্রাণীটি আর সঠিক উপায়ে এদের যত্ন নিন।